শীতের সবজি

শীতকাল মানেই বিভিন্ন ধরণের রঙিন তাজা শাক-সব্জির সমাহার। যা আমাদের দৃষ্টিকে করে মুদ্ধ। মনকে করে আনন্দিত। শরীরকে করে সজীব, সুস্থ ও রোগব্যাধি মুক্ত। চলুন জেনে নেয়া যাক শীতের সবজি সর্ম্পকিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-

সবজিগুলো উপকারী
শীতকালে বিভিন্ন রঙিন যেমন-হলুদ, কমলা, সাদা, লাল, বেগুনী ও সবুজ বর্ণের বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজি প্রচৃুর পরিমানে পাওয়া যায়। এই সময়ে প্রাপ্ত তাজা যে কোন সবজিই শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বিশেষ করে গাজর, মটরশুঁটি, বীট, টমাটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, সিম, শালগম, লাউ, বিভিন্ন ধরণের শাক-পাতা ইত্যাদি।

এই সবজিগুলো থেকে প্রচুর পরিমানে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও মিনারেলস পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রচুর পরিমানে খাদ্য অাঁশ বা ডায়াটারি ফাইবার, বিভিন্ন ধরনের পিগমেন্টস, ফাইটোনিউট্র্রিয়েন্ট এবং এন্টি-অক্সিডেন্ট পওয়া যায়। কোন কোন সব্জি যেমন- মটরশুঁটি ও বিচি সহ শিম থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমানে প্রোটিনও পাওয়া যায়।

শিশুদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকাতে বিভিন্ন ধরণের তাজা রঙিন সবজি ও শাক-পাতা থাকা উচিত। বিশেষ করে গাজর, শিম, লাউ, শালগম, মটরশুঁটি, টমাটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বীট, মূলা, বিভিন্ন ধরণের শাক-পাতা ইত্যাদি। এতে করে বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেলস ও ফাইবারের ঘাটতি দুর হবে। বিভিন্ন ধরনের এন্টি-অক্সিডেন্ট ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট-এর উপকারিতাগুলো পাওয়া যাবে।

পুষ্টিগুন নষ্টের কারণ :

বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজি আমরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে রান্না করে খাই। পুষ্টিগুন অটুট রেখে রান্না করতে হলে প্রথমে জানতে হবে কিভাবে পুষ্টি উপাদানের অপচয় ঘটে বা পুষ্টিগুন নষ্টের কারণ কী?

০ শাক-সবজি কাটার পর ধুলে এতে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলসগুলো পানির সঙ্গে ধুয়ে যায় ফলে পুষ্টিগুনও কমে যায়।

০ রান্নার সময় দীর্ঘ সময় উচ্চ তাপে রান্না করলে পুষ্টি উপাদানের অপচয় ঘটে।

০ পাত্রের ঢাকনা খুলে রান্না করলেও পুষ্টিমূল্য কমে যায়।

০ শাক-সবজি খুব বেশি সিদ্ধ করলেও পুষ্টিগুন কমে যায়।

০ রান্না করা শাক-সবজি বার বার জ্বাল দিলে স্বাদ ও পুষ্টিমূল্য উভয়ই কমে যায়।

০ রান্না করার পর দীর্ঘ সময় রেখে দিলেও পুষ্টিগুন কমে যায়।

পুষ্টিগুণ ঠিক রেখে রান্নার উপায়

যে কোন শাক-সবজি খুব বেশি সিদ্ধ করলে বা অধিক তাপে অনেকক্ষন সময় ধরে রান্না করলে অথবা রান্না করা সব্জি বার বার জ্বাল দিলে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়। পুষ্টিগুন অটুট রাখার জন্য বা সর্বোচ্চ পরিমানে পাওয়ার জন্য শাক-সবজি কাটার আগেই ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং কাটার পর শাক-সবজি ধোয়া ঠিক হবে না। কাটার পর দীর্ঘ সময় আলো-বাতাসের সংস্পর্শে থাকলে পুষ্টিগুন কমে যায়। তাই শাক-সবজি কাটার পর যত দ্রুত সম্ভব পাত্রের ঢাকনা দিয়ে অল্প সময়ে রান্না করতে হবে। এছাড়া শাক-সবজি খুব বেশি সিদ্ধ না করাই ভালো। রান্নার পর বারবার জ্বাল না দিয়ে দ্রুত খেয়ে ফেলা উচিত।

শিশুকে কীভাবে খাওয়াবেন

মায়েরা শীতের এ সময়ের বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজি দিয়ে তৈরি মুখরোচক বিভিন্ন ধরণের খাবার শিশুদের খাওয়াতে পারেন। যেমন: সবজি-পাকোড়া, সবজি-চিকেন সুপ, সবজি-কাটলেট, ডিম-সব্জির চপ, বিভিন্ন ধরনের ডাল-শাকের বড়া, মিশ্রিত সবজির নিরামিষ বা ঘন্ট, সবজি-পরোটা, সবজি-পিজ্জা, সবজি-সালাদ, সবজি-নুডুলস, মাছ বা মাংস দিয়ে রান্না সবজির কারি ইত্যাদি।

কিছু কিছু সব্জি কাঁচাই খাওয়া যায়, যেমন- গাজর, শশা ইত্যাদি। খাওয়ার আগে সবজি পানিতে কিছুক্ষন ভিজিয়ে রেখে খুব ভালো করে ধুয়ে ময়লা পরিষ্কার করে নিতে হবে। এর পর উপরের পাতলা খোসা ছিলে বা চেছে ফেলে তারপর কেটে বা সালাদ করে খাওয়া যায়। মনে রাখতে হবে, শরীর সুস্থ্য রাখতে হলে শিশুকাল থেকেই পর্যাপ্ত পরিমানে বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে এবং প্রতিদিনের খাদ্য তালিকাতে অবশ্যই থাকতে হবে।

লেখক : সৈয়দা সালিহা সালিহীন সুলতানা
সহযোগী অধ্যাপক, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন