আবহাওয়ার পূর্বাভাস

এই রোদ এই বৃষ্টি। গ্রীষ্ম আর বর্ষাকালে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হয়, কখন না আবার বৃষ্টি নেমে পড়ে ! অনেকে তাই সঙ্গে সারাক্ষণ ছাতা বহন করেন যাতে কাজের মাঝে যাতায়াতের সময় ভিজতে না হয়। এমন সময়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস খুবই কাজে দেয়। আজকের দিনে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা তা আবহাওয়ার খবরে জেনে রাখলে হঠাৎ বিপদে পড়ার ঝুঁকি কমে যায়। বর্তমানে অনলাইনে অনেক অ্যাপও পাওয়া যায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানার জন্য। কিন্তু এই অ্যাপগুলো কিভাবে জানতে পারে আজকের দিনের আবহাওয়া কেমন যাবে ?

আবহাওয়া জানার এই পদ্ধতিকে বলা হয় Weather forecasting। মানবজাতি বহুকাল আগে থেকেই আশেপাশের আবহাওয়া নিয়ে কৌতূহলী ছিল তবে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার চেষ্টা মূলত উনবিংশ শতাব্দী থেকে শুরু হয়েছে। ১৮৩৫ সালে ইলেকট্রিক টেলিগ্রাফ আবিষ্কারের পরেই আধুনিক ফোরকাস্টিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। প্রাচীনকালে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হতো আকাশের মেঘ, বাতাসের গতিবিধি আর তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করে।

তবে ইলেকট্রনিক টেলিগ্রাফ আবিষ্কারের পর যে দুইজন মানুষ আবহাওয়ার পূর্বাভাসকে বৈজ্ঞানিক রূপদান করেন তারা হলেন ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির অফিসার ফ্রান্সিস বেউফোর্ট আর তার সহযোগী রবার্ট ফিজরয়। অদ্ভুত ব্যাপার হলো এটা নিয়ে তারা যখন গবেষণা করছিলেন তখন মিডিয়াতে তাদেরকে নিয়ে অনেক হাসাহাসি করা হয়। আর আজ তাদের কল্যাণেই মিডিয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারছে !

প্রথম দিকে মূলত নৌবাহিনীর জাহাজে ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য কাজ করলেও বর্তমানে সাধারন মানুষদের দৈনন্দিন কাজেও এটি ব্যবহৃত হয়। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলেই সকলের কাছে আবহাওয়ার খবর পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে যে পদ্ধতিতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস করা হয় তাকে বলে Numerical Weather Forecasting । ১৯২২ সালে লুইস রিচার্ডসন সংখ্যা-উপাত্তের মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের আধুনিক পদ্ধতি নিয়ে তার বই লিখেন "Weather Prediction By Numerical Process"। তবে তার পদ্ধতির জন্য প্রয়োজন ছিল দীর্ঘ হিসাব নিকাশ যা কম্পিউটার ছাড়া তখন করা ছিল দুঃসাধ্য ব্যাপার। ১৯৫০ সালে গণিতবিদ জন ভন নিউম্যান প্রথম কম্পিউটারের মাধ্যমে ওয়েদার ফোরকাস্ট করেন। পরবর্তীতে কম্পিউটারের ক্রমবিকাশের সাথে সাথে এটি আরো সহজ হয়ে উঠতে থাকে।

আবহাওয়াবিদরা পৃথিবীর উপরিভাগকে বিভিন্ন বর্গে ভাগ করে থাকেন। প্রতিটা বর্গের ওপরের বায়ুমণ্ডলকে বক্স বলা হয় আর বায়ুমণ্ডলের বায়ুপ্রবাহ, বায়ুর চাপ, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বিভিন্ন উচ্চতা থেকে পর্যবেক্ষণ করে রেকর্ড করা হয়। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৩ হাজারেরও বেশি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র আছে ও সেগুলোর প্রত্যেকটার উপাত্তকে কম্পিউটার বিশ্লেষণ করে ও এর পরের ১৫ মিনিটে বিশ্বের আবহাওয়া কেমন হবে সেই বিষয়ে পূর্বাভাস দেয়। একবার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়ে গেলে পরের ১৫ মিনিটের আবহাওয়া পূর্বাভাস সম্বন্ধে খুব তাড়াতাড়ি জানা যায়। এই পদ্ধতিটা বেশ কয়েক বার করে একটা কম্পিউটার মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে সারা পৃথিবীর আগামী ছয় দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারে।

নিউমেরিক ফোরকাস্টিংয়ের মূল ব্যাপারটা হলো নির্দিষ্ট অঞ্চলের বায়ুর বর্তমান সময়ের বিভিন্ন তথ্য নিয়ে ফ্লুয়িড ডাইনামিক্স আর থার্মোডাইনামিক্সের সূত্রের সাহায্যে সেই অঞ্চলের ভবিষ্যতের আবহাওয়া সম্পর্কে অনুমান করা। মনে রাখতে হবে যে, এইগুলোর কোনটিই নিশ্চিত তথ্য নয় বরং সম্ভাব্য তথ্য। তাই আবহাওয়া রিপোর্টে বলা হয় না যে “আজ বৃষ্টি হবে” বরং বলা হয় যে আজ ভারী বা মাঝারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মাঝে মাঝে আবহাওয়াবিদদের দেওয়া পূর্বাভাসের সঙ্গে অনেক সময় বাস্তবের মিল থাকে না। কখনও কোনো অঞ্চলের জন্য মুষলধারে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিলেও বাস্তবে দেখা যায় সেখানে রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশ। 

মানবজাতির অগ্রগতি ও নিরাপত্তায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসের অবদান অনস্বীকার্য। দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের বিমান আর নৌ ব্যবস্থা এর উপর ভীষণ ভাবে নির্ভর করে। কৃষিকাজেও আবহাওয়ার পূর্বাভাস কাজে লাগানো হয়। মানুষের যোগাযোগ থেকে শুরু করে ব্যবসা – সকল কাজেই মূলত আবহাওয়ার পূর্বাভাসের উপর নির্ভর করতে হয়।

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন