তাপে ধরা দেয় ছবি

বিশ্ববিখ্যাত কার্টুন চরিত্র ব্যাটম্যান ভক্তরা নিশ্চয় জানেন যে আঁধারের মাঝেও প্রযুক্তির সাহায্যে দেখতে পায় ব্যাটম্যান! যে প্রযুক্তির সাহায্যে ব্যাটম্যান অপরাধীদেরকে খুঁজে বের করে তা কিন্তু কাল্পনিক কোন প্রযুক্তি নয়, বরং বাস্তবে মানুষের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার হয়। এই প্রযুক্তির নাম হলো Thermal Imaging (তাপীয় প্রতিবিম্ব)।

এক ধরণের বিশেষ ক্যামেরার মাধ্যমে এই Thermal Imaging মানুষের জন্য দৃশ্যমান করা হয়। এই বিশেষ ক্যামেরাকে বলা হয় থার্মোগ্রাফিক ক্যামেরা। কিন্তু এটি কিভাবে কাজ করে? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আগে Radiation বা বিকিরণ সম্পর্কে কিছু কথা জেনে নিতে হবে। পরমশুন্য তাপমাত্রা থেকে বেশি তাপমাত্রার সকল বস্তু থেকেই অবলোহিত বা ইনফ্রারেড রেডিয়েশন হতে থাকে। আমাদের আশেপাশের পরিবেশের সকল বস্তুর তাপমাত্রাই পরম শুন্য তাপমাত্রা থেকে বেশি। তাই, এখানের সকল বস্তু থেকেই ইনফ্রারেড রেডিয়েশন হতে থাকে। এই বিকিরণের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য দৃশ্যমান আলোক তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অপেক্ষা সামান্য বড়। খালি চোখে এদের দেখা যায় না। থার্মোগ্রাফিক ক্যামেরার সাহায্যে আমরা এই বিকিরণ দেখতে পাওয়া যায়।

থার্মাল ইমেজিং এর মাধ্যমে আমরা কোন মানুষের বা কোন প্রাণীর ছবি তুলে সেই ছবি দেখেই বলে দিতে পারি যে, তার শরীরের কোথায় তাপমাত্রার পার্থক্য রয়েছে। এছাড়া, প্রাণীর আশেপাশে অন্যান্য প্রাণহীন বস্তু – যেমন ঘরবাড়ি বা মূর্তি থাকলে সেই থার্মাল ইমেজ থেকে স্পষ্টভাবে প্রাণীর অবস্থান বোঝা যায়। কারণ, আশেপাশের পরিবেশের তাপমাত্রা তুলনামূলক কম থাকে আর প্রাণীর শরীরের তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। তাই, থার্মাল ইমেজে প্রাণীর ছবি স্পষ্ট ও উজ্জ্বল হয়ে ধরা দেয়।

আধুনিক যুগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে থার্মাল ইমেজিং ব্যবহার করা হয়। মূলত সামরিক কাজের জন্য এই প্রযুক্তি আবিষ্কার করা হলেও আজ এটি চিকিৎসা ক্ষেত্র থেকে শুরু করে তড়িৎ শিল্প, অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণ কাজেও ব্যবহার করা হয়।

সামরিক ক্ষেত্রে থার্মাল ইমেজিং নতুন কিছু নয়। ১৯৫৮ সালে এক সুইডিশ কোম্পানি প্রথম মিলিটারিদের ব্যবহারের উপযোগী থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা প্রস্তুত করে। থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরার সাহায্যে সৈন্যরা রাতের আঁধার, কুয়াশা, ঝড় বা তুষারপাত সকল পরিবেশেই প্রতিপক্ষ সৈন্যদেরকে দেখতে পায়। তাই, সামরিক ক্ষেত্রে থার্মাল ইমেজিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি হিসেবে কাজ করে।

আধুনিক যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও থার্মাল ইমেজিং ব্যবহার করা হয়। চর্মরোগ ক্যান্সার, পোড়া চামড়ার অবস্থা নির্ণয় এমনকি ওপেন হার্ট সার্জারিতেও থার্মাল ইমেজিং এর মাধ্যমে শরীরের অনেক তথ্য নেওয়া হয়। এছাড়া, কয়েক বছর আগে যখন গোটা বিশ্বে সোয়াইন ফ্লু আর SARS এর প্রাদুর্ভাব দেখা যায় তখন বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরের যাত্রীদের শরীরের থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হয় যাতে কেউ এই ব্যাধিগুলো নিয়ে তাদের দেশে প্রবেশ করতে না পারে।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন