খেলার পূর্বে ওয়ার্ম আপ

শীঘ্রই শুরু হচ্ছে ২০১৫ বিশ্বকাপ ক্রিকেট, আর এই জমকালো খেলার আসর নিয়ে ক্রিকেট ভক্তদের মাঝে উন্মাদনার শেষ নেই। যার যার প্রিয় দল নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছেই। এর পাশাপাশি আমরা দিয়ে যাচ্ছি ক্রিকেট সম্পর্কীয় কিছু মজার সাধারণ তথ্য।

ওয়ার্ম আপ (Warm Up) শব্দটির সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। ব্যায়াম বা খেলার পূর্বে কিছু শরীরচর্চার সাহায্যে শরীরকে প্রস্তুত করে নেয়াকেই ওয়ার্ম আপ বলা হয়ে থাকে। ব্যায়াম বা ক্রিকেট, ফুটবলের মতো খেলায় শরীরের প্রচুর ক্ষমতা ব্যয় হয়। এই ক্ষমতা ব্যয় করার সামর্থ্যও সবার থাকে না। তাই হয়তো সবাই সব খেলায় পারদর্শী না। কেউ ঘরোয়া খেলা যেমন দাবায় পারদর্শী আবার কেউ ক্রিকেট, বেসবল ইত্যাদি খেলায় পারদর্শী। তো এইসব খেলা, যেগুলোতে শারীরিক শক্তি ব্যয় হয়, সেগুলোতে প্রবেশের পূর্বে খেলোয়াড়রা ওয়ার্ম আপ করে থাকেন। ওয়ার্ম আপের ফলে শরীর গরম হয় ও খেলার জন্য পুরোপুরি তৈরি হয়। ক্রিকেট খেলায় খেলোয়াড়রা মাঠে প্রবেশের সময় বেশ লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে শরীর নাড়িয়ে প্রবেশ করেন। এই লাফানো-ঝাঁপানো আসলে এক ধরণের ওয়ার্ম আপ। ব্যাটসম্যানরাও ক্রিজে নেমে বেশ কিছুক্ষণ ব্যাট নিয়ে কসরত করেন যাতে শরীর গরম হয়। 

যেকোনো খেলার মধ্যে ক্রিকেটে মোটামুটি বেশ ভালো রকমের শারীরিক সামর্থ্যের প্রয়োজন হয়। কাঠের একটি বলের ওজন প্রায় ৫ আউন্সেরও বেশী হয়ে থাকে। এই বলটি ঘণ্টায় ১০০-১১০ কিঃ মিঃ বেগে ছুঁড়তে বোলারদের কতটুকু শক্তি প্রয়োজন তা আর বলার বাকি থাকে না। এই জন্যই দেখা যায় ফাস্ট বোলাররা বল ছুঁড়েই শরীর বাঁকিয়ে ফেলেন কিংবা আরও কিছুটা দৌড়িয়ে এগিয়ে যান শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে। একটি ক্রিকেট ব্যাট প্রায় ৩ পাউন্ড ওজনের হয়ে থাকে। এই ৩ পাউন্ডের ব্যাট দিয়ে ৫ আউন্স ওজনের বলটি মেরে বাউন্ডারি পার করতে একজন ব্যাটসম্যানের শরীরের প্রায় সবটুকু শক্তি খরচ করতে হয়। আবার ব্যাটসম্যান বল মারার পর সেই ছুটে আসা বলটি দৌড়িয়ে সময়মত ধরতে ফিল্ডারদেরও কম ঘাম ছোটে না। এইসব শারীরিক কাজের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করতে ওয়ার্ম আপের কোন বিকল্প নেই।

ক্রিকেটারদের প্রায় প্রতিদিন অনুশীলন করতে হয় তাঁদের পারফরমেন্স (Performance) ঠিক রাখার জন্য। খেলার মাঠে শরীরের পাশাপাশি মানসিক শক্তিরও দরকার হয় এবং নিয়মিত অনুশীলনের ফলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে ওঠে যা ভালো খেলতে সাহায্য করে। খেলার পূর্বে খেলোয়াড়রা বিভিন্ন ধরণের ওয়ার্ম আপ করে থাকেন। দৌড় হল যেকোনো ব্যায়ামের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, আর ক্রিকেটে বোলার, ব্যাটসম্যান, ফিল্ডার সবারই প্রচুর দৌড়াতে হয়। তাই খেলার আগে ওয়ার্ম আপ হিসেবে দৌড়ের বিকল্প নেই। ক্রিকেটাররা মাঝে মাঝে ব্যাট ওপরে তুলে দৌড়িয়ে থাকেন, এতে করে দৌড়ের কার্যকারিতা বেড়ে যায়। দৌড়ানো ছাড়াও পুশ আপ (Push Up), রোল ওভার (Roll Over) ইত্যাদি ব্যায়াম তো থাকেই। যারা খুব ভালো বোলার, তাঁরা খেলার পূর্বে অনেকবার বোলিং অনুশীলন করেন, এছাড়া খেলার মাঠেই আমরা দেখি যে যেকোনো বোলার প্রথম ওভার শুরু করার আগে কয়েকবার যেকোনো ফিল্ডারের দিকে বল করেন শরীর গরম করতে। ক্রিকেটে একজন খেলোয়াড় বোলার বা ব্যাটসম্যান যাই হোন না কেন, তার পাশাপাশি প্রত্যেক খেলোয়াড়কে একজন ভালো ফিল্ডার হতে হয়। তাই খেলার আগে কোচ সবাইকে ফিল্ডিং প্র্যাকটিস করান। এই ফিল্ডিং প্র্যাকটিস বোলার, ব্যাটসম্যান সবার জন্যই উপকারী ও ওয়ার্ম আপের একটি ভালো উপায়ও বটে।

এছাড়া, খেলার পরে খেলোয়াড়রা শরীর ফিট রাখার জন্য একটু দৌড়ঝাপ করে থাকেন। ওয়ার্ম আপ শরীরকে এমন এক অবস্থানে নিয়ে যায় যেখানে শরীর একটি দক্ষ ও দ্রুত কর্মপদক্ষেপের জন্য সহজেই নিরাপদভাবে স্নায়বিক সাড়া প্রদান করে| ওয়ার্ম আপ শরীরের পেশিকে মজবুত করে ফলে শরীরে ইনজুরির পরিমাণ কম হয় | দীর্ঘ ওয়ার্ম আপের ফলে ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলাধূলায় সার্বিকভাবে ইনজুরি কম হয়|   

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন