ভালো পর্যটকের ১২ গুন

ঘুরতে কার না ভালো লাগে। নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ, নতুন খাবার। আহ্! তাইতো একটু ছুটি পেলেই আমরা ছুটে যাই ঘর থেকে দূরে, কয়েকটা দিন কাটিয়ে আসি মনের মত করে।

অনেকেই আছেন যারা ঘুরতে খুবই পছন্দ করেন এবং বেশ ঘনঘন ঘুরতে যান। কিন্তু আপনি প্রচুর ভ্রমণ করেন তার মানে এই নয় যে আপনি একজন ভালো পর্যটক।

কেননা একজন ভালো পর্যটক হতে হলে আপনার কিছু গুনাবলি থাকা জরুরি। চলুন জেনে নেয়া যাক ভালো পর্যটকের হওয়ার উপায়গুলাে-

১. পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়া
ভ্রমণের সময় সবকিছু যে আপনার অনুকূলে থাকবে তা কিন্তু নয়। আপনার বাস বা ট্রেন আসতে দেরি হতে পারে, বাসে বা হোটেলে আপনার পাশের জন হয়তো বিরক্তিকর হতে পারে কিন্তু এসব গায়ে মাখাবেন না। বরং সহজভাবে এগুলো মেনে নিন এবং উপভোগ করার চেষ্টা করুন।

আরো ভালো হয় যদি আপনি প্রতিকূল অবস্থার ইতিবাচক দিকটা খুঁজে বের করতে পারেন। কোন রেস্টুরেন্টে হয়তো আপনি পছন্দের খাবারটা পেলেন না। তাতে কি, নতুন একটা খাবারের স্বাদ নেয়ার চেষ্টা করুন।

২. নতুন ভাষা শেখা
নতুন কোন দেশ বা শহরে বেড়াতে গেলে সেখানকার ভাষা জানার চেষ্টা করুন। এতে আপনার ভাষার ভাণ্ডার সে শুধু সমৃদ্ধ হবে তা-ই নয়, সেই সাথে আপনি যে সেখানকার বাসিন্দাদের সম্পর্কে আগ্রহী এটাও আপনি তাদের কাছে প্রকাশ করতে পারবেন। এমনকি আপনি যদি ‘হ্যালো’ বা ‘ধন্যবাদ’ এরকম কয়েকটা শব্দ শেখেন তাও ভালো।

আমাদের দেশে পাহাড়ে ঘুরতে গেলে পাহাড়ি মানুষের ভাষার কিছু শব্দও শেখা যেতে পারে। আরও ভালো হয় যদি আপনি শারীরিক ভঙ্গি বা আকার-ইঙ্গিতের মাধ্যমে আপনার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারেন।

হয়তো আপনার কাছে শব্দ মনে রাখাটা কঠিন লাগতে পারে, সেক্ষেত্রে এই উপায় আপনার অনেকটা কাজে দেবে। মাঝেমধ্যে একটা হাসির মাধ্যমেও আপনি অনেক কিছু করে ফেলতে পারবেন।

৩. হাতঘড়ি ব্যবহার করুন
ঘুরতে গেলে আপনাকে সময় বলে দেবে এমন একটা যন্ত্র অবশ্যই সাথে রাখুন। এতে আপনার ঘুরাঘুরিতে সময় নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। তবে মোবাইল ফোন বা এরকম কিছুর উপর নির্ভর করবেন না যেটার চার্জ চলে যেতে পারে।

ভালো হয় যদি আপনি সময় নিয়ে মাথাই না ঘামান। ট্রেন দেরি করতে পারে, বাস ছুটে যেতে পারে কিন্তু আপনার সময়ের যেন কোন অভাব না হয়।

৪. ভ্রমণবিষয়ক অ্যাপ ব্যবহার করা
আজকালকার স্মার্টফোনগুলোতে ভ্রমণবিষয়ক প্রচুর অ্যাপ পাওয়া যায় যেগুলো আপনার ভ্রমণ সহজ হতে সাহায্য করবে। এগুলো রাখুন আপনার ফোনে।

তবে আরও ভালো হয় যদি আপনার কোন অ্যাপের উপর নির্ভর করা না লাগে। যে কোনো সময়ই আপনার ফোন বা ট্যাবের চার্জ চলে যেতে পারে। তাই অ্যাপ ছাড়াও কীভাবে চলতে হয় সেটা শেখার চেষ্টা করুন।

৫. প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখুন
ঘুরতে গেলে কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখাটা একজন সচেতন পর্যটকের লক্ষণ। যে কোনো ধরণের দুর্ঘটনার জন্য প্রস্তুত থাকুন, সেটা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন। কিছু ব্যান্ডএইড বা ব্যান্ডেজ, জীবাণুনাশক লিকুইড, জ্বর, মাথাব্যাথা বা পেট খারাপের ওষুধ প্রয়োজনে কাজে আসতে পারে।

সবচেয়ে ভালো হয় যদি একটি ফার্স্টএইড কিট আপনার সাথে থাকে। ভ্রমণের জন্য ছোট কিছু কিট পাওয়া যায় যেগুলো সহজেই আপনার ব্যাকপ্যাকে এঁটে যাবে।

Luggage
ছবি : সংগৃহীত

৬. কিছু জিগ্যেস করতে ভয় পাবেন না
কোনদিকে যেতে হবে বা একটা জিনিস কোথায় পাওয়া যাবে এ ধরণের জিনিস জানতে সেখানকার স্থানীয়দের সাহায্য নিন। এসব ব্যাপার তাদের জিজ্ঞেস করতে সংকোচবোধ করবেন না।

হয়তো এর ফলে আপনি নতুন কিছু আবিষ্কার করে ফেলতে পারবেন অথবা কে জানে হয়তো একটা নতুন বন্ধুও হয়ে যেতে পারে আপনার।

যদি আপনার হারিয়ে যাওয়ার কোন ভয় না থাকে তবে আরো ভালো হয় । মাঝে মধ্যে হারিয়ে যাওয়াটাও অনেক আনন্দের। একবার হারিয়ে দেখতেই পারেন।

৭. ছোটখাটো ব্যাপারগুলো এড়িয়ে যান
সবকিছু সবসময় আপনার হাতে থাকবে না। চেষ্টা করুন তাই গুরুত্বহীন সমস্যাগুলো এড়িয়ে যেতে। হোটেলরুমে বিশ্রী গন্ধ বা গরম পানি নেই? তাতে কি, ম্যানেজ করে ফেলুন।  হ্যাঁ এটা ঠিক যে আপনার ব্যাগ বা মানিব্যাগ হারিয়ে গেলে আপনি বিরাট সমস্যায় পড়ে যাবেন। কিন্তু এতে হতাশ হয়ে পড়াটা আপনার জন্য কোন সুফল বয়ে আনবে না। বরং পরবর্তীতে কি করা যায় মাথা খাঁটিয়ে বের করার চেষ্টা করুন।

৮. সাথে পানির বোতল রাখুন
ঘুরতে গেলে সর্বক্ষণ একটা পানির বোতল সাথে রাখা খুব সাধারণ একটা ব্যাপার। এটা আপনাকে স্বাস্থ্যসম্মত পানির যোগান দেবে আর টাকাও বাঁচাবে।

আপনার পানির বোতলটিতে একটি ফিল্টার লাগানো থাকেলে ভালো । সবসময় যে হাতের কাছে বিশুদ্ধ খাবার পানি পাবেন তা কিন্তু নয়।

৯. যথাযথ পরিকল্পনা করুন, কিন্তু সবকিছুর জন্য নয়
ভ্রমনে গেলে সবাই একটি নির্দিষ্ট সময় হাতে নিয়ে যায়। চেষ্টা করে সে সময়ের মধ্যে যতটা বেশি ঘোরা যায়, সেভাবেই পরিকল্পনা করতে। কিন্তু সবকিছু পরিকল্পনার মধ্যে রাখবেন না। অপেক্ষা করুন অপ্রত্যাশিত কোন কিছুর জন্য।

যে কোনো পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজের পরিকল্পনা পরিবর্তনের বিষয়টি মাথায় রাখুন। যে কোনো কারণ বা ঘটনার ফলে আপনার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হতে পারে। সেটা নিয়ে চিন্তা না করে বরং পরিবর্তিত পরিকল্পনা যাতে আপনার ভ্রমণকে আনন্দদায়ক করতে পারে সে চেষ্টা করুন।

১০. কিছু দিয়ে আসার চেষ্টা করুন
ঘুরতে গেলে আপনি অবশ্যই নতুন কোন একটি কমিউনিটির দেখা পাবেন। সেখান থেকে অবশ্যই আপনি কিছু না কিছু পাবেন, সেটা জ্ঞানই হোক বা আনন্দ। তবে কিছুটা দিয়ে আসারও চেষ্টা করুন। সেটা হতে পারে অর্থ, স্বেচ্ছাসেবা এমনকি পরিচিত হতে পারাটাও অনেক।

যদি আপনি ফিরে এসে সেই কমিউনিটির সাহায্য করার জন্য যদি কিছু করা যেতে পারেন বলে মনে করেন তবে সেটা করার চেষ্টা করুন। আপনার নিজেরও এতে ভালো লাগবে।

১১. হালকা ব্যাগ বহন করুন
ভ্রমণের জন্য বহন করা সুবিধাজনক এমন জিনিসপত্র ব্যবহার করুন। এতে আপনার ভ্রমণ আনন্দদায়ক হবে। আরো ভালো হয় যদি আপনার একান্ত প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ছাড়া অন্য কিছু আর বহন না করেন।

১২. স্থানীয় প্রথা বা আচারকে সম্মান করুন
আপনি হয়তো আপনার নিজের মত আচরণ করতেই পছন্দ করেন অথবা ভ্রমণস্থলটির আচার সম্পর্কে আপনার কোন মাথাব্যাথা নেই, তারপরও চেষ্টা করুন সেখানকার প্রথা আর প্রচলিত রীতিকে সম্মান দিতে।

আমাদের উপমহাদেশে সালাম বা নমস্কার জানানো যেমন একটি স্বাভাবিক প্রথা তেমন স্বাভাবিক কোন কিছুর দ্বারাই সেটা চেষ্টা করতে পারেন, বিশেষত আপনি যদি কোন নির্দিষ্ট সমাজের মাঝে থাকেন।

আপনি স্থানীয় অভ্যাসগুলো রপ্ত করার চেষ্টা করেন। হয়তো সেটা খুব একটা কঠিন হবে না আপনার জন্য, কিন্তু উপকার বয়ে আনতে পারে অনেকভাবেই।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন