আনারস দেখেনি এমন মানুষ মনে হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। যদিও বাংলাদেশের সকল এলাকাতে আনারস চাষ হয় না, সব এলাকার মাটি আনারস চাষের জন্য উপযুক্ত নয়, তারপরও সকলেই আনারস কম বেশি দেখেছি। আনারসের সাথে মাথার ঝুটির মত আনারসের পাতাগুলোও থাকে।
এই আনারস পাতার বিন্যাসটা আশ্চর্য রকম সুন্দর। পাতাগুলো ছোট থেকে ক্রমান্বয়ে বড় হয়ে আসছে। পাতাগুলোর এই ক্রমান্বয়ে বড় হবার ব্যাপারটা আমাদের সচরাচর সাধারণ বৃদ্ধির হিসেবের নয়। বরং তার চেয়ে সুন্দর এক অসাধারণ বিন্যাসে সে সাজানো। আনারস পাতার এই বৃদ্ধি বিন্যাস একটি বিখ্যাত ধারা মেনে চলে। ধারাটি হল ফিবোনাচ্চি রাশিমালা।
আনারস পাতার দিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে বাইরের দিকের পাতাগুলো আকারের দিক থেকে অনেক ছোট। আস্তে আস্তে যত মাঝের দিকে যাওয়া যাবে দেখা যাবে ততই বাড়ছে পাতার আকৃতি। বাইরে থেকে প্রথম দিকটায় বাড়ছে সামান্য পরিমাণ, তার পরের ধাপে বাড়ছে সামান্য থেকে একটু বেশি। তারপর বাড়ছে একটুখানি। তারও পরের ধাপে বাড়ছে সামান্য থেকে একটুখানি বৃদ্ধির চেয়েও বেশি পরিমাণ। আরও যখন একদম ভেতরের দিকে অগ্রসর হওয়া যাবে তখন দেখা যাবে পাতার আকৃতি অনেক বেড়ে গেছে।
ক্রমান্বয়িক বৃদ্ধি বলতে আমরা সাধারণত বুঝে থাকি প্রথমে ১ ইঞ্চি, তারপর ২ ইঞ্চি, তারপর ৩। এভাবে ৪, ৫, ৬, ৭ ……. ইঞ্চি। আনারস পাতাটা এই সাধারণ সোজা ধারাটা মানে না ! আনারস পাতা বাড়ছে ফিবোনাচ্চির মজার ধারাতে। ফিবোনাচ্চির ধারাটি এমন–
১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫,…
এই ধারাটি দেখতে অগোছালো মনে হলেও আসলে এটি একদম সহজ একটা ধারা !
এই ধারার প্রতিটি সংখ্যা হচ্ছে আগের দুই সংখ্যার যোগফল। যেমন ধারাটির চতুর্থ সংখ্যাটি হল ৩। এই ৩ হল তার আগের দুই সংখ্যার যোগফল। আগের দুই সংখ্যা হল ২ আর ১; তেমনই করে এই ধারার সপ্তম সংখ্যাটি হল ১৩, সেটি তার আগের দুই সংখ্যা ৮ ও ৫ এর যোগফল। দশম সংখ্যা ৫৫ আর সেটিও আগের দুই সংখ্যা ৩৪ ও ২১ কে যোগ করলে যা হয় তা।
সব আনারস পাতাই যে এমন নিয়ম মেনে চলবে তা নয়। কিছু কিছু ব্যতিক্রম তো হতেই পারে। তবে স্বাভাবিকভাবে আনারস পাতার বিন্যাস ফিবোনাচ্চির ক্রমেই হয়ে থাকে।