শীর্ষে সিম্ফনি, দ্বিগুন বেড়েছে ওয়ালটনের শেয়ার

বাংলাদেশের স্মার্টফোন বাজারে শীর্ষে রয়েছে সিম্ফনি। তবে দেশে তৈরি স্মার্টফোনে আস্থা রাখছেন ক্রেতারা। ফলে দ্বিগুণ বেড়েছে ওয়ালটনের স্মার্টফোন বিক্রি। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে স্মার্টফোন বিক্রিতে এই সাফল্য এসেছে। যেটাকে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের আস্থার প্রতিফলন বলে মনে করছে ওয়ালটন।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্টের গত মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বাংলাদেশের স্মার্টফোন বাজারে ওয়ালটনের দখলে ছিল ৭ শতাংশ। কিন্তু এ বছরের অর্থাৎ ২০১৮ সালের প্রথম প্রান্তিকে ৮ শতাংশ বেড়ে ওয়ালটনের মার্কেট শেয়ার দাঁড়িয়েছে ১৫ শতাংশে। ফলে দেশের স্মার্টফোন বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছে ওয়ালটন।

স্মার্টফোন বাজারে ওয়ালটনের এই অগ্রগতিকে দেশীয় প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন শিল্পের জন্য আশাব্যঞ্জক বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠানটির ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা। তাদের মতে, দেশে তৈরি ফোনগুলোর উচ্চমান ও সাশ্রয়ী দাম এবং একই সঙ্গে দ্রুত ও সহজলভ্য বিক্রয়োত্তর সেবা বিক্রয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক এবং সেল্যুলার ফোন বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক এসএম রেজওয়ান আলম বলেন, দেশীয় প্রযুক্তিপণ্যে বিদেশি নির্ভরতা কমাতে ২০১২ সালে আমরা স্মার্টফোন বাজারে প্রবেশ করি। লক্ষ্য ছিল দেশেই স্মার্টফোন তৈরি করা। গত বছরের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল ফোন উৎপাদন কারখানা চালু করে ওয়ালটন। ইতোমধ্যেই ওই কারখানায় তৈরি ৬টি স্মার্টফোন এবং ১টি ফিচার ফোন বাজারে ছাড়া হয়েছে। দেশে তৈরি উচ্চমানের এসব মোবাইল ফোনের কাস্টমার ফিডব্যাক অনেক ভালো। যার ফলে এ বছরের প্রথম কোয়ার্টারে ওয়ালটনের মার্কেট শেয়ার দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।

ওয়ালটনের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম বলেন, দেশে তৈরি স্মার্টফোন ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করেছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং মেধাবীদের কর্মসংস্থান হচ্ছে। যা বিদেশি কোম্পানিগুলোর আধিপত্য হ্রাস করে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারাকে বেগবান করতে ভূমিকা রাখছে। দেশীয় ক্রেতারা ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত পণ্যে আস্থা রেখেছে বলেই এখন ফ্রিজের বাজারের ৭০ শতাংশেরও বেশি ওয়ালটনের দখলে। একইভাবে সাশ্রয়ী দামে মানসম্মত প্রযুক্তিপণ্য দিয়ে স্মার্টফোনের বাজারেও আমরা শীর্ষে যাব।

ওয়ালটনের সেল্যুলার ফোন বিপণন বিভাগের প্রধান আসিফুর রহমান খান বলেন, মোবাইল ফোন খাতে সরকারের সহায়তার সুফল পাচ্ছে দেশ। সম্প্রতি দেশে ফোরজি প্রযুক্তির টেলিযোগাযোগ সেবা চালু হয়েছে। ক্রেতাদের সাশ্রয়ী মূল্যে সর্বাধুনিক ফিচারসমৃদ্ধ ফোরজি স্মার্টফোন দিতে ওয়ালটন কারখানায় ব্যাপকভাবে কাজ চলছে। আমরা আশা করছি আসন্ন ঈদেই ক্রেতাদের হাতে বাংলাদেশে তৈরি প্রথম ফোরজি স্মার্টফোন তুলে দিতে পারবো। সব ধরনের প্রয়োজনীয় ফিচারসমৃদ্ধ এই ফোন হবে দেশের বাজারে সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের ফোরজি ফোন। এছাড়া, পর্যায়ক্রমে ফোরজিসহ সব ধরনের ফোন দেশেই তৈরির লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।

তিনি জানান, বাংলাদেশে তৈরি মোবাইল ফোনে ক্রেতাদের বিশেষ রিপ্লেসমেন্ট সুবিধা দেয়া হচ্ছে। স্মার্টফোন ক্রয়ের ৩০ দিনের মধ্যে যেকোনো সমস্যায় ওই ফোনটি পাল্টে নতুন আরেকটি ফোন পাচ্ছেন ক্রেতা। এছাড়াও, এক বছরের বিক্রয়োত্তর সেবার পাশাপাশি ১০১ দিনের মধ্যে প্রায়োরিটি বেসিসে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ক্রেতাকে সেবা দেয়া হচ্ছে। যা ওয়ালটনের স্মার্টফোনের বিক্রয় বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশীয় প্রযুক্তিপণ্যের প্রতি ক্রেতাদের এই ইতিবাচক মনোভাব অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক। এতে দেশীয় প্রযুক্তিপণ্য শিল্প আরো বিস্তার লাভ করবে। যার সুফল পাবেন ক্রেতারা। কর্মসংস্থান বাড়বে। দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। অদূর ভবিষ্যতে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও স্মার্টফোন রফতানি করা সম্ভব হবে। সব মিলিয়ে প্রযুক্তির জগতে সময় এখন বাংলাদেশের।

কাউন্টারপয়েন্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের স্মার্টফোন মার্কেট শেয়ার

ব্র্যান্ড           প্রথম প্রান্তিক ২০১৭              প্রথম প্রান্তিক ২০১৮

সিম্ফনি                     ৩৩%                                 ২১%

ওয়ালটন                    ৭%                                 ১৫%

আইটেল                      ১%                                 ১০%

স্যামসাং                     ১৫%                                ১০%

হুয়াওয়ে                     ১২%                                 ৮%

অন্যান্য                     ৩২%                                 ৩৬%

মোট                        ১০০%                               ১০০%

সূত্র: কাউন্টারপয়েন্ট

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন