রহস্যময় স্থান : এরিয়া ৫১

যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা অঙ্গরাজ্যের লাস ভেগাস শহর থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তরে মোহাভে (Mojave) মরুভূমির বিশাল এক অংশ- যা নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। শুকিয়ে যাওয়া বিশাল গ্রুম হ্রদের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত এই স্থান নিয়ে কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র, গুজব কিছুই বাদ নেই।

স্থানটির নাম ‘এরিয়া ৫১’। প্রায় ২৬,০০০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে এই এলাকার অবস্থান। নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিক দিয়ে হোয়াইট হাউসের সমান নিরাপত্তা রয়েছে এখানে। পুরো এলাকার চারপাশে সতর্কীকরণ বোর্ডগুলোতে সরাসরি লেখা রয়েছে, ‘ Use of deathly force authorized ’এই সীমানায় প্রবেশের পর অনুমতি ছাড়াই গুলি করার নির্দেশ ছিলো, যদিও এখন তা কিঞ্চিত শিথিল হয়েছে। এই সীমানায় আজ পর্যন্ত কোনো বেসামরিক নাগরিক ঢুকতে পারেনি।

যদিও এর চারপাশে সরাসরি চোখে পড়ার মত কোনো প্রাচীর বা বেড়া নেই, অনেকগুলো সাইনবোর্ডে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তবে এই এলাকার চতুর্দিকে CC Camera, Motion Detector, Laser Detector, Sound Detector এমনকি অত্যাধুনিক Smell Detector সহ অনেক প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হয়েছে এই এলাকার নিরাপত্তায়।

AREA 51 SIGN
ছবি : সংগৃহীত

আকাশ পথ দেখার জন্য রয়েছে রাডার। এই ঘ্রান পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে আশেপাশে থাকা যে কোন মানুষ বা বন্য প্রাণীর অস্তিত্ব তারা পর্যবেক্ষন করতে পারে। এখন যদি কেউ কোন ভাবে ঢুকে পড়লে তার অস্তিত্ব ধরা পরবে এই সেন্সর গুলিতে। আর ধরা পড়লেই চলে আসবে সুরক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী। সুরক্ষায় যারা থাকে তারা শুধুমাত্র এরিয়া ৫১ এর সুরক্ষার জন্য নিয়োজিত। কেউ যদি সব সুরক্ষা ব্যবস্থাকে কাটিয়ে ভিতরে ঢুকলেও রয়েছে বড় সমস্যা। কেননা এই এলাকাটি মরুভূমির মধ্যে অবস্থিত। তাই, প্রকৃতির সাথে লড়াই করেও এখানে বেঁচে থাকা কষ্টসাধ্য। তাই, প্রাকৃতিক ভাবেও এই এরিয়া ৫১ অনেক সুরক্ষিত।

সামরিক মহড়া, নতুন প্রযুক্তির বিমান বা আকাশযান তৈরী – এই দুই কাজে এই ‘এরিয়া ৫১’ ব্যবহার হচ্ছে বলে অফিসিয়ালি জানানো হয়। বাস্তবে কিন্তু তা নয়। এত এত নিরাপত্তার পেছনের রহস্য অনেক বেশি বিস্তৃত।

এই Area 51 বিশ্বব্যাপি ‘ ষড়যন্ত্রের এলাকা ’ বা Area of Conspiracy নামে পরিচিত ছিল। আগে সরাসরি এই এলাকার কোনো ছবি পাওয়া যেতো না। কিন্তু Cold War চলাকালীন সময়ে রাশিয়া তাদের শক্তিশালী স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এই এলাকার অনেকগুলো ছবি তোলে। যা এখন ইন্টারনেটে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে।

Area 51
ছবি : সংগৃহীত

এই এলাকার আশেপাশের লোকজন অনেকটা গুজবের মতই UFO বা Unidentified Flying Object এর গল্প সাজিয়েছে। বাস্তবে তারা যা দেখে তা হচ্ছে এই ‘এরিয়া ৫১” এর ভেতর তৈরী করা অতি মাত্রার ক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক বিমান। আধুনিক বললে ভুল হবে, অত্যাধুনিক বিমান।

এই এরিয়া-৫১ এর ভেতর রানওয়ে রয়েছে সাতটি। রয়েছে অনেকগুলো অত্যাধুনিক বিমান। এখানে এমন বিমান রয়েছে, যা এখনো বাইরের কেউ কল্পনাও করেনি। এখানে যে কর্মীরা কাজ করে তাদের জন্যে কয়েকটি বোয়িং-৭৩৭ বিমান রয়েছে। 

‘এরিয়া ৫১’ নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র/টিভি সিরিয়ালগুলো হলোঃ

  1. Independence Day (1996)
  2. Hangar 18(1980)
  3. Seven Days (1998-2001)
  4. Area 51 video game  (2005)

১৯৯৬ সালে হলিউডের বিখ্যাত ছবি ‘ ইনডিপেনডেন্স ডে ’ তে দেখানো হয়েছে যে এই ভীন গ্রহের প্রাণীরা এরিয়া ৫১ এর উপর আক্রমণ করেছে এবং এই ছবির শেষ দিকে দেখানো হয়েছে এই প্রাণীদের ব্যবহার করা বিশাল আকারের UFO কে উন্নত প্রযুক্তির মিসাইলের সাহায্যে ধ্বংস করে দেয়া হয়।

আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) ২০১৩ সালে এক বিবৃতিতে ‘এরিয়া ৫১’ এর অস্তিত্ব স্বীকার করে এবং বলে দেয় যে শুধুমাত্র গোপন সামরিক পরীক্ষার জন্যে এ স্থান এতো বেশি সুরক্ষিত করে রাখা হয়েছে। হয়তো তা-ই হবে। কিন্তু F117 বিমানটি যখন মানুষের সামনে আসে, তখন এর কার্যকারিতা দেখে অবাক হয়েছিলো অনেকেই। সবাই আরো অবাক হয়, যখন শুনতে পারে যে এই বিমানটি আরো প্রায় ২২ বছর আগে তৈরী হয়ে গিয়েছিলো ‘এরিয়া ৫১’ এর ভেতরে। এমনটা হতেই পারে, দূরের কোনো গ্রহ থেকে হয়তো একদিন কোনো UFO আসবে, যা দেখে বিস্মিত হবে সবাই। আর এমনও হতে পারে যে, ‘ এরিয়া ৫১ ’ এর ভেতর হয়তো সেই UFO এতদিনে বানিয়ে ফেলা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন