বিশ্বশান্তির নতুন পথ

পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুগে যুগে অনেক মহান ব্যক্তিরা অনেক কিছুই করেছেন। শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়তে মহাত্মা গান্ধী, মাদার তেরেসার মত মানুষদের অবদান অনস্বীকার্য। তবে আজও কিছু মানুষ পৃথিবীতে শান্তির পথ দেখাতে অনেক কিছুই করে যাচ্ছেন।

এর মাঝে কোন কোন উদ্যোগ একটু উদ্ভটও বটে। তেমনই একটা ভিন্নধর্মী উদ্যোগ হচ্ছে ‘পিস বাই পিস (Peace Buy Piece)’।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস মিডল স্কুলে ভিজুয়াল মিডিয়া ইফেক্টসের ক্লাস করান মিস জ্যাকিস চিজম। একই সঙ্গে তিনি ‘মিডিয়া ভায়োলেন্স’ নিয়েও পড়ান।

সামাজিক বিভিন্ন গনমাধ্যম যেমনঃ টেলিভিশন, সিনেমা, ভিডিও গেমস ইত্যাদির মাধ্যমে কিভাবে মানুষের মাঝে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ছে সেটাই আসলে মিডিয়া ভায়োলেন্সের মূল বিষয়।

শিক্ষকতার পাশাপাশি মিস চিজম অন্য অারেকটি কাজও করে থাকেন। তিনি মানুষের কাছ থেকে বিশেষত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংঘাতময় বিভিন্ন ভিডিও গেম এবং মুভির সিডি কিনে নেন। তবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা সিডিগুলো তিনি খেলার জন্য কেনেন না।

তার সংগ্রহ করা সিডিগুলাে পরবর্তীতে তিনি ছাত্রছাত্রীদের দিয়েই ভেঙ্গে বা নষ্ট করে ফেলেন। এখানেই শেষ নয় এরপর তিনি শিক্ষার্থীদের লিখিতভাবে শপথ করান, যে তারা ভবিষ্যতে আর এ ধরণের সংঘাতপূর্ণ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কোন ভিডিও গেমের সিডি কিনবে না বা খেলবেও না।

এমনকি এরকম কোন সিনেমাও তারা দেখবে না। তিনি এই উদ্যোগের নাম দিয়েছেন ‘পিস বাই পিস (Peace Buy Piece)’।

মিস চিজম তার এ কার্যক্রম শুরু করেন হঠাৎ করেই। তিনি একদিন খেয়াল করলেন, তার ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে আবেগ, অনুভূতি, স্পর্শকাতরতা বিষয়গুলো কমে যাচ্ছে। তিনি তার শিক্ষার্থীদের জানালেন, তাদের ভেতরে সংঘাতময় বিষয়গুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে দেখেই এরকমটা ঘটছে।

তিনি তাদের পরামর্শ দিলেন অন্যদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে, অন্যের দুর্বলতা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা না করতে। তবে একটি ঘটনা তাকে ‘পিস বাই পিস (Peace Buy Piece)’ কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নিতে দারুণ প্রভাবিত করেছিলো।

২০১২ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাটের স্যাণ্ডি হুক স্কুলে ২০ বছর বয়েসী এক যুবক অস্ত্র হাতে ঢুকে পড়ে। সে ২০ জন শিশু এবং ৬ জন প্রাপ্তবয়স্ককে গুলিবিদ্ধ করে। এর আগে অবশ্য ওই যুবক একই অস্ত্র দিয়ে তার মাকেও গুলি ছুঁড়ে হত্যা করে।

হৃদয়বিদারক এই ঘটনাটি মিস চিজমের মনে গভীর রেখাপাত করে। তিনি অনুভব করেন এ ধরেণর সহিংস কর্মকাণ্ডের এখনই পরিসমাপ্তি টানতে হবে।  মিস চিজম বলেন, আমরা যখন সংঘাতময় কোন অনুষ্ঠান টিভিতে-সিনেমায় দেখি বা গেম খেলি তখন আমাদের মস্তিষ্ক ‘আলফা স্টেট’-এ চলে যায়।

এটা এমন একটি মানসিক অবস্থা যখন আমাদের মস্তিষ্ক অবচেতনভাবে বিভিন্ন তথ্য গ্রহণ করে, অনেকটা সম্মোহনের (হিপনোটিজম)মতো। আমাদের যখন দেখি তখন মনে হয় এসব সিনেমা বা ভিডিও গেম আমাদের মনে কোন প্রভাব ফেলছে না।

কিন্তু আমাদের মস্তিষ্ক ঠিকই তার অবচেতন মনে এসব ভয়ংকর তথ্যগুলো জমা করতে থাকে এবং পরবর্তীতে সেগুলো সচেতনভাবেই আরও ভয়াবহ আকারে বাইরে বেরিয়ে আসে। মানবতা বির্বজিত বিভিন্ন গেমস বা সিনেমা দেখার দরুণ নিজের অজান্তেই আমাদের মন অতিমাত্রায় সংঘাতপ্রবণ হয়ে উঠছে।

কমনসেন্স মিডিয়া নামক একটি ওয়েবসাইটের তথ্য থেকে জানা যায়, যে বাজারে পাওয়া ৯০% সিনেমা, ৬৮% ভিডিও গেম এবং ৬০% টিভি অনুষ্ঠানই সংঘাতময়। এগুলো শিশুদের মন-মানসিকতার উপর ব্যাপকহারে প্রভাব ফেলছে।

মিস চিজম চেয়েছিলেন এ বিষয়টা নিয়ে অভিভাবকদের সাথেও আলোচনা করতে। কিন্তু যেহেতু তাদেরকে সবসময় ক্লাসে পাওয়া যাবে না তাই তিনি তার শিক্ষার্থীদেরই সচেতন করে তোলার চেষ্টা শুরু করেন। তিনি তার জমানো ৫০০ ডলার দিয়েই ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ভিডিও গেম আর সিনেমার সিডি কেনা কাজটি শুরু করেন।

মিস চিজম বলেন, “আমরা যদি টাকার বিনিময়ে সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে অস্ত্র কিনে নিয়ে শান্তি স্থাপন করতে পারি তাহলে ভিডিও গেম বা সিনেমার সিডি কেন কিনতে পারবো না? এগুলোও তো পরোক্ষভাবে আমাদের সমাজ থেকে শান্তি কেড়ে নিচ্ছে।

মিডিয়ার এসব সংঘাতময় জিনিসগুলো যদি আমরা আর না কিনি বা না দেখি তাহলেই তো তারা সেগুলো আর তৈরি করবে না। ফলে সংঘাতের অবসান ঘটবে পৃথিবীতে। যদি একদিনে তা না পারি তাহলে ধীরে ধীরে আমরা তা শুরু করতে পারি। তাহলেই তো আমাদের বিশ্ব শান্তির দিকে এগিয়ে যাবে।”

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন