সঙ্গীতের রকমফেরঃ ফোক সঙ্গীত

সঙ্গীতের রয়েছে নানা ধরণ, নানা স্বাদ। মানুষের ভিন্ন ভিন্ন পছন্দের কারণে গানের ধরণও বৈচিত্র্যময় হয়। আবার মনের অবস্থার উপরও মানুষের গানের পছন্দ নির্ভর করে। তাই ফোক, রক, মেটাল, পপ, জ্যাজ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের গানের জন্ম হয়েছে। ভিন্ন রকমের কথা, সুর, তাল, বাদ্যযন্ত্র দিয়ে এসব গানে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। এরকম বিভিন্ন ঘরানার গান সম্পর্কে জানতেই আমাদের এই আয়োজন। আজকে জানবো ফোক গান নিয়ে।

 

কোন একটি দেশ, জাতি বা অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীতকে ফোক সঙ্গীত বলা হয়ে থাকে। যদিও ‘ফোক’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ১৯ শতকে তবে তার অনেক আগে থেকেই ফোক গানের চর্চা চলে আসছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। অনেকে ফোক গানকে ওয়ার্ল্ড মিউজিকও বলে থাকেন।

সাধারণত কোন একটি অঞ্চলের নিজস্ব ঢঙে, সুর ও সঙ্গীত ব্যবহার করে, সে অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে এবং গানের কথায় সে অঞ্চলের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে ফোক গানের সৃষ্টি করা হয়। তবে বহুকাল ধরে এসব ফোক গান মানুষের মুখে মুখে চলে আসছে বলে এসব গানের কথা, সুর ও সঙ্গীতে বিভিন্নরকম পরিবর্তন ঘটতে দেখা যায়।

ফোক সঙ্গীতের কিছু বৈশিষ্ট্যঃ

  • ফোক সঙ্গীত মানুষের মুখে মুখে পরিবর্তিত হয়। বহুকাল আগের এই গানগুলো গায়কেরা লিখে রাখতেন না বা রেকর্ড করে রাখতেন না। তারা গানগুলো স্মরণ করে রাখতেন। এর ফলে গানে প্রায়ই ভিন্নতা দেখা যেত।
  • কোন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের বা সংস্কৃতির ফোক গান নির্দিষ্ট বৈশিষ্টের হয়ে থাকে এবং অঞ্চলভেদে এদের বৈশিষ্ট্যও ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন ভারতীয় অঞ্চলের ফোক গান এবং ইউরোপীয় অঞ্চলের ফোক গান সম্পূর্ণ ভিন্ন।
  • বিশেষ দিন, ঘটনা, ধর্মীয় উৎসব, ইতিহাস ইত্যাদিকে বিষয়বস্তু করে এসব ফোক গান রচনা করা হয়। যেমনঃ বাংলাদেশে নৌকা বাইচ বা নবান্নের উৎসবের জন্য বা বিয়ের উৎসবে গাওয়ার জন্য অনেক ফোক গান রয়েছে। আবার ঈদ এবং পূজার জন্যও রয়েছে অনেক গান। আমাদের দেশের ইতিহাস ফুটে উঠেছে অনেক ফোক গানে।
  • বংশ পরম্পরায় এবং যুগ যুগ ধরে এসব গান চলতে থাকে।

বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে ফোক সঙ্গীতে বড় কিছু পরিবর্তন আসতে শুরু করে। ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের বদলে গানগুলোতে আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার দেখা যায়। সেই সাথে গানের সুরেও আসতে শুরু করে আধুনিকতা। মানুষের বর্তমান রুচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সময়োপযোগী করে তৈরি করা হচ্ছে ফোক গান। এদেরকে বলা হচ্ছে ‘ফিউশন’। আধুনিক বাদ্যযন্ত্র এবং সুরে পুরানো গানগুলোকে নতুন করে তৈরি করাকেই ফিউশন বলা হয়। ফিউশন করা এসব ফোক গানেরও আবার প্রকারভেদ রয়েছে। যেমনঃ ফোক রক, ফোক মেটাল, ফোক পাঙ্ক, ইলেকট্রিক ফোক ইত্যাদি।

আমাদের দেশে জারি, সারি, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, মুর্শিদী, গম্ভীরাসহ আরও নানা ধরণের ফোক গানের সম্ভার রয়েছে। লালন সাই, হাসন রাজা, শাহ আব্দুল করিম, আব্বাসউদ্দিন আহমদ, আব্দুল আলীম, মমতাজ এরা নানা সময়ে নানা ধরণের ফোক সঙ্গীত সৃষ্টি করে এবং গেয়ে জনপ্রিয় হয়েছেন। বর্তমান সময়ে লালন ব্যান্ড, জলের গান, অর্ণবসহ অনেক শিল্পী রয়েছেন যারা ফোক ফিউশন গান করে থাকেন। এছাড়াও আমেরিকাতে বব ডিলান, বব গিবসন, জন ডেনভারের মত শিল্পীরা ফোক গানের জন্য বিখ্যাত।

 

জন ডেনভারের গাওয়া একটি জনপ্রিয় ফোক গান শুনতে এখানে ক্লিক করুন

লালনের জনপ্রিয় বাংলা ফোক ফিউশন গান শুনতে এখানে ক্লিক করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন