বাতাসের গতিমাপক স্কেল

মাঝে মাঝে আমরা টিভি বা রেডিওতে সংবাদ শুনি, “ ঘন্টায় ৭০ মাইল বেগে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ” কিংবা “ সমুদ্রে নিম্নচাপের ফলে উপকূলে ঘন্টায় ৩০ মাইল গতিতে ঝড়ো হাওয়া বইছে ”।

যে স্কেলের সাহায্যে বাতাসের গতি পরিমাপ করা হয় তাকে “ Beaufort Wind Scale ” বলা হয়। মূলত সমুদ্রে উপস্থিত বাতাসের গতির সাথে সম্পর্কযুক্ত এই স্কেল।  আইরিশ ( তৎকালীন ব্রিটিশ) নৌবাহিনীর রিয়ার এডমিরাল ফ্রান্সিস বিউফোর্ট ১৮০৫ সালে এই স্কেল আবিষ্কার করেন।

সমুদ্রে বিদ্যমান বাতাসের গতির সাথে মিল রেখে এই স্কেলের কাজটিকে ১৩টি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। 

স্কেলের এক একটি পর্যায় এক একটি “ বিউফোর্ট নাম্বার ” হিসেবে পরিচিত। প্রতিটি বিউফোর্ট নাম্বারের নিজস্ব অর্থ রয়েছে। 

বিউফোর্ট নাম্বার ০:                                                                                                                                          

বাতাসের গতি যদি ঘন্টায় ১.১ কিলোমিটারের কম হয় তাহলে তা “ ০ বিউফোর্ট নাম্বার ”এ পড়বে। সাধারণত বায়ুর স্বাভাবিক অবস্থা এটি।

বিউফোর্ট নাম্বার ১:

বাতাসের বেগ ঘন্টায় ১.১-৫.৫ কিলোমিটার হলে স্কেলের ১ নাম্বার পর্যায়ে পড়বে। এসময় ১ ফুট পর্যন্ত উঁচু ঢেউও সৃষ্টি হতে পারে।

বিউফোর্ট নাম্বার ২:

এক্ষেত্রে বাতাসের বেগ হয় ঘন্টায় ৫.৫-১১.৯ কিলোমিটার/ সর্বোচ্চ ২ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা দেখা দেয় এ সময়।

বিউফোর্ট নাম্বার ৩:

বাতাসের বেগ ঘন্টায় ১১.৯-১৯.৭ পর্যন্ত থাকলে নাম্বার ৩ এর দলভুক্ত হয়। ২ থেকে ৩.৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের সাথে মাঝারি আকারের ঢেউ পালাক্রমে আছড়ে পড়তে থাকে এই সময়ে।

বিউফোর্ট নাম্বার ৪:

বাতাসের বেগ কিঞ্চিৎ বেশি হয় এসময়। ঘন্টায় প্রায় ১৯.৭-২৮.৭ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হয়। সাড়ে তিন ফুট থেকে ছয় ফুট পর্যন্ত উঁচু জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা দেখা দেয় এসময়।

বিউফোর্ট নাম্বার ৫:

২৮.৭-৩৮.৮ কিলোমিটার/ঘন্টায় বাতাস প্রবাহিত হয় এ সময়। কখনো কখনো ৯ ফুট পর্যন্ত উঁচু জলোচ্ছ্বাসও দেখা যায় এসময়।

বিউফোর্ট নাম্বার ৬:

মোটামুটি শক্তিশালী ধরনের বাতাস প্রবাহিত হয় এ ঘর থেকেই। ৩৮.৮-৪৯.৯ কিলোমিটার গতির বাতাস প্রতি ঘন্টায় চলতে থাকে।এ সময় পানির ঢেউয়ের উচ্চতা সর্বোচ্চ ১৯ ফুট পর্যন্ত হয়।

বিউফোর্ট নাম্বার ৮:

ঝড়ের জন্যে তুলনামুলক উপযুক্ত একটি অবস্থা এটি। ঘন্টায় ৬১.৮-৭৪.৬ কি.মি. গতিতে বয়ে যাওয়া বাতাসের সাথে ১৮-২৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা থাকে এসময়।

বিউফোর্ট নাম্বার ৯:

সাধারণত শক্তিশালি ধরনের ঝড় হবার সময় বাতাসের গতি ৭৪.৬-৮৮.১ কি.মি/ঘন্টা থাকে। আর এই অবস্থাটি বিউফোর্ট নাম্বার ৯ এর অন্তর্ভুক্ত। ২৩-৩২ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস থাকে এই স্কেলে।

বিউফোর্ট নাম্বার ১০:

স্কেলের এই ১০ম পর্যায়ে বাতাসের বেগ থাকে ৮৮.১-১০২.৪ কিমি/ঘন্টা, যা বড় আকারের ঝড়ের নির্দেশক। এই অবস্থায় বেশিরভাগ গাছপালা মূলসহ উঠে যায়। ২৯-৪১ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস দেখা যায় এই সময়।

বিউফোর্ট নাম্বার ১১:

বিধ্বংসী রকমের ঝড়ের অবস্থা এটি। ১০২.৪-১১৭.৪ কিলোমিটার গতির বাতাস বয়ে যায় এসময়। আর ৩৭-৫২ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস বয়ে যায় উপকুলের উপর দিয়ে, যা কিনা একটি ৫ তলা দালানের সমান।

বিউফোর্ট নাম্বার ১২:

স্কেলের সবচেয়ে শেষ এই পর্যায়ে আসার মানে হচ্ছে নিশ্চিতভাবে বড় রকমের হ্যারিকেন উপকূলে আঘাত হানবে। হ্যারিকেনের ভয়াবহতা অনেক বেশি। ১১৭.৪ কি.মি গতির চেয়ে বেশি বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে থাকে। পানির ঢেউয়ের উচ্চতাও হয় প্রায় ৫০ ফুটের উপরে।

বাতাসের এই গতিমাপক এই স্কেলের কার্যকারিতা অনেক। যদিও ঘূর্ণিঝড় কিংবা হ্যারিকেনের ফলে সৃষ্ট ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি, তবুও আগে থেকে এই স্কেল ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসের গতি মেপে মানুষজনকে নিরাপদ দুরত্বে নিয়ে গেলে হতাহতের সংখ্যা অনেক কমে যায়। 

 

 

 

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন