অনলাইনে ক্রয় বিক্রয়ে জালিয়াতি এবং ব্যক্তিগত তথ্য চুরি

কোন কোন সময় আমরা সহজাত জ্ঞান দ্বারা বুঝতে পারি কোনটা জালিয়াতির ফাঁদ, তবে অনেক সময় তথ্যের জঞ্জাল এড়াতে আমাদের কিছুটা সাহায্যের প্রয়োজন হয়। বিক্রয়কর্মীরা তাদের পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে খুবই পারদর্শী, কিন্তু অনলাইনে কেনাকাটা করা কতটা গ্রহণযোগ্য মাঝে মাঝে এটা পরিস্কার বোঝা যায় না। আমাদের এবং আমাদের সন্তানদেরকে অনলাইনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে হবে যা আমাদেরকে চুরি এবং অপচয় থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে। ছবি, ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার এবং ঠিকানার মতো ব্যক্তিগত তথ্যাবলি আমরা কোথায় এবং কখন শেয়ার করি তা জেনে সহজেই ব্যক্তিগত তথ্য চুরি অথবা ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার রোধ করা যায়।

গেইমিং
গেইমিং হলো বিনোদনের একটি নির্ভরযোগ্য ও জনপ্রিয় মাধ্যম। আর এ কারণে শিশুরা বিভিন্ন গেইমিং ডিভাইসের জন্য বায়না ধরবে এটাই স্বাভাবিক। নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকলে গেইমিং একটি মজার ব্যাপার। এটি শিক্ষামূলক এবং কখনো কখনো শিশুদেরকে সামাজিক করে তোলে। গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু গেইম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কিন্তু, অনেক বেশী গেইম খেলা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে এবং আপনার সন্তানকে অনলাইনের বিভিন্ন অসামাজিক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে ফেলতে পারে। নিচের ব্যাপারগুলো খেয়াল রাখা যেতে পারে।

অভিভাবকগণ যেসব ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন
গেইমের পেছনে বেশী সময় ব্যয় করার প্রভাব খারাপ হতে পারেঃ
• সারাক্ষণ গেইম নিয়ে চিন্তা খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, স্কুলে যাওয়ার মত কিছু মৌলিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত করতে পারে।
• গেইমে আসক্তি, গেইমারকে বন্ধুবান্ধব ও পরিবার থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরিয়ে দেয়।
• হতাশা অথবা উদ্বেগের সৃষ্টি করে।
• গেইমে আসক্ত শিশু বা কিশোর বাস্তব সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে না; বাস্তবজীবনের সমস্যা এড়াতে তারা ভার্চুয়াল জগতে বুঁদ হয়ে থাকে।

আমি আমার সন্তানকে কিভাবে গেইম থেকে নিরাপদ রাখতে পারি?
• শিশুদের বেলায় গেইমিং এর ক্ষেত্রে একটি সময়সীমা বেঁধে দিন।
• আপনার সন্তানকে এই সময়সীমা সম্পর্কে জানান। একটি টাইমার বা মনিটরিং সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন যাতে একটি নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার সাথে সাথে তাদের ইন্টারনেট বা কম্পিউটারটি বন্ধ হয়ে যায়।
• মনে রাখবেন, গেইমের মাঝে সমস্যা নেই, কিন্তু তা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে হতে হবে। আপনার সন্তানকে গেইম খেলতে দেয়ার সাথে সাথে অন্যান্য কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত করবেন। যেমন, বন্ধুবান্ধবের সাথে মেশা এবং খেলাধুলা করা। এতে আপনার সন্তান সহজেই নিজের জন্য একটি সমঞ্জস্যমূলক পরিবেশ তৈরি করতে পারবে।
• আপনি যদি মনে করেন আপনার সন্তান ইতিমধ্যেই গেইমিং-এ আসক্ত হয়ে পড়েছে, তাহলে স্কুল বা আশেপাশের লোকজনের সহায়তা নিন।
উৎসঃ (Internet Safety Project https://www.internetsafetyproject.org/wiki/online-games-addiction)

ডিজিটাল আসক্তি
• আগে দেখুন আপনার সন্তান ইন্টারনেটে আসক্ত কিনা, নাকি সে শুধু অনলাইনে বেশি সময় অতিবাহিত করছে। আপনার সন্তান কম্পিউটার বা মোবাইল হ্যান্ডসেট থেকে দূরে থাকলে কেমন আচরণ করছে? দূরে থাকলে তারা কি বিষণ্ণ বা বিরক্ত বোধ করে? হাতের কাছে এই ধরনের ডিভাইস থাকলে তাদেরকে কি হাসিখুশি বা সন্তুষ্ট দেখায়?
• আপনার যদি সন্দেহ হয় যে সে ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়েছে, তাহলে তাঁর সাথে বসুন, আপনার উদ্বেগ নিয়ে তাঁর সাথে বন্ধুভাবাপন্ন পরিবেশে খোলামেলা এবং ইতিবাচকভাবে কথা বলুন। আলোচনার মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে একটি নীতিমালা তৈরি করলে শিশুরা তা সহজেই মেনে নিতে পারে, যা তাদের আচরণকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করে তুলতে পারে। যদি সমস্যাটি চলতে থাকে তাহলে আপনার সন্তানকে একজন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। স্কুল শিক্ষকের/পরামর্শকের সাথেও যোগাযোগ করে দেখুন সেখানেও সমস্যা হচ্ছে কিনা।
• এই রকম পরিস্থিতিতে কম্পিউটারটি তাঁর কাছ থেকে সরিয়ে নিবেন না। অনেকের কাছে এটাকে সবচেয়ে সহজ সমাধান মনে হতে পারে, কিন্তু আসক্তদের জন্য এটি খুবই ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। কারণ, তারা মনে করে অনলাইনে গেইম খেলাই আনন্দের একমাত্র উৎস। কম্পিউটার সরিয়ে ফেললে তারা বিষণ্ণ, এমনকি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। এটি আপনার প্রতি আপনার সন্তানের বিশ্বাসে আঘাত হানতে পারে।
• চিকিৎসকের সাহায্য নিতে দ্বিধাবোধ করবেন না। আসক্তি দূর করা খুবই কঠিন, কেননা শিশুরা সহজেই কোন কিছুর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। আপনার এমন একজনকে দরকার হতে পারে যে আপনাকে এই সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে।
উৎসঃ ( Common Sense Media https://www.commonsensemedia.org/blog/setting-computer-limitstips#)

ভাইরাসের আক্রমণ ও ম্যালওয়্যার ঝুকি
ইন্টারনেটের জগতে প্রবেশ করা মাত্রই আমরা হ্যাকার ও ভাইরাস ম্যালওয়্যার ঝুঁকিতে পড়ে যাই যা আমাদের কম্পিউটার, ডিভাইস এবং গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলোকে আক্রমণ করতে পারে। ভাইরাস প্রোগ্রামগুলো সাধারণত আপাতদৃষ্টিতে নিরাপদ লিংক হিসেবে আসে; এগুলোকে এড়িয়ে চলার মাধ্যমে আমরা আমাদের কম্পিউটার ও ডিভাইসগুলোকে নিরাপদ রাখতে পারি।
• ইন্টারনেটে নিরাপদে থাকতে হলে নিরাপত্তা ঝুঁকিসমূহ এবং নিজেকে নিরাপদ রাখার উপায় সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। এই নীতিমালাগুলো এই ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে।
• আপনার কম্পিউটারে আন্তি-ভাইরাস, আন্তি-স্পাইওয়্যার এবং স্পাম ফিল্টার সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন।
• আপনার কম্পিউটার স্টার্ট করার সময় যদি অদ্ভুত আচরণ করে তাহলে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে যে সেটি ভাইরাস আক্রান্ত। সেক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন।
• আপনি যখন কম্পিউটার ব্যবহার করেন না, তখন ইন্টারনেটে সংযোগ বন্ধ রাখুন।
• আপনার কম্পিউটার এবং অনলাইন একাউন্ট গুলোকে ভাইরাস ও হ্যাকারদের হাত থেকে রক্ষা করতে নিম্নলিখিত উপায় গুলো অবলম্বন করতে পারেন।
o শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে আপনার অনলাইন একাউন্টগুলোকে নিরাপদ রাখুন। পাসওয়ার্ডে বড় হাতের অক্ষর, প্রতীক ও সংখ্যা ব্যবহার করে এটিকে শক্তিশালী করুন।
o আপনার ই-মেইল এড্রেসটি সবসময় গোপন রাখুন। অপরিচিত লোকদের ই-মেইল রিসিভ করার সময় সতর্ক থাকুন।
o ই-মেইলগুলোকে খোলার আগে স্ক্যান করে নিন।
o আপনার কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
উৎসঃ (www.saferinternet.org https://www.saferinternet.org/online-issues/children-and-youngpeople/)

বয়সের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কনটেন্ট
আমরা জানি শিশুরা খুব কৌতূহলী এবং এই গুনটির জন্যই তারা এত আকর্ষণীয় ও আদরণীয়। অনলাইন কনটেন্ট সম্পর্কে আমাদের সাবধান হতে হবে কারণ অনলাইনের সব কনটেন্ট নিয়ন্ত্রিত নয়। ইন্টারনেটে শিশুরা সহজেই প্রাপ্তবয়স্কদের কনটেন্ট পেয়ে যেতে পারে, তাই অবশ্যই শিশুদেরকে কোনটি সঠিক এবং কোনটি সঠিক নয় তা শেখাতে হবে। ইন্টারনেট, গেইম, সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন অ্যাপস যেগুলো মাদকদ্রব্য ও প্রপ্তবয়স্ক কনটেন্টের সাথে সম্পর্কযুক্ত সেগুলো নিয়ে শিশুদের সাথে আলোচনা করতে হবে। বয়সের সাথে সামঞ্জস্যহীন কনটেন্ট থেকে শিশুদের দূরে রাখতে অভিভাবকরা নিচের প্রতিরোধকমূলক ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করতে পারেন।
• নতুন ওয়েব ব্যবহারকারীদের জন্য ওয়েব ব্রাউজারের কনটেন্ট ফিল্টারটি অ্যাক্টিভ করবেন এবং গুগল, সেফ সার্চ এবং ইউটিউবের মতো টুলগুলোকে সেফ মোডে অন করবেন। যেকোনো গ্রুপ বা টিমে যোগ দেয়ার আগে ভাবুন আপনার সন্তান এতে উপকৃত হবে কিনা। যদি না হয়, এগুলো বাদ দিন।
• বিশেষ বিশেষ ওয়েবসাইট বা নেটওয়ার্কে যোগ দেওয়ার আগে ভাবুন এগুলোর পিছনে কারা কাজ করছে। এগুলোর মূল্যবোধ সম্পর্কে ভাবুন। এগুলো সম্বন্ধে জানুন এবং যাচাই করে দেখুন, এগুলো আপনার সন্তানের বয়সের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা।
• আপনার সন্তান ব্যবহার করে এমন ওয়েবসাইটের হোমপেইজ বা প্রথম দুইটি পেইজের পর কি আছে তা অবশ্যই জানার চেষ্টা করবেন। একটি ওয়েবসাইটের যতটা ভেতরে সম্ভব যাওয়ার চেষ্টা করুন, মেসেজ বোর্ডগুলো পড়ুন এবং অন্য ব্যবহারকারীরা কি মন্তব্য করছে তা খেয়াল রাখুন। এবার দেখুন এই কনটেন্ট গুলো সম্পর্কে আপনি কি ভাবছেন। আপনার সন্তান কোন ধরণের সংস্কৃতি বা বিষয়ের সাথে জড়িয়ে পড়ছে তা জানার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
উৎসঃ (Internet Safety Project https://www.internetsafetyproject.org/articles/how-form-goodtechnology-)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন