যদি প্রিয় শিক্ষক হতে চান

0
3066

শিক্ষকদের মাঝে এমন অনেকে আছেন যাদের শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি পছন্দ করে, অনেক ভালবাসে, নিজের আদর্শও বলে মনে করে।

আবার এমন শিক্ষকও  আছেন যাদের দেখলে তারা বিরক্ত হয়, যমের মত ভয় পায়, এমনকি পড়া না বুঝলেও সাহস করে কিছু জিজ্ঞেস করে না। আবার এমন শিক্ষক আছেন, যাদের ক্লাসে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি দুষ্টুমি করে।

শিক্ষকতা খুবই কঠিন ও ধৈর্যশীল একটি পেশা। এ কারেণই মহান পেশার তালিকার প্রথম স্থানটা শিক্ষকদেরই দখলে। তাদের একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থীদের সামলাতে হয়, পড়াতে হয়, শিক্ষার্থীদের দুষ্টুমি সহ্য করে সামনে এগুতে হয়।

যারা শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিতে চান অথবা এই পেশায় আছেন তাদের নিজেকে প্রিয় শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠার কয়েকটি উপায় জেনে নেয়া যাক আজ :

• শিক্ষার্থীদের সাথে সবসময় বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করুন। তারা যেন সবসময় তাদের যে কোনো সমস্যার কথা আপনাকে বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, সেরকম ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করুন।

• ক্লাসের বাচ্চাদের অনুপ্রানিত করুন, তাদের বুঝিয়ে দিন যে কেউ কারো চেয়ে কোন অংশে কম না। সবার মধ্যেই সমান দক্ষতা আছে, একটু পরিশ্রম করলে সকলেই সাফল্য অর্জন করতে পারবে। যারা খুব বেশি সাফল্য অর্জন করতে পারেনি তাদের কে সবসময় আরও বেশি অনুপ্রানিত করুন, যেন তারা আরও কঠিন পরিশ্রম করে।

• কিছু গ্রাউন্ড রুলস সেট করে রাখুন। ক্লাসে ৩-৫টি এমন কিছু নিজস্ব নিয়ম তৈরি করুন এবং সেগুলো শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিন। নিয়মগুলো শিক্ষার্থীদের মানতেই হবে এবং সেগুলো পালন না করা হলে কি শাস্তির ব্যবস্থা হতে পারে তাও জানিয়ে দিন।

• আপনার ক্লাসে দেওয়ার লেকচারগুলো আগে থেকেই তৈরি রাখুন ও পড়ানোর সময় প্রাসঙ্গিক উদাহরন দেওয়ার চেষ্টা করুন। শিক্ষার্থীরা এই উদাহরনগুলো খুব পছন্দ করে।এই উদাহরনগুলো তাদেরকে সেই প্রসঙ্গটি মনে রাখতে সাহায্য করে।

• যে প্রসঙ্গটি পড়াবেন সেই প্রসঙ্গটির ৩-৪ ধরনের ব্যাখ্যা তৈরি রাখুন এবং ক্লাসে সেগুলো ব্যাবহার করুন। সব বাচ্চার চিন্তাধারা একধরনের না। তাই প্রসঙ্গটি ভালভাবে বুঝাতে নানা ধরনের ব্যাখ্যা প্রয়োজন।

• আপনি যখন একটি অনুশীলনী শুরু করবেন, তখন আপনার একটি লক্ষ্য ঠিক করে রাখুন যে আপনি কতটুকু পড়াবেন, এবং তা শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিন। অনুশীলনীর যে কোনো পর্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা ব্যাপারটি শিখতে পারলো কীনা তা পরীক্ষা করার জন্য বোর্ডে তাদের কিছু লিখতে দিন বা ব্যাপারটি আপনাকে বোঝাতে বলুন।

• ক্লাসের মধ্যে সর্বদা সৃজনশীল পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করুন। শিক্ষার্থীদের নিজেদের মধ্যে গল্প করা থেকে বিরত রাখার এটাই সেরা উপায় !

• খুব বেশি রাগী শিক্ষক যেমন শিক্ষার্থীরা পছন্দ করে না তেমনি খুব নরম বিনয়ী শিক্ষকদের সরলতাকেও শিক্ষার্থীরা নানাভাবে  কাজে লাগিয়ে ক্লাসে গণ্ডগোল করে। তখন শিক্ষার্থীদের সামলানো খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই শিক্ষক, আপনি ছাত্রছাত্রীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ থেকেও নিজের দৃঢ়তা বজায় রাখুন। যেন তারা আপনার ক্লাস উপভোগ করার পাশাপাশি ক্লাসে শৃঙ্খলা বজায় রাখে।

• সবসময় একই ধরণের হোমওয়ার্ক না দিয়ে এসাইনমেন্ট ও গ্রুপ প্রজেক্ট করতে দিন। এতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কখনো কমবে না। আবার খুব বেশি প্রজেক্ট বা এসাইনমেন্ট শিক্ষার্থীদের জন্য ঝামেলা বা বিরক্তি কারন হয়ে দাঁড়াতে পারে, সেই ব্যাপারটিও খেয়াল রাখুন।

• মুখস্থ পড়া ধরার পরিবর্তে সাধারণ ছোট ছোট প্রশ্ন করুন।

• ক্লাসে সবার সামনে শিক্ষার্থীদের যে কোন ব্যক্তিগত বা পারিবারিক প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকুন।

• কোন শিক্ষার্থীর ভুলের জন্য তাকে পুরো ক্লাসের সামনে বকা না দিয়ে, তাকে তার ভুলটি বুঝিয়ে তার ভুল শুধরানোর সুযোগ করে দিন। সবার সামনে বকা খাওয়ার ব্যাপারটা অপমানজনক, যা বাচ্চাদের মনে সবসময় গেঁথে থাকে। একই পরামর্শ ক্লাসে কোন বিশেষ বিষয়ে দুর্বল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে। 

• সবসময় শিক্ষার্থীদের সামনে নিজেকে একজন রাশভারী মানুষ হিসেবে প্রমান না করে ক্লাসে মাঝে মাঝে প্রাসঙ্গিক রসিকতা করুন। তবে খেয়াল রাখবেন রসিকতাটি যেনো আপনার ব্যক্তিত্বকে ক্ষুন্ন না করে। 

সবশেষ কথা শিক্ষার্থীদের বন্ধু হবার চেষ্টা করুন। দেখবেন তারা তখন আপনাকে অনেক বেশি ভালবাসবে ও অনেক বেশি সম্মান রদর্শন করবে।
ছবি : ইমতিয়াজ আহমেদ 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন