সড়কে নিরাপদ থাকার ২০ টিপস

বাংলাদেশে এবছর প্রতিদিন গড়ে ১১ জনের প্রাণহানি হয়েছে। বিশ্বে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান অন্তত ১৩ লাখ মানুষ। এছাড়া বিশ্বে প্রতিদিন রাস্তায় ৫০০ শিশুর প্রাণহানি ঘটে। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা।

যোগাযোগ ব্যবস্থা, মোবাইল অ্যাপস ও রাইড শেয়ারিং সেবাগুলো আমাদের প্রতিদিনের যাতায়াতকে আগের থেকে অনেক সহজ করেছে। তবে গাড়িতে, সাইকেলে কিংবা হেটে যাওয়া পথচারী, সব শ্রেণিই শিকার হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার। সড়কে এই মৃত্যুর মিছিল কমাতে প্রয়োজন সবার সচেতনতা বৃদ্ধি। চলুন সড়কে কীভাবে নিরাপদ থাকা যায় তার কিছু টিপস জেনে নিই।

১. একসাথে খাওয়া ও ড্রাইভিং নয়
সড়কে নিরাপদ থাকার সবথেকে সহজ উপায় হলো মস্তিস্ক পরিস্কার রাখা। আপনি যদি ড্রাইভিং করতে করতে খেতে থাকেন তাহলে অন্য কেউ আপনার ড্রাইভিংকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেবে অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ হারাবেন ও দুর্ঘটনায় পতিত হতে পারেন। তাই ড্রাইভিং করার সময় খাবেন না। প্রয়োজনে বিরতি নিয়ে খাবার খেয়ে নিন।

২. পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিন
পরিপূর্ণ বিশ্রাম ছাড়া ড্রাইভিং করবেন না। চালকদের ঘুমের অভাব বা ক্লান্তি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। কারণ ড্রাইভিং করার আগে পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিন। দীর্ঘপথে মাঝে মাঝেই বিরতি নিন।

৩. সবদিকে নজর রাখুন
আপনি রাস্তায় হাটছেন কিংবা ড্রাইভিং করছেন, যাই হোক না কেনো সবদিকে নজর রাখুন। পথচারী হলে কোনোদিক থেকে গাড়ি আসছে কিনা, ড্রাইভিং করলে যাত্রী কিংবা অন্য গাড়ি আসতে কিনা, তার দূরত্ব কতোদূর ইত্যাদি খেয়াল রাখুন।

৪. ফুয়েলের খেয়াল রাখুন
গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার আগে অবশ্যই ফুয়েল আছে কিনা দেখে নিন। মাঝপথে ফুয়েল শেষ হয়ে যাওয়া কিংবা যেকোনো সময় ফুয়েল শেষ হওয়ার দুশ্চিন্তা থেকেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

৫. নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন
সামনে গাড়িকে খুব কাছাকাছি থেকে অনুসরণ করবেন না। কারণ যেকোনো কারণে যেকোনো সময় গাড়িটি ব্রেক করতে পারে। তাই অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এড়াতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন।

৬. সড়ক সম্পর্কে অবহিত থাকুন
হয়তোবা একটু সময় বাঁচানোর জন্য আমরা অনেক সময় অপেক্ষাকৃত খারাপ সড়কে গাড়ি চালাই। এটা পরিহার করা উচিত। যে সড়ক সম্পর্কে আপনার ভালো ধারণা আছে অর্থাৎ কোথায় রাস্তা ভালো, কোথায় খারাপ বা প্রতিবন্ধকতা আছে এসব জানেন সে সড়কেই চলাচল করুন। তাহলে আগে থেকেই সেসব পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে পারবেন।

৭. আপনাকে দৃশ্যমান রাখুন
রাস্তায় চলাচলের সময় আপনাকে যাকে অন্যরা দেখতে পায় (বিশেষ করে বাইক চালানোর সময়) তেমন পোশাক পরিধান করুন। দিনের বেলায় উজ্জ্বল রঙের আর রাতে আলোর প্রতিফলন হয় এমন (যেমন ভেস্ট) পোশাক পরিধান করুন। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ইন্ডিকেটর, হেডলাইন, ব্যাকলাইট ব্যবহার করুন।

৮. আলাপচারিতা পরিহার করুন
ধরুন, আপনি রাস্তায় হাটছেন। এমন সময় মোবাইলে কিংবা অন্যের সাথে আলাপচারিতা পরিহার করুন। এতে আপনি কোথায় আছেন, কোথায় পা ফেলছেন বা আশেপাশে আসন্ন কোনো বিপদ আছে কিনা এগুলো ভুলে যেতে পারেন। তাই এমন সময় আলাপচারিতা পরিহার করে চারপাশে খেয়াল রাখুন।

৯. গাড়িতে ছোটদের খেয়াল রাখুন
যদি বাচ্চাদের নিয়ে ভ্রমণ করেন তাহলে অবশ্যই তাদের সম্পর্কে সচেতন থাকুন। তারা যেনো সেট বেল্ট বাঁধা থাকে। কোলে থাকলে অবশ্যই যেনো নিরাপদে থাকে ও যেকোনো পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সেটি নিশ্চিত করুন।

১০. ধীরে চলুন
কথায় আছে, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তাই সময় বাঁচাতে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাবেন না বা রাস্তা পার হবেন না। সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলো দ্রুতগতি। বরং যদি সাধারণ গতিতে গাড়ি চালান তাহলে ভালো মাইলেজ পাবেন, দুর্ঘটনার আশঙ্কাও কমবে।

১১. জেব্রাক্রসিং দেখে চলুন
ফুট ওভারব্রিজ কিংবা আন্ডারপাস না থাকেলে রাস্তা পার হতে জেব্রাক্রসিং ব্যবহার করুন। চালকদেরও জেব্রাক্রসিংয়ে সচেতন থাকা উচিত।

১২. ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন
সড়কের লেন ব্যবহারে ধারাবাহিকতা রাখুন। হুটহাট করে লেন পরিবর্তন করবেন না অথবা হটাৎ করেই রাস্তায় গাড়ি থামাবেন না। এতে পিছনের চালকরা বিভ্রান্ত হতে পারে এবং দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

১৩. বিপদজনক সড়কে বাড়তি নিরাপত্তা
সড়কে বাঁক নেওয়া কিংবা উচু-নিচু রাস্তায় চলাচলের সময় বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। এমন সড়কে সবচেয়ে ভালো হলো গতি কমানো ও বিচলিত না হওয়া।

১৪. লুকিং গ্লাসে দৃষ্টি রাখা
সড়কে চলাচলের সময় অবশ্যই কয়েক সেকেন্ড ব্যবধানে লুকিং গ্লাসে দৃষ্টি দিতে হবে। লেন পরিবর্তন, পার্কিং, গতি কমানোর আগে অবশ্যই ভালোভাবে দেখে নিবেন আশেপাশে কী আছে। এতে অন্য গাড়ি কিংবা প্রতিবন্ধকতার সাথে দুর্ঘটনা ঘটা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

১৫. শিশুদের বিষয়ে সচেতন থাকুন
যেসব এলাকাতে শিশুদের আনাগোনো বেশি থাকে (পার্ক, স্কুল, স্কুল বাসের কাছাকাছি) সেসব এলাকায় ধীরে ও সতর্কতার সাথে গাড়ি চালান। যেকোনো সময় তারা রাস্তা পার হতে পারে কিংবা দৌড় দিতে পারে। তাই এ বিষয়ে সচেতন থাকুন।

১৬. ট্রাফিক সিগন্যাল দেখে চলুন
রাস্তায় চলাচলে অবশ্যই ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলতে হবে। হলুদ লাইট দেখে কিংবা এখনই লাল বাতি জ্বলতে পারে ভেবে তাড়াহুড়ো করবেন না।

১৭. অন্যকে যেতে দিন
যখন লেন পরিবর্তন করবেন বা মোড় ঘুরবেন তখন বিচলিত হবেন না। বুঝতে পারছেন না কার আগে যাওয়া উচিত, তাহলে অন্য গাড়িকে আগে যাওয়ার সুযোগ দিন।

১৮. অন্যের উপর নির্ভরশীল হবেন না
অন্য চালক ব্রেক করবে, সিগন্যাল দিবে বা আপনাকে আগে যেতে দিবে এমনটি মনে করবেন না। নিজের দায়িত্বে নিজেই নিরাপদ থাকুন।

১৯. পরীক্ষা করুন
গাড়ি চালানোর আগে প্রতিবার ভালোভাবে দেখে নিন সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। ইঞ্জিন, ব্রেক, ইন্ডিকেটর লাইট টিকভাবে কাজ করছে কিনা, বাইক হলে স্ট্যান্ড উঠিয়েছেন কিনা ইত্যাদি নিশ্চিত হয়ে নিন।

২০. অন্যকে নিরাপদ রাখুন
শুধু নিজে নিরাপদ থাকা নয়, অন্যকেও নিরাপদ রাখুন। রাস্তায় প্লাস্টিক বোতল, পলিথিন বা প্লাস্টিকের অন্য কেনো জিনিষ, ময়লা ফেলবেন না। পথচারী ও চালকদের ক্ষেত্রে প্রতিবদ্ধকতা তৈরি করতে পারে এমন কিছু রাস্তায় রাখবেন না। কারণ আপনার ছোট্ট ভুলে ঘটে যেতে পারে মারাত্বক দুর্ঘটনা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন