একাকী ভ্রমণে নারীর নিরাপত্তা টিপস

বিভিন্ন কারণে বিশ্বব্যাপী একাকী ভ্রমণের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই নারীরা। নতুন মানুষদের সাথে পরিচয়, নতুন অভিজ্ঞতা, নিজের সম্পর্কে আরও জানার ক্ষেত্রে এখন নারীরা বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ করছেন। তবে একাকী ভ্রমণ বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে একটি ঝুঁকিপূর্ণও বটে। তবে কিছু বিষয় মেনে চললে এই ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হতে পারে। যখন একাকী ভ্রমণ করবেন তখন এই নিরাপত্তা টিপসগুলো মেনে চলতে পারেন।

১। গবেষণা করে নিন!
প্রস্তুতি হলো সফলতার চাবি। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা। ভ্রমণের আগে ও ভ্রমণকালীন কতোটা গবেষণা করতে হবে সেটির মাপকাঠি না থাকলেও জরুরী।

ইউজার রিভিউ সাইট এক্ষেত্রে সত্যিই উপকারী। হোটেল, হোস্টেল বা অ্যাপার্টমেন্ট সম্পর্কে জানার জন্যই নয়, বরং আশেপাশের পরিবেশ, সেখানকার মানুষ সম্পর্কেও জানতে এই সাইটে অনেক পরামর্শ থাকে। আগেভাগেই জেনে নিন ঐ শহর বা জায়গাটি কতোটা নিরাপদ।

২। কোথায় আছেন সেটি সম্পর্কে প্র্রিয়জনকে নিয়মিত অবহিত রাখুন
এক্ষেত্রে আপনার মা, বাবা, ভাই, বোন কিংবা বন্ধুও হতে পারে। আপনি কোথায় যাচ্ছেন বা আছেন সেটি সম্পর্কে নিয়মিত তাদেরকে জানান। এমনকি আপনি যদি ৫ মিনিটের জন্য বাইরের দোকানেও যান, সেটিও কাউকে জানিয়ে রাখুন। এটি মনে করবেন না যে আপনি তাদের বিরক্ত করছেন, বরং অপ্রত্যাশিত কিছুর চেয়ে নিরাপদ থাকা সবসময়ই ভালো।

girl-on-phone-calling-home

অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য, প্রিয়জনদের সাথে আপনার ভ্রমণের পুরো পরিকল্পনা শেয়ার করে রাখুন। এমন হতে পারে যে আপনি যেখানে গেছেন সেখানে ওয়াইফাই কিংবা নেটওয়ার্ক সিগন্যাল নাও থাকতে পারে।

আরেকটি অপশন হতে পারে যে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে পরিবার কিংবা বন্ধুদের সাথে কথা বলা। এতে আপনি কোথায় আছেন ও কেমন আছেন সেটি নিশ্চিত থাকতে পারে।

৩। ব্যক্তিগত অ্যালার্ম কিংবা হুইসেল বহন করতে পারেন
সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। আপনি নিরাপদ জায়গাতেই অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারেন। এক্ষেত্রে সাহায্য চাওয়ার পদ্ধতি জানা থাকার দরকার। তাই আপনি যেখানে যাচ্ছেন সেখানে কীভাবে ‘আগুন’ কিংবা সাহায্য করুন বলতে হবে সেটি জেনে নিতে পারেন। আর সাথে ব্যক্তিগত অ্যালার্ম কিংবা হুইসেল রাখতে পারে। এতে আপনার আশেপাশের লোককে বিপদের সংকেত দিতে পারবেন।

৪। স্মার্টফোনের যথাযথ ব্যবহার করুন
আমরা ভাগ্যবান যে এখন আমরা হাতের মুঠোতেই বিশ্বের সবকিছু জানতে ও জানাতে পারি। আর হাতের এই ডিভাইস বা স্মার্টফোন দিয়েও আপনি আপনার নিরাপত্তা বাড়াতে পারেন। ধরুন, যখন ট্যাক্সিতে করে কোথাও যাচ্ছেন তখন নাম্বার প্লেটটির ছবি তুলে রাখুন ও সেটি পরিবারের সদস্য কিংবা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

photo-with-smartphone

যদি চালক আপনার অধিকার কিংবা প্রত্যাশাকে ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করে তাহলে আপনি সহজেই পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে পারবেন। একইসাথে, আপনি ম্যাপ অ্যাপে আপনার ভ্রমণের রুট দেখে নিতে পারেন, যাতে আপনার চালক ভুলপথে আপনাকে নিয়ে যাচ্ছে কিনা সেটি বুঝতে পারবেন।

৫। আপনি একা সেটি বুঝতে দিবেন না
অনেক সময় বুঝতে পারা যেতে পারে, তবে আপনি কখনোই অপরিচিত কাউকে বলবেন না বা বোঝানোর চেষ্টা করবেন না যে আপনি একা। প্রয়োজনে ভুয়া কল করতে দ্বিধা করবেন না। গাড়িতে বসে ফোনে নিজে নিজেই বলতে পারেন আপনি এখন এখানে আছেন বা শিগগিরই তাদের কাছে পৌছে যাচ্ছেন।

৬। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অনুলিপি রাখুন
মূল কাগজই রাখতে হবে বা হার্ডকপি রাখতে হবে এমনি বলছি না, কিন্তু আপনি আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলোর ছবি তুলে বা স্ক্যান করে সেগুলো নিরাপদ অনলাইন সার্ভার যেমন ড্রপবক্স, গুগল ড্রাইভে রাখতে পারেন। এতে আপনি বিশ্বের যেকোনও প্রান্ত থেকেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডাউনলোড করতে পারবেন। যদি আপনার কাগজপত্রগুলো হারিয়ে বা চুরি হয়ে যায় তাহলে অ্যাম্বেসির মাধ্যমে কিংবা আইন প্রয়োগকারীর সংস্থার মাধ্যমে সেগুলো ফিরে পাওয়া কিংবা বাড়িতে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনলাইনে রাখা কপিগুলো সহায়তা করবে।

৭। অতিরিক্ত টাকা লুকিয়ে রাখুন
যখন আপনি একাকী ভ্রমণ করছেন তখন জরুরী ভিত্তিতে টাকা ধার নেওয়ার সুযোগ থাকে না। যদি কোনও কারণে আপনি টাকা শেষ হয়ে যায় অথবা কার্ড চুরি হয়ে যায় তাহলে করণীয় কিছু থাকে না। তাই অতিরিক্ত টাকা লুকিয়ে রাখলে জরুরী কাজে এটি সহায়তা করবে।

সচরাচর পাওয়া যায় এমন জায়গায় না রেখে বরং এমন জায়গায় রাখুন যেখানে কেউ সহজেই ধারণা করতে পারে না।

৮। সহজেই কাউকে বিশ্বাস করবেন না
আমরা বলছি না যে ভ্রমণের সময় কারও সাথে মিশবেন না বা বন্ধুত্ব গড়ে তুলবেন না। আমরা বলছি এক্ষেত্রে একটু সচেতন হতে। এমন অনেককেই পাবেন যারা সলো ট্রাভেলারদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ মানসিকতাসম্পন্ন এবং সহায়ক। যারা আপনাকে বিভিন্ন কাজে সহায়তা করবে।

তবে এমনও থাকতে পারে যে আপনার একাকীত্বের সুযোগ নিয়ে অনাকাঙ্খিত কিছু করতে পারে। আপনার পাশের রুমে কে থাকছে তার সম্পর্কে অন্যদের সাথে আলাপচারিতার মাধ্যমে জেনে রাখতে পারেন। যার সাথে পরিচিত হচ্ছেন সম্ভব হলে তার সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল দেখে নিতে পারেন।

অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি থেকে যতো দ্রুত সম্ভব বেরিয়ে আসুন।

making-friends-abroad

৯। তাল মিলিয়ে চলুন
যতোটা সম্ভব তাল মিলিয়ে চলুন। যেমন, আপনার আশেপাশের নারীরা যেমন পোশাক পরছেন তেমনটা পরার চেষ্টা করুন। সবসময় ক্যামেরা কিংবা ম্যাপের দিকে তাকিয়ে না থেকে আশেপাশে দৃষ্টি রাখুন ও একই পরিবেশ রাখার চেষ্টা করুন।

১০। স্মার্ট হয়ে উঠুন
একাকী বিশ্ব ভ্রমণের ক্ষেত্রে আপনি ‘সুপার-স্মার্ট’ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভ্রমণের ক্ষেত্রেও আপনি স্মার্ট থাকুন। সাধারণ বোধ থেকেই আপনি অপরিচিত কারও সাথে এমনকি একাকী অন্ধকার স্থান এড়িয়ে চলুন। জেনে রাখুন আশেপাশে পুলিশ কিংবা অ্যাম্বেসি কোথায় আছে। আপনার জিনিষপত্র নিরাপদে রাখুন। সর্বোপরি নিজের বোধকে কাজে লাগান।

এক্সপেডিয়া অবলম্বনে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন