সব খেলার মত ক্রিকেটও নিয়মের জালে বাঁধা। পিচ থেকে শুরু করে বলের ওজন। সবই আছে ক্রিকেটের আইনে। সব আইন এক হয়ে ক্রিকেটকে করে তুলেছে ‘জেন্টেলম্যানস গেম’। দেখে নেওয়া যাক ক্রিকেটের নিয়মগুলো কী কী..
বলের আকার
পুরুষদের ক্রিকেটে বলের ওজন ১৫৫.৯ গ্রাম থেকে ১৬৩ গ্রামের মধ্যে থাকতে হবে। বলের পরিধি ৮.৮১ থেকে ৯ ইঞ্চি হতে হবে।
মহিলাদের ক্রিকেটের ক্ষেত্রে বলের ওজন ১৪০ থেকে ১৫১ গ্রাম ও পরিধি ৮.২৫ থেকে ৮.৮৮ ইঞ্চি হতে হবে। খেলতে খেলতে যদি বলের আকার পরিবর্তন হয় তবে তা তাড়াতাড়়ি বদলে ফেলতে হবে।
ব্যাট
ব্যাটে এমনকিছু রাখা যাবে না যাতে বলের ‘মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতি’ হয়। ক্রিকেটীয় আইন অনুযায়ী মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতি মানে, বলকে একটা কাঠ দিয়ে আঘাত করা হলে বলের যা ক্ষতি হবে তার থেকে বেশি ক্ষতি যদি হয় তাকে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতি বলা হয়।
পিচের আকার
মাঠের আকার যাই হোক না কেন পিচ সবসময় দৈর্ঘ্যে ২২ গজ ও প্রস্থে ১০ ফুট হওয়া উচিত। স্ট্যাম্পের সঙ্গে ক্রিজের শেষ প্রান্তের দূরত্ব থাকবে ৩.৯৩ ফুট। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিরাতে পিচ ঢেকে রাখতে হবে। এতে রাতের আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য কোনও প্রভাব পড়ে না পিচে। ম্যাচের দিন সকালে দু’দলের অধিনায়ককে পিচ দেখতে দিতে হবে।
এলবিডব্লু
কথাটা LBW। পুরো কথা লেগ বিফোর উইকেট। তার মানে উইকেটকে পা দিয়ে আড়াল করা বোঝায়। তবে ক্রিকেটীয় নিয়মে LBW শরীরে যেকোনও অংশে লাগলেও আউট হতে পারে। নিয়ম হল, ব্যাটসম্যান যদি উইকেটের লাইনে শরীরের কোনও অংশ আনে। সেটি যদি তার ব্যাটে না লাগে এবং তা যদি নিশ্চিতভাবেই আউট হওয়ার সম্ভবনা থাকে তখনই তা LBW।
ওভারথ্রো
ক্রিকেটে ওভারথ্রো সবসময়ই হয়। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী ওভারথ্রোর ফলে যদি বাউন্ডারি হয়, তাহলে বাউন্ডারির রান ও সিঙ্গলসে নেওয়া সব রান দেওয়া হবে। এই নিয়ম দেখা যায় ২০১৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালে।
আউট
রান আউট, স্ট্যাম্প আউট বা বোল্ড তখনই দেওয়া হবে যখন উইকেটের উপরে থাকা বেল মাটিতে পড়বে। অনেক সময় দেখা যায় উইকেটে বল লাগলেও বেল পড়ে না ফলে আউট দেওয়া হয় না।
রান আউট
যেই দুই প্লেয়ার ব্যাটিং করছেন তারা যদি ম্যাচ চলাকালীন ক্রিজের বাইরে বেরোন তাহলে ফিল্ডার তাদের আউট করতে পারেন। সেটা নো বল হলেও।
হিট উইকেট
বোলারের হাত থেকে বল বেরনোর পর ব্যাটসম্যানের শরীরে কোনও অংশ যদি উইকেটে লাগে ও তাতে যদি উইকেটের বেল পড়ে যায় তাহলে তা হিট উইকেট হিসেবে ধরা হয়।
আউট হিট দ্যা বল
ব্যাটসম্যান যদি কোনও বল দুবার তার শরীর বা ব্যাটে লাগায় তাহলে তাকে আউট দেওয়া হবে।
বিঘ্ন ঘটানো
কোনও ব্যাটসম্যান যদি ফিল্ডারদের বিঘ্ন ঘটানো চেষ্টা করেন তাহলে তাঁকে জরিমানা করা হবে। অনেক সময় দেখা যায় বোলার নিজে যখন ক্যাচ নিতে যান তখন ব্যাটসম্যান তাকে ধাক্কা মারেন। এক্ষেত্রে তিনি যদি দুর্ঘটনাবশত ধাক্কা মেরে থাকেন তাহলে তাঁকে সতর্ক করা হবে। কিন্তু তিনি যদি ইচ্ছা করে ধাক্কা মারেন তাহলে তাঁকে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
সময়
ব্যাটসম্যান চোট পেয়ে বা আউট হয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার তিন মিনিটের মধ্যে পরের ব্যাটসম্যানকে মাঠে নামতে হবে। যদি না নামেন তাহলে তাঁকে টাইম আউট করা হবে।
আম্পায়ার
খেলা শুরু হওয়ার ৪৫ মিনিট আগে মাঠের এক্সজিকিউটিভদের রিপোর্ট করতে হবে আম্পায়ারদের। অসুস্থ বা আহত না হলে আম্পায়ার পরিবর্তন করা যায় না। পরিবর্তন করতে হলে দুই অধিনায়কের সম্মতি নিতে হয়।
বল
খেলার চলাকালীন যখন খুশি বল পরীক্ষা করার অধিকার আছে আম্পায়ারের। কোনও আউট হওয়ার পর বা বল বাউন্ডারি হলে তারপর আম্পায়ার বাধ্যতামূলকভাবে বল পরীক্ষা করেন।
বিরতি
দুটো ইনিংসের মাঠে ১০ মিনিটের বিরতি থাকবে। টেস্ট ম্যাচের ক্ষেত্রে দিনের প্রথম দুটো সেশনে ৪০ মিনিটের লাঞ্চ ব্রেক থাকবে। চা বিরতি থাকবে ২০ মিনিটের। দুই অধিনায়ক চাইলে বিরতি বাতিল করা যায়।
টস
টসে জয়ী অধিনায়কের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা যায় না। ম্যাচ ডিক্লেয়ার করা বা ম্যাচ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত একবার নিলে তা পরিবর্তন করা যায় না।
টুয়েলভথ ম্যান
প্রথম একাদশের কোনও প্লেয়ার চোট পেলে তলে দলের টুয়েলভথ ম্যান মাঠে আসতে পারেন।
পেনাল্টি
নো বল, ওয়াইড বল, নিয়মভঙ্গ বা প্লেয়ার যদি আম্পায়ারের অনুমতি না নিয়ে মাঠে ঢোকে এসবক্ষেত্রে আম্পায়ার বিপক্ষ দলকে পেনাল্টি দিয়ে থাকেন।
পশু বা কোনও তৃতীয় ব্যক্তির মাঠে ঢুকে পড়া
খেলা চলাকালীন যদি কোনও পশু বা তৃতীয় ব্যক্তি মাঠে ঢুলে পড়ে সেই সময় যদি বল তার গায়ে লাগে তাহলে সেই সময় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হিসেবে ধরা হবে।
অনুশীলন
নেটে অনুশীলন করতে হবে আউটফিল্ডে। যেই পিচে ম্যাচ খেলা হবে সেই পিচে অনুশীলন করা যাবে না।
নন স্ট্রাইকার
যেই পাশ থেকে বল করা হচ্ছে তার বিপরীত পাশে থাকতে হবে নন স্ট্রাইকারকে। তবে পুরোটাই করতে হবে আম্পায়ারকে জানিয়ে।
অপরাধ
ক্রিকেটে অপরাধের চারটি স্তর হয়। লেভেল ১ সবথেকে কম বলে ধরা হয়। সবথেকে বেশি অপরাধ ধরা হয় লেভেল ৪-কে। ভাষা বা শারীরিক অভিব্যক্তি আপত্তিজনক হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। কোনও প্লেয়ার যদি কারও সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে তাহলে তাও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এসবক্ষেত্রে আম্পায়ার বা ম্যাচ রেফারি শাস্তি দিতে পারেন।