দেয়ালে নোনা ধরা

অনেক শখ করে অনেকেই নিজের দালানের দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের রঙ করে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ে দেখা যায় যে, কিছুদিন পর কিংবা বেশ কয়েক বছর পর দেয়ালের রঙ ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যায় এবং যেই রঙই করা হোক না কেনো এর উপর হালকা থেকে গাঢ় সাদা রঙের আস্তরণ পড়ে। ইংরেজিতে একে Efflorescence বলা হয়। এর ফলে ইট বা পাথরের তৈরী দেয়ালে সাদা সাদা লবণের অধঃক্ষেপ সৃষ্টি হয়, যা দেয়ালের সৌন্দর্য ও স্থায়িত্ব নষ্ট করে।

Merriam Webster’s Collegiate Dictionary মতে Efflorescence হলো দ্রবনীয় লবণের দ্রবন হতে পানির বাস্পীভবনের ফলে দালানের দেয়ালে লেপ্টে থাকা লবণের অধঃক্ষেপ। সাধারনত অনেক দিন ধরে শুষ্ক জলবায়ু, অত্যাধিক বৃষ্টি ও দেয়ালের গাঁথুনিতে জমা পানির প্রভাবেই এটি হয়।

বিজ্ঞানে pH বলে একটি ব্যাপার রয়েছে। pH এর সহজ অর্থ হচ্ছে দ্রবীভূত হাইড্রোজেন আয়নের সক্রিয়তার পরিমাণ। ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ পানির pH ৭ যাকে pH স্কেলের নিরপেক্ষ মান হিসেবে ধরা হয়। পানি বিক্রিয়ক বিশেষে কখনও অম্ল আবার কখনও ক্ষারকের মত আচরণ করে এজন্য পানিকে Amorphous বা অনিয়তাকার পদার্থ বলা হয়ে থাকে।  pH এর মাত্রা যদি ৭ এর বেশি হয়, তাহলে তা ক্ষারীয় ধর্ম প্রদর্শন করে। আর যদি মাত্রা ৭ এর কম হয়, তাহলে তা অম্লীয় ধর্ম প্রদর্শন করে। দালানের ক্ষেত্রে pH এর মান যদি ৮ এর বেশি হয় কিংবা ধীরে ধীরে বেড়ে যায় তাহলে দালানের রঙ ক্ষয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

যে কারনে দেয়ালের নোনা ধরে 
দেয়ালের যে সব অংশে রোদ কম পড়ে সেসব জায়গা অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা থাকে। এর ফলে বাতাসের জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে বিন্দু বিন্দু পানিরূপে দেয়ালে জমা হতে থাকে এবং প্লাষ্টার বা ইটের অভ্যন্তরে যে সব লবণ থাকে তা দ্রবীভূত হয়ে দালানে নোনা ধরে। এছাড়া, বাড়ি তৈরীর উপকরণগুলোর মধ্যে ২.৫% এর বেশি লবণের উপস্থিতি থাকলে এ সমস্যা হতে পারে। এছাড়া, সুষ্ঠ পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে বা বাড়ি তৈরি করার সময় স্বল্প পোড়ানো ইট ব্যবহৃত হলে দেয়ালে নোনা ধরতে পারে। আরেকটি কারণে দেয়ালে নোনা ধরতে পারে তা হচ্ছে যদি দেয়ালের প্লাষ্টারের নিচে পানির লাইন অবস্থান করে।সাধারণত, মাটিতে বা নির্মাণ সামগ্রীতে নিম্নলিখিত লবণ সমূহের উপস্থিতি থাকলে নোনা সৃষ্টির সম্ভাবনা বেশী থাকে।  

  • সোডিয়াম সালফেট ( Na2SO)                                            
  • ক্যালসিয়াম কার্বনেট ( CaCO3)    
  • ক্যালসিয়াম সালফেট ( CaSO4 )
  • সোডিয়াম কার্বনেট ( Na2CO3 )
  • ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ( MgSO4 ) ইত্যাদি।

তাছাড়া ক্লোরাইড ও নাইট্রেট লবন সমূহ এবং ভ্যানাডিয়াম ( V ), ক্রোমিয়াম ( Cr ) ও মলিবডেনাম ( Mo ) লবণের উপস্থিতি দেয়ালে সবুজ অধঃক্ষেপ সৃষ্টি করে থাকে এবং অন্যান্য লবণ সমূহ সাদা অথবা ধূসর বর্ণের অধঃক্ষেপ সৃষ্টি করে।

তাই, বাড়ি বা দালান-কৌঠা নির্মাণের পূর্বে মাটির pH পরীক্ষা করা উচিত। বাড়ির যে দিকের দেয়ালে কম রোদ আসে সে দিক যেন খোলা বেশী থাকে যাতে বাতাস চলাচলের মাধ্যমে স্যাঁতস্যাঁতে ভাব দ্রুত দূর হয়ে যায় এবং নোনা ধরার সুযোগ তৈরী না হয়। বাড়ীতে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখার জন্য জানালা,দরজা মুখোমুখি বানাতে হবে যেন বাতাস প্রবাহের ব্যাঘাত সৃষ্টি না ঘটে। গরম কালে যাতে সূর্য তাপ কম পায় এবং শীতকালে সর্বাধিক সূর্যতাপ আসে সেদিকে খেয়াল রেখেই বাড়ীর অবস্থান ঠিক করা উচিত। দেয়ালকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে সানশেডের ব্যবস্থা করতে হবে। বাড়ির চারপাশে ড্রেন থাকাও জরুরী যেন বাড়িতে ব্যবহৃত পানি সহজেই বের হতে পারে।  এছাড়া, বছরে একবার বা দুইবার দেয়ালের রঙের pH পরীক্ষা করে দেখতে হবে যেন pH এর মান ৮ বা ৮ এর নিচে আছে কি না । কেননা pH এর মান যদি ৮ এর বেশি হয় কিংবা ধীরে ধীরে বেড়ে যায় তাহলে দালানের রঙ ক্ষয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন