স্কুলের প্রথম দিনটা…

সন্তানের প্রথম স্কুল শুরু হচ্ছে নতুন বছরে। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে কিছুটা দুঃচিন্তা হতেই পারে। এই প্রথম বাসার বাইরে সময় কাটাবেও।

মিশতে শুরু করবে নতুন ছেলেমেয়ের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে চলতে গিয়ে, একই পড়তে গিয়ে অসুবিধায় পড়বে না তো আদরের সোনামণিটা? অার প্রথমিদন ক্লাসে বসিয়ে দেয়ার পর যদি কান্নাকাটি করে।

বাচ্চার প্রথম স্কুল নিয়ে বাবা মায়ের এমন চিন্তা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। বাচ্চার প্রথম স্কুল যাওয়ার বিষয়ে করণীয় কী, এ বিষয়ে অভিভাবকদের কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মেহজাবিন হক।

০ স্কুলে যাওয়ার আগে থেকেই স্কুল সম্পর্কে ইতিবাচক ধারনা বাচ্চার মধ্যে গড়ে তুলুন। বাচ্চাদেরকে আগে থেকেই স্কুল সম্পর্কে মজার মজার গল্প বলে স্কুলের ব্যাপারে তাদের উৎসাহী করে তুলুন।

০ বাসায় দুজন মিলে স্টুডেন্ট-টিচার খেলতে পারেন। আপনি প্রথম টিচার আর ও স্টুডেন্ট। আবার ও টিচার, আপনি স্টুডেন্ট হোন। এভাবে ক্লাসে টিচার ঢুকলে উঠে দাঁড়ানো, ক্লাস থেকে বাইরে বা ভেতরে ঢোকার সময় অনুমতি নেওয়া এরকম কিছু সহবত আগে থেকেই শিখিয়ে দিন।

০ স্কুলের ব্যাগ, পানির বোতল, টিফিন বক্স এবং বইপত্র কেনার সময় অবশ্যই বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন। এতে স্কুল সম্পর্কে সে কৌতুহলি হয়ে ওঠবে।

০ ক্লাস রোল, সেকশন, নিজের নাম আগে থেকেই শিখিয়ে দিন। স্কুল শুরু হওয়ার আগে বাসার নম্বর, টেলিফোন ও মোবাইল নম্বর খুব ভালো করে শিখিয়ে দিন। যাতে প্রয়োজনের সময় কাজে লাগে।

০ সম্ভব হলে হলে ক্লাস শুরুর আগে একদিন ওকে স্কুল, স্কুলের খেলার মাঠ ইত্যাদি ঘুরিয়ে আনতে পারেন।

০ স্কুলের প্রথম দিন জামা জুতো ওকে নিজেই পরতে দিন। আগের রাতে বইয়ের ব্যাগ গুছিয়ে রেখে দিন। স্কুলের আইডি কার্ড ইউনিফর্মের পকেটে লাগিয়ে দিন।

০ প্রথম প্রথম বাচ্চারা স্কুলে একটু ভয় পেতেই পারে। তাই প্রথম ক’দিন সারাটা দিন স্কুলেই থাকুন। পরে আস্তে আস্তে কমিয়ে দিন। সপ্তাহ শেষে ক্লাস টিচারের সঙ্গে অবশ্যই একবার কথা বলে নিন।

০ স্কুলে যাওয়ার সময় অনেক বাচ্চাই প্রথম প্রথম একটু ভয় পায়। তাই আগে থেকে স্কুল সম্পর্কে বাচ্চার মনে কোনো বিভীষিকা তৈরি হয় এমন কাজ করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন।

০ সন্তান স্কুলে মারপিটে হেরে গেলে নিজেকে দুর্বল মনে করে বা অন্য কোনো কারণে লজ্জা পেলে স্কুলের প্রতি তাদের অনীহা সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় বাবা মাকেও এসব ব্যাপারে এড়িয়ে যায়। তাই গল্পচ্ছলে এসব ব্যাপারে জেনে নিন। বিষয়টা সহজ করে বুঝিয়ে বলুন।

০ স্কুলে কোনো বন্ধুর কাছে নতুন দামী কিছু দেখলে সে ব্যাপারে বাচ্চারা অনেক সময় আগ্রহী হয়ে ওঠে। ওকে এ ব্যাপারেও বুঝিয়ে বলুন, সব সময় দামী জিনিস মানেই সুন্দর জিনিস নয়।

০ বাচ্চার পড়ার সময় খেয়াল রাখুন যাতে সে কোনো কিছু শেখার ব্যাপারটা উপভোগ করে।

০ বাচ্চাকে পড়ে দেখিয়ে দেওয়ার সময় পড়ার সঙ্গে বাইরের জগতের সঙ্গে মিল রেখে কোনো কনটেন্ট বুঝিয়ে দিলে তারা পড়তেও আনন্দ পাবে। এতে করে নিজেই পড়ার দিকে আস্তে আস্তে মনোযোগী হয়ে উঠবে।

০ পড়াশোনাকে ওর কাছে সহজ করে তোলার চেষ্টা করুন। যেমন বাসার নম্বর, টেলিফোন নম্বর, নিজের খেলনার নাম যেভাবে মনে রাখে সেভাবে ওর সাধারণ জ্ঞান বাড়াতে পারেন।

০ অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চা পড়তে ভালোবাসে কিন্তু শিখতে চায় না তখন জোর না করে ছোট ছোট কিছু অভ্যাসের মাধ্যমে শেখার প্রতি আগ্রহী করে তুলুন। যেমন, দোকানে আইসক্রিম কেনার সময় ফেরত টাকাটা হিসেব করে বের করতে বলুন ওকে। কিংবা দুইটা চকলেটের দাম ১০ টাকা হলে চারটার দাম কত এমন সহজ হিসেব ওকে বের করতে বলুন।

০ অন্যের থেকে ভালো করতে হবে এমন ধারনা বাচ্চার মনে জন্ম হতে না দেওয়াই ভালো। ওর ভেতর এখনই অসুস্থ প্রতিযোগিতার বিষয়টা জন্ম হতে দিবেন না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন