জেনে নিন আপনি বর্ণান্ধ কিনা?

কেমন হতো যদি আপনি আপনার লাল, হলুদ বা সবুজ রঙ্গের জামাগুলোর রঙ বুঝতে না পারতেন? কেমন হতো যদি এ রঙ্গিন ফুলগুলোর রঙ আপনার চোখে ধরা না পড়তো? অনেকটা অবাস্তব মনে হচ্ছে ব্যাপারটা, তাইনা ? অবাস্তব মনে হলেও পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যারা বিশেষ কিছু রঙ দেখতে পায় না। এমন না যে তারা চিনতে পারে না, আসলে তারা দেখতেই পারে না। এটা এক ধরণের অসুখ, যেটা “বর্ণান্ধতা” নামে পরিচিত, যাদের এ রোগ আছে তাদের বর্ণান্ধ বলা হয়। বর্ণান্ধরা মূলতঃ মৌলিক রঙগুলো দেখতে পায় না। আপনারা হয়তো জানেন না যে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ একজন বর্ণান্ধ, তিনি লাল, সবুজ এবং হলুদ রঙ দেখতে পান না, তাই ফেসবুকের রঙ দেয়া হয়েছে আকাশী যা তিনি ভালোভাবে দেখতে পান। এছাড়া বাংলা সাহিত্যের নোবেলজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-ও কিছুটা বর্ণান্ধ ছিলেন। 

এবার আমরা জেনে নেই এই রোগের কারণ। বর্ণান্ধতা বা বর্ণান্ধত্ব বা বর্ণবৈকল্য (Colour Blindness) হলো মানুষের, কতিপয় রঙ দেখার, সনাক্ত করার বা তাদের মধ্যে পার্থক্য করার অক্ষমতাজনিত এক প্রকার শারীরিক বৈকল্য। মানুষের চোখের ভিতরে রেটিনায় দুই ধরনের আলোকসংবেদী কোষ (Photoreceptor) আছে। এরা হল– রডকোষ (Rod) এবং কোন্‌কোষ (Cone)কোন্‌কোষ থাকার জন্য আমরা বিভিন্ন রং চিনতে পারি এবং তাদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারি। অর্থাৎ, আমাদের রঙিন বস্তু দর্শনে কোন্‌কোষগুলো দায়ী।

রডকোষগুলো শুধু দর্শনের অনুভূতি জাগায়, কিন্তু কোন ধরনের রং দেখতে অথবা চিনতে সাহায্য করে না। কোন্ তিন ধরণের। আর এই তিন ধরণের কোন্ লাল (R), সবুজ (G) ও নীল (B) -এই তিনটি মৌলিক রং সনাক্ত করতে পারে। চোখের রেটিনায় এই তিন প্রকারের কোন্-এর যেকোন একটি, দুটি বা সবগুলির অনুপস্থিতি অথবা ত্রুটিই হলো বর্ণান্ধতার মূল কারণ। কোনো ব্যক্তির সবগুলো কোন্ই যদি ত্রুটিযুক্ত হয়, তাহলে তিনি সব রংকেই ধূসর দেখবেন। বর্ণান্ধতা এমনই মারাত্মক হয় যে, কোনো ব্যক্তি লাল রঙের রক্ত দেখলেও তা যে রক্ত, তা সনাক্ত করতে পারে না।

বর্ণান্ধতা জন্মগত কিংবা অর্জিত হতে পারে। জন্মগত বর্ণান্ধতার কারণে লাল ও সবুজ রঙ চিনতেই বেশি সমস্যা হয়, আর অর্জিত বর্ণান্ধতার কারণে নীল ও হলুদ রঙ সনাক্ত করতে সমস্যা হয়। যেসব কারণে মানুষ বর্ণান্ধ হতে পারে সেগুলো হল :-

 

  • বংশগত / জন্মগত: মা-বাবা বর্ণান্ধ হলে সন্তানেরাও বর্ণান্ধ হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয়গুলো হল:-
  1. নারীর চেয়ে পুরুষে বর্ণান্ধতা বেশি পরিলক্ষিত হয়                        
  2. বর্ণান্ধ মায়ের ছেলেসন্তান সবসময় বর্ণান্ধ হয়
  3. মা-বাবার উভয়েই বর্ণান্ধ হলে, তাদের মেয়েসন্তান বর্ণান্ধ হয়
  • লব্ধ / অর্জিত:
  1. চোখের বিভিন্ন রোগ
  2. চোখে আঘাত লাগা
  3. ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
  4. ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব
  5. বার্ধক্য

আপনাদের যদি প্রশ্ন করা হয় যে গরুর প্রিয় রঙ কী, আপনারা নিশ্চয়ই জবাব দেবেন যে সবুজ! আসলে গরু বর্ণান্ধ, তাই এরা কোন রঙ দেখতে পারে না। তবে অনেক সময়েই আমরা দেখি যে লাল রঙ দেখে কিছু গরু রেগে গিয়ে গুঁতো মারতে আসে, এটা আসলে রঙ দেখে না, উজ্জ্বলতা দেখে। লাল রঙ অন্যান্য রঙের চেয়ে খানিকটা উজ্জ্বল। আবার স্পেনের বুলফাইটে ম্যাটাডোর লাল কাপড় নাড়িয়ে ষাঁড়কে রাগিয়ে তোলে, আর ষাঁড় আসলে লাল রঙ দেখে নয়, কাপড় নাড়ানো দেখেই রেগে ওঠে।  

আপনি বর্ণান্ধ কিনা এ পরীক্ষাটি সহজেই করে ফেলতে পারবেন নিচের ছবিগুলো দিয়ে। প্রত্যেকটি ছবির মাঝখানে বিশেষ কিছু রঙ দিয়ে কিছু সংখ্যা লেখা আছে। আপনি যদি সংখ্যাগুলো দেখতে না পান, তবে বুঝে নিবেন আপনি বর্ণান্ধ। তবে এ পরীক্ষায় পাশ না করলে ভয়ের কিছু নেই, কারণ কিশোর বয়সে ধরা পড়লে অনেক সময়েই চিকিৎসার মাধ্যমে বর্ণান্ধতা দূর করা সম্ভব।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন