সঙ্গীতের রকমফেরঃ রক সঙ্গীত

সঙ্গীতের রয়েছে নানা ধরণ, নানা স্বাদ। মানুষের ভিন্ন ভিন্ন পছন্দের কারণে গানের ধরণও বৈচিত্র্যময় হয়। আবার মনের অবস্থার উপরও মানুষের গানের পছন্দ নির্ভর করে। তাই ফোক, রক, মেটাল, পপ, জ্যাজ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের গানের জন্ম হয়েছে। ভিন্ন রকমের কথা, সুর, তাল, বাদ্যযন্ত্র দিয়ে এসব গানে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। এরকম বিভিন্ন ঘরানার গান সম্পর্কে জানতেই আমাদের এই আয়োজন। আজকে জানবো রক গান নিয়ে।

 

১৯৫০ এর দশকে আমেরিকার রক এন্ড রোল মিউজিক থেকে নতুন এক ধরণের গানের উৎপত্তি হয়। রক মিউজিক নামের এ সঙ্গীত খুব দ্রুতই সবার মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ধীরে ধীরে ১৯৬০ সালের দিকে এবং এরপরে এই সঙ্গীতের আরও নতুন ধরণ সৃষ্টি হয়।

রক এন্ড রোল থেকে উদ্ভব ঘটলেও রক গানের উপর ব্লুজ, রিদম এন্ড ব্লুজ এবং কান্ট্রি মিউজিকের প্রভাব বেশ ভালভাবেই দেখা যায়। এছাড়াও ফোক সংগীত, ক্ল্যাসিক্যাল সংগীত এবং জ্যাজ সঙ্গীতেরও প্রভাব রয়েছে এর উপর।

রক মিউজিকের সুর, তাল ও সঙ্গীত তৈরি হয় ইলেকট্রিক গিটার, ইলেকট্রিক বেজ গিটার ও ড্রামসের মাধ্যমে। সেই সাথে অ্যাকোস্টিক গিটার, কি-বোর্ডসহ সাক্সোফোন, হারমোনিকা ও বিভিন্ন ধরণের দেশীয় বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে।  এই গানের সবচেয়ে শুদ্ধ রূপে থাকে তিনটি কর্ড, একটি অকটেভ, গভীর ব্যাক বিট ও স্পর্শকরার মতো মেলোডি।

১৯৬০ এবং ১৯৭০ -এর দশকে রক সংগীত বিবর্তিত হয়ে এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরণের সঙ্গীতের সাথে সংমিস্রিত হয়ে অনেক উপধারার সৃষ্টি করেছে। যখন এটা ফোক সংগীতের সাথে মিশেছে তা হয়েছে ফোক রক, যখন তা মিশিয়ে ব্লুজের সাথে তা পরিণত হয়েছে ব্লুজ রক-এ এবং জ্যাজের সাথে জ্যাজ রক ফিউশন। ১৯৭০-এর দশকে রক সংগীত অনুপ্রাণিত হয়েছে সোল, পাঙ্ক এবং ল্যাটিন সঙ্গীত থেকে। এসময় রক সংগীতের অনেকগুলো উপধারা যেমন গ্লাম রক, সফট রক, হেভি মেটাল, হার্ডরক,  প্রোগ্রেসিভ রক এবং পাঙ্ক রক সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৮০-এর দশকে রক সংগীতের উপধারাগুলো হলো নিউ ওয়েভ, হার্ডকোর পাঙ্ক এবং অল্টারনেটিভ রক। আরও পড়ে ১৯৯০-এর দশকে গ্রুঞ্জ, বিটপপ , ইন্ডি রক এবং ন্যু মেটাল নামে আরও নতুন কিছু রক উপধারা জন্ম নিয়েছে।

সলো শিল্পী হিসেবে অনেকেই রক গান গেয়ে থাকলেও বেশিরভাগ জনপ্রিয় রক গানের জন্ম হয়েছে রক ব্যান্ড থেকে। একটি সঙ্গীত দল যারা রক গানের চর্চা করে তাদেরকেই রক ব্যান্ড বলা হয়ে থাকে। এই ব্যান্ডে সাধারণত একজন লিড গিটারিস্ট, একজন ড্রামার, একজন মূল ভোকাল এবং একজন বেজ গিটারিস্ট থাকে। মাঝে মাঝে কি-বোর্ড বা অন্য কোন বাদ্যযন্ত্রশিল্পীর ব্যবহারও দেখা যায়।

অন্যান্য ধারার গানের মত রক গানের বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট বা সংকীর্ণ নয়। প্রেম, বিষাদ, সমাজের নানা সমস্যা, জীবনধারা, ঐতিহ্য এরকম অনেক কিছুই প্রকাশ পায় রক গানের কথায়।

রক গানের উৎপত্তির পর থেকেই অনেক সঙ্গীতশিল্পী এবং ব্যান্ড রক গান গেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। এলভিস প্রেসলি, এরিক ক্ল্যাপটন, বব ডিলান, অস্টিন প্লেইন এরা রক শিল্পী। রক ব্যান্ডের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে পিঙ্ক ফ্লয়েড, গানস এন্ড রোজেজ, এসিডিসি, বিটলস, লিংকিং পার্ক, কোল্ডপ্লে এবং আরও অসংখ্য ব্যান্ড।

বাংলাদেশে জেমস, আইয়ুব বাচ্চু অত্যন্ত জনপ্রিয় রক শিল্পী। রক ব্যান্ডের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে ওয়ারফেজ, অর্থহীন, আর্টসেল, আর্বোভাইরাস, নেমেসিসসহ আরও অনেক ব্যান্ড।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন