হরেক রকম বাজারঃ অ্যামস্টারডামের ফুলের বাজার

দুনিয়া জুড়ে কতো ধরণের বাজারই না বসে। তেমনি এক বিশাল বাজার প্রতিদিন বসে অ্যামাস্টার্ডামের আলাস্মির এলাকার শিফোল এয়ারপোর্টের কাছে। বাজারটির বিশেষত্ব হচ্ছে এখানে শুধু ফুল বেচাকেনা করা হয়।

‘The Flora Holland flower auction market’ হল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে ব্যস্ত ফুলের মার্কেট। প্রতিদিন গড়ে এই বাজারে ২০ মিলিয়ন ফুল কেনাবেচা করা হয়। শুধু তাই নয় আলাস্মিরের এই ফুলের মার্কেটটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম বিল্ডিংও বটে।

অটোমেটেড রেললাইনের উপর দিয়ে অসংখ্য ছোট ছোট ট্রেনে কার্ট ভর্তি করে হরেক রকমের ফুল মার্কেটের একস্থান থেকে অন্য স্থানে নেয়া হয়। ফুলগুলো রাত ১০টার দিকে মার্কেটে আসে এরপর সেটিকে মৃদু হিমায়িত করে রাখা হয়।

সকালে নিলাম শুরু হলে খুব শীঘ্রই ফুলগুলো বিতরন করে দেওয়া হয়। বিকালের মধ্যে সব ফুল বিতরন করে দেওয়া হলে, আবার নতুন ফুল আনার ব্যাবস্থা শুরু হয়।

নিলাম প্রক্রিয়া:
ক্রেতাদের এখানে স্বাগতম জানান হলেও দূর থেকে ছোট ছোট গাড়ি ভর্তি ফুল দেখেই তাদের খুশী থাকতে হয়। নিলামে যেই ফুলগুলো উঠে, সেগুলোও তারা কাছে থেকে দেখতে পারেন না। ট্যুরিস্ট বা ক্রেতাদের একটি সাউন্ডপ্রুফ ঘরের মধ্যে রাখা হয় যেখানে নিলাম প্রক্রিয়া ঘটে থাকে।

বিরাট দুটি হলঘরের মধ্যে নিলামের কার্যকলাপ সম্পন্ন হয়। একসাথে ৭টি নিলাম একসঙ্গে প্রতিটি ঘরে সম্পন্ন হয়। সম্স্ত নিলাম প্রক্রিয়াটি ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে হয়ে থাকে।

Flower-auction-Flora-Holland
ছবি : সংগৃহীত

নিলামের প্রক্রিয়াটি সর্ম্পকে একটা ধারণা দেয়া যাক:
• ক্লাসরুমের মত করে বিরাট হলরুমের এক দিকে ক্রেতারা কম্পিউটারের সামনে বসেন যেহেতু সমগ্র নিলাম প্রক্রিয়া ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে হয়ে থাকে।

• অটোমেটেড ট্রেনগুলো ফুল বোঝাই করে হল রুমের সামনে দিয়ে যায়। একসাথে দুটি নিলাম ঘটলে দুটি ট্রেন একসাথে যায়।

• হলরুমের অর্ধেক অংশজুড়ে মনিটর সংযুক্ত থাকে। এই মনিটরে নিলামের সকল তথ্য প্রদর্শিত হয়। এখানে একটি ঘড়ি থাকে, যা ফুলের চিত্রও মূল্য প্রদর্শন করে।

• ফুলগুলো প্রদর্শনের সময় নিলামিরা যার যার জায়গা থেকে কম্পিউটারে বিডিং বা ডাক শুরু করেন।

• ফুল বিক্রির পর ফুলের কনটেইনার ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। সেখান থেকে তা বিভিন্ন ফুলের দোকান ও বিতরন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। ফুলের টাকা নিলামের সময়ই আদান-প্রদান হয় এবং বিকালের মধ্যে সব বিক্রিত ফুল ক্রেতাদের মাঝে বিতরন করে দেওয়া হয়।

ডাচ ক্লক:
আলাস্মিরের ফুলের এই নিলাম, ডাচ নিলামের পদ্ধিততে হয়ে থাকে। প্রথমে ফুলের দাম অনেক বেশি ধরা হয় এবং বিক্রির সাথে সাথে এর দাম ধীরে ধীরে কমতে থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, ক্রেতারা দাম কমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে সকল ফুল বিক্রি হয়ে যায় এবং খালি হতে তাদের ঘরে ফিরতে হয়। আবার অনেকে খুব তাড়াতাড়ি ফুল কিনতে থাকেন।

Flora Holland flower auction market
ছবি : সংগৃহীত

দেখা যায়, তিনি একই ফুলের জন্য অনেক বেশি দাম দিয়ে ফেলেন। অর্থাৎ ওভার পে করে ফেলেন। সমগ্র নিলাম প্রক্রিয়াটি প্রতিনিয়ত মনিটরে প্রদর্শন করা হয়। এই মনিটরে একটি মূল উপাদান হল একটি বৃত্ত। যাকে ‘ডাচ ক্লক’ হিসাবে ধরা হয়।

ডাচ ক্লকে ফুলের দাম, বিক্রির সকল তথ্য, নিলামের মূল্য সকল তথ্য ক্রমাগত প্রদর্শিত হতে থাকে। ক্রেতারা ডাচ ক্লকেই ফুল দেখে, সেখান থেকে ফুল পছন্দ করে, ফুল এর জন্য বিড করেন।

নিলামের সময়:
Flora Holland-এর এই flower auction প্রতি কার্যদিবসের সকাল ৭ টা থেকে দুপুর ১১টা পর্যন্ত হয়। শুধু সপ্তাহের বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত নিলাম হয়। মাঝে মাঝে নিলাম ক্ষণস্থায়ী হয়। কারণ মাঝে মাঝে সব ফুল খুব তাড়াতাড়ি বিক্রি হয়ে যায়। তাই ক্রেতাদের সবসময় আগে আগে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

auction-Flora-Holland
ছবি : সংগৃহীত

মার্কেট ভ্রমন:
Flora Holland flower auction market-এ খুব সহজে নিজস্ব বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যাবহারের মাধ্যমে পৌঁছান যায়। Amsterdam central station থেকে বাসে করে মার্কেটে পৌছাতে ৫০ মিনিট সময় লাগে। টুরিস্টদের জন্য এই মার্কেট পরিদর্শন খুব এ মজাদার একটি ভ্রমণ।

প্রাপ্তবয়স্ক পরিদর্শকের এন্ট্রি ফি ৬ ইউরো এবং ৬-১১ বছর বয়সী শিশুদের এন্ট্রি ফি ৩.৫০ ইউরো। এখানে বেড়াতে আসা পর্যটক ও ক্রেতাদের আরামদায়ক জুতা পরার জন্য বলা হয়, কারন মার্কেটের ভিতর থেকে গ্যালারি পর্যন্ত পৌঁছানোর রাস্তাটি বেশ লম্বা!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন