শিশুর অহেতুক বায়না…

অদ্ভুত এক অভ্যাস আরিয়ানের। কারো কাছে কোন খেলনা দেখলেই তা কিনে দেওয়ার জন্য জেদ করে। সেটা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত যেন তার শান্তি হয়না। প্রায়ই স্কুল থেকে ফিরে মায়ের কাছে নানা রকম বায়না নিয়ে হাজির হয়। ক্লাসের কারো কাছে নতুন কিছু দেখলে আবদার করে পরের দিনই তা কিনে দেওয়ার জন্য।

শুধু তাই না আরিয়ানকে নিয়ে কেনাকাটা করতে গেলেও একই সমস্যায় পড়েন বাবা আনোয়ার হোসেন ও মা রুবিনা ইসলাম। তারা জানান, একবার ওর পছন্দমত খেলনা না কিনে দেওয়ার জন্য মার্কেটে চিৎকার-চেঁচামেচি-কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত সেটা কিনে দেওয়াতেই সমাধান মেলে তার।

শিশুদের এ ধরণের অহেতুক 'বায়না' ধরা সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক মেহজাবিন হক চ্যাম্পস টুয়েন্টি ওয়ানকে বলেন, 'বাচ্চাদের বায়না করা স্বাভাবিক একটি বিষয়। তবে সবসময় বায়না করা ভালো নয়। বিশেষ করে সাধ্যের বাইরের বায়না করা বাবা-মা ও অভিভাবকদের জন্যও বিব্রতকর।

বায়না করা ভালো আচরণ নয়। তাই ভালো আচরণ বলতে কী বোঝায় সেটা আলাদাভাবে শিশুদের বোঝাতে হবে। বাচ্চারাও বোঝে। যদি তাদের মত করে তাদেরকে বোঝানো যায় তাহলে ধীরে ধীরে সে তার বায়না ধরা থেকে সরে আসবে। একটা সময় দেখা যাবে কোনো কিছু চাইবার আগে সে তার মা অথবা বাবাকে জিজ্ঞেস করবে সেটা তারা কিনে দিতে পারবে কিনা?'

তিনি আরো বলেন, 'অনেক সময় কিশোর-কিশোরীরাও নানা বিষয়ে আবদার করে। কিশোর ছেলেটি মোটর সাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য বায়না করে, কিশোরী মেয়েটি হয়ত দামি কোনো মোবাইলের জন্য বায়না করতে পারে। তখন তাদের সবার আগে নিজেদের সাধ্যের কথাটি বুঝিয়ে বলতে হবে। সে যে জিনিসটি চাইছে তা যে পরেও কিনে দেওয়া যাবে সে বিষয়ে বোঝাতে হবে। এখন দিলে সেটি তার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে তা সহজ করে বুঝিয়ে বলতে হবে।'

বাচ্চাদের এমন সব অদ্ভুত ও বাহারি আবদারের সঙ্গে প্রায় সব বাবা-মাই কিন্তু কমবেশি পরিচিত। কখনো কখনো এমন বায়নার কারণে বাবা-মায়েদের বিড়ম্ভনার শিকারও হতে হয়। বায়না থেকে ছেলেমেয়েদের সরিয়ে আনতে কিছু বিষয় মেনে চলুন। দেখবেন একসময় সন্তানের অহেতুক আবদারের মুখোমুখি হতে হবে না ।

কী করবেন
০ বাড়ির বড়দের বাচ্চাদের ভালো আচরণ শেখানোর জন্য সব বিষয়ে একমত হওয়া জরুরি। একই শিশুকে কেউ কোনো বিষয়ে নিষেধ করছে আবার অন্য কেউ সে বিষয়টিতে উৎসাহ দিলে সে দ্বিধাদন্ধে ভোগে। কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিক নয় তা বুঝে উঠতে পারে না।

০ বাচ্চা যখনই আপনার অপছন্দের কাজ করবে তখনই তাকে জোর গলায় নিষেধ করুন। সে ওই কাজ থেকে বিরত থাকলে সঙ্গে সঙ্গেই স্বাভাবিক আচরণ শুরু করুন। এতে প্রথম প্রথম তারা বায়না করলেও পরে আস্তে আস্তে বুঝে যাবে যে চাইলেও সে সবকিছু পাবে না।

০ বাচ্চারা কান্না শুরু করলে অনেকেই তাদের কান্না থামানার জন্য পছন্দের জিনিস দিয়ে ভোলান। এটা হয়ত ওই পরিস্থিতির জন্য স্বাভাবিক। কিন্তু পরে সে আবার বায়না করলে আগের মত না বলুন। তাহলে সে নিজ থেকেই বুঝে নিবে চাইলেই সব সময় সে সব পাবে না।

০ বাচ্চাদের বয়স দুই পেরুলেই ওদের নিষেধের কারণটা সহজ করে বুঝিয়ে বলুন। কেননা ছোট ছেলেমেয়েরাও যুক্তি বোঝে। এতে ওরা নিয়মিত বায়না থেকে সরে আসবে।

০ ছেলেবেলা থেকেই বাচ্চাদের মধ্যে সু-অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। তার মানে এই নয় নিয়মিত খাওয়া আর ঘুমানো। সহপাঠীদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা, ভাইবোনের সঙ্গে খেলনা ভাগাভাগি করতে শেখা, বন্ধুদের সঙ্গে ভালাে আচরণ করা এসব বিষয় শেখান। এসব কাজ করলে নিজ থেকেই উৎসাহ দিন। 

০ ছেলেবেলায় খুব স্বাভাবিকভাবেই বাচ্চাদের বিশেষ কিছু জিনিস যেমন  গাড়ি, এরোপ্লেন, ট্রেন, পুতুল বা নানা ধরণের খেলনার প্রতি আলাদা আকর্ষণ থাকে। তাই শপিংমলে বা কারো বাড়িতে গেলে সেগুলো নেওয়ার জন্য বায়না করে। এ সময় চেষ্টা করুন ওর মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে। এটা এখন না নিয়ে পরেও যে নেওয়া যাবে তা বোঝানোর চেষ্টা করুন।

০ ছুটির দিনগুলোতে বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে বের হোন। ওদের আনন্দের জগত বাড়লে কোনো একটা জিনিস কেনার বায়না থেকে এমনিতেই সে সরে আসবে।

ছবি : ইমিতয়াজ আহমেদ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন