তরলের পৃষ্ঠটান

আমরা জানি, পানি বা অন্য কোন তরলের নির্দিষ্ট আকৃতি নেই। কিন্তু তারপরেও কিছু ক্ষেত্রে তরলের মাঝে নির্দিষ্ট আকার ধারণ করার প্রবণতা দেখা যায়। যেমন মুক্তভাবে পড়ন্ত পানির বিন্দু সবসময় একই রকম হয় দেখতে। আবার কোনো গাছের পাতায় বৃষ্টির পর পানির বিন্দু লেগে থাকতে দেখলে দেখা যাবে যে পানির কণাগুলো গোটা পাতা জুড়ে ছড়িয়ে থাকে না বরং নির্দিষ্ট ও সামান্য আয়তনের মাঝেই আছে। প্রশ্ন হতে পারে যে যথেষ্ট জায়গা থাকা সত্ত্বেও পানির কণাগুলো গাছের পাতার সর্বত্র ছড়িয়ে না পড়ে ছোট্ট একটি জায়গায় গুটিসুটি মেরে থাকছে কেন?

এর কারণ হলো তরলের পৃষ্ঠটান (Surface Tension) নামক এক বিশেষ ধর্ম। এই পৃষ্ঠটানের কারণে কত সুবিধাই না পাচ্ছি আমরা ! কাপড় থেকে সাবানের মাধ্যমে ময়লা দূর করা, পানিতে সূচ ভাসা, ব্লটিং পেপার দিয়ে কালি শুষে নেওয়া এমনকি মাকড়সা এই পৃষ্ঠটানের কারনেই পানির উপরে ভেসে থাকতে পারে।

পৃষ্ঠটান আসলে কি? এটি বুঝতে হলে আগে তরলের অণুগুলো কেমন অবস্থায় থাকে তা বুঝতে হবে। এক গ্লাস পানির কথা চিন্তা করা যাক। পানির প্রতিটি অণু তার আশেপাশের সকল অণুকে আকর্ষণ করে। এখন গ্লাসের মাঝখানের একটি কণার কথা ভাবা যাক। মাঝখানে থাকার ফলে এই কণাটির আশেপাশে সকল দিকেই আরো পানির কণা আছে। ফলে এটি চারদিক থেকেই আকর্ষণ অনুভব করবে। যার ফলে মোট আকর্ষণ বল (Net force) হবে শুন্য।

এবার, গ্লাসের একদম উপরের কণাগুলোর কথা ভাবা যাক। এই কণাগুলো সবার উপরে থাকায় তারা শুধু নিচের দিকেই টান অনুভব করবে, কারণ তাদের উপর দিকে আর পানির কণা নেই। যার ফলে একদম উপরের দিকের কণাগুলোর মোট আকর্ষণ বল কিন্তু মোটেও শুন্য হয় না বরং তারা নিচের দিকে টান অনুভব করে। এর ফলে পানির ভিতরের দিকে একধরণের চাপের সৃষ্টি হয়। এই চাপের ফলেই পানি বা অন্যান্য তরল যথাসম্ভব কম আয়তন দখল করে। এই চাপকেই বলা হয় পৃষ্ঠটান (Surface Tension)।

 

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন