হাতির টুথপেস্ট !!

বিজ্ঞান নিয়ে অনেকের মনেই ভয়ভীতি থাকে। জটিল সব সূত্র, গাণিতিক ব্যাখ্যা আর কাঠখোট্টা সব শব্দ শুনলেই কেমন যেন ভয় ভয় লাগে। জটিল সব ঘটনাকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে সহজভাবে তুলে ধরার কাজটিই করছে সায়েন্স রকস টিভি অনুষ্ঠানটি। প্রতি সপ্তাহে ২টি করে ৫২ সপ্তাহে মোট ১০৪টি মজার মজার সায়েন্স এক্সপেরিমেন্ট দেখানো হবে তোমাদের আর বলে দেয়া হবে সেটা কেন হলো, কিভাবে হলো। আজ এক ঝলক জেনে নেয়া যাক সায়েন্স রকস টিভি অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে দেখানো ‘হাতির টুথপেস্ট’ পরীক্ষাটি।

ঘুম থেকে উঠেই চোখ মুছতে মুছতে আমরা যে জিনিসটা হাতে নেই তা হলো টুথব্রাশ আর টুথপেস্ট। হাতির দাঁতের সাইজের কথা একবার চিন্তা করো তো, তাদের দাঁত যদি ব্রাশ করতে হয় কি পরিমাণ টুথপেস্ট লাগবে; অবশ্যই অনেক বেশি !!

তোমাদের আজ এমন এক পরীক্ষার কথা বলবো যা পড়ে মনে হবে রাজার হাতির জন্য পেস্ট তৈরি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে যদিও জিনিসটা পেস্ট নয় তবে দেখতে টুথপেস্ট এর মতো বলে মজা করে এর নাম দেওয়া হয় হাতির টুথপেস্ট বা Elephant Toothpaste।

কি কি লাগবেঃ
হাতির টুথপেস্ট তৈরি করা হয় একটি রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে। তাই, এক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজনীয় সতর্কতা ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের দরকার ১০-২০% হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, ইস্ট (এক ধরণের ছত্রাক যা মূলত পাউরুটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়), লিকুইড সাবান, লাল বা নীল খাবার রঙ, হালকা গরম পানি, চা চামচ এবং স্বচ্ছ কাঁচের জার বা ফ্লাস্ক। যেহেতু রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে, তাই এই পরীক্ষায় হাতে গ্লাভস ও চোখে গগলস পড়তে আমরা যেন ভুলে না যায় ও প্রয়োজন হলে বড়দের সাহায্য নিবো এই পরীক্ষায়।

কিভাবে করবোঃ
প্রথমে স্বচ্ছ কাঁচের জার বা ফ্লাস্কে কিছু পরিমাণের হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড নিবো। আনুমানিকভাবে বললে এক কাপ পরিমাণ হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড নিবো আমরা। এরপর কিছু পরিমাণে লিকুইড সাবান ভালমতো মেশাবো হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের সাথে। লাল বা নীল খাবার রঙ দিয়ে জারের পানিটাকে রঙিন করে নেই। তিনটা উপাদান মিলে জারে একটা রঙিন মিশ্রণ তৈরি হলো। এবার, গরম পানিতে ইস্ট ঢেলে আরেকটি মিশ্রন তৈরি করি ছোট বাটিতে বা জারে, এক্ষেত্রে তিন চা চামচ গরম পানির সাথে এক চা চামচ ইস্ট এই অনুপাতে মেশাবো। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাতির টুথপেস্ট তৈরি হতে যাচ্ছে !! এবার, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, লিকুইড সাবান ও খাবার রঙের মিশ্রিত জারে তরল ইস্ট ঢেলে দিয়ে একটু দূরে সরে যাই; দেখো কি ঘটছে ? জারের তরল মিশ্রনটি ফুলে ফেঁপে উঠে জারের মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়ছে যেন টুথপেস্টের টিউব থেকে পেস্ট বেরিয়ে আসছে। সাইজ দেখে মনে হচ্ছে সত্যিই হাতির টুথপেস্ট !!

কেন হলোঃ
আমরা জানি, সাবান ফেনার সৃষ্টি করতে পারে যা আমরা এই পরীক্ষায় পরিলক্ষিত করেছি। তবে এই পরীক্ষার মূল রাসায়নিক ব্যাপারটা চোখে পড়ে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড এর সাথে ইস্টের মিশ্রণের পরে যেখানে ইস্ট প্রভাবক বা Catalyst হিসেবে কাজ করেছে। ভাবছো Catalyst আবার কি?? কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় প্রভাবক এমন একটি পদার্থ যা কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে না কিন্তু রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উপস্থিত থেকে বিক্রিয়ার গতিকে বৃদ্ধি বা হ্রাস করে। এই পরীক্ষায় ইস্ট হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড থেকে দ্রুত গতিতে অক্সিজেন মুক্ত করেছে। আর এই অক্সিজেন জার থেকে বের হওয়ার সময় সাবান এবং খাবার রঙ থাকার কারণে রঙিন ফোম তৈরি করেছে। তবে আমরা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের ঘনমাত্রা পরিবর্তন করে আমরা চাইলে ফোমের পরিমাণ আরও বাড়াতে পারি; এক্ষেত্রে আমাদের আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

তোমার স্কুলের সাইন্স ফেয়ারে তোমরা চাইলে করে দেখাতে পারো মজার এই  “হাতির টুথপেস্ট ” পরীক্ষাটি। তবে এই পরীক্ষাটি করার সময় অবশ্যই মনে রাখতে হবে Safety First.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন