আমাদের দেশে পানীয় হিসেবে চা অনেক বেশি জনপ্রিয়। তবে পানীয় হিসেবে কফির জনপ্রিয়তাও বাড়ছে দিন দিন। শরীর ও মনকে দ্রুত চাঙ্গা করে তোলার জন্য সারা বিশ্বেই পাণীয় হিসেবে কফির অবস্থান এক নম্বরে।
কিন্তু কফি আমাদের শরীরে ঠিক কীভাবে কাজ করে অর্থাৎ কীভাবে প্রভাবিত করে আমাদের শরীরকে তা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর আলাদাভাবে কফি প্রভাব ফেলে। চলুন জেনে নেয়া যাক-
মস্তিষ্ক
রাত জাগার জন্য বা ঘুম তাড়ানোর জন্য কফির কোন বিকল্প নেই। কফিতে রয়েছে ক্যাফেইন। ক্যাফেইন একটি উদ্দীপক। গবেষণায় দেখা গেছে, কফি পান করলে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বেড়ে যায় এবং কাজে মনোযোগ দেয়া সহজ হয়।
আমাদের মস্তিষ্কে সিনাপ্সের মাধ্যমে যখন নিউরোট্রান্সমিটার প্রবেশ করে তখন মস্তিষ্ক কাজ করে। আর কফি এই নিউরোট্রান্সমিটারের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ফলে আমাদের মস্তিষ্ক আরও কার্যকর হয়ে উঠে।
কফি পানের ৩০ মিনিটের মধ্যে আপনি মানসিকভাবে আরও সজাগ হয়ে উঠবেন এবং সেটা কয়েকঘণ্টা কাজ বলবৎ থাকবে। তবে অতিরিক্ত কফি পান করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
চোখ
ক্যাফেইন আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে উজ্জীবিত করে তোলে। আমাদের মস্তিষ্কে অ্যাড্রেনালিন প্রবাহ বৃদ্ধি করে। গবেষকেরা বলছেন, কফি পান করলে আপনার চোখের মণি প্রসারিত হয়। তবে এটা এতোই সামান্য যে আয়নায় তাকালে আপনি তা দেখতে পাবেন না, তবে আপনি এটা উপলব্ধি করতে পারবেন।
মুখ এবং দাঁত
কফিতে পরিমাণমত পলিফেনল এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট থাকে যা আমাদের মুখের ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু ধ্বংস করে। তবে দুধ, চিনি বা অন্য কিছু মেশালে পলিফেনলের কার্যকারিতা অনেকটাই কমে যায়। একইসাথে কফি আমাদের দাঁত শক্ত করে এবং ক্ষয়রোধ করে।
হৃৎপিণ্ড
কফি সবার প্রথমে প্রভাব ফেলে আমাদের হৃৎপিণ্ড এবং কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমে। এককাপ কফি খাওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যেই আমাদের রক্তচাপ এবং নাড়ির গতি ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়ে যায়। দিনে ২ কাপ কফি খুব একটা ক্ষতিকর নয়। তবে তার বেশি হলে বিভিন্ন হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
পাকস্থলী
অনেকে খাওয়ার পর কফি খেয়ে থাকেন। এর পিছনে উপযুক্ত কারণ রয়েছে। কফি আমাদের পাকস্থলীর রিসেপটরগুলোকে উজ্জীবিত করে। ফলে আমাদের পাচক গ্রন্থিগুলোর কার্যকারিতা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়ে যায় এবং এতে আমাদের হজম প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়। তবে কফির ক্ষতিকর দিকও রয়েছে।
ক্যাফেইন আমাদের পাকস্থলীর প্রবেশস্থল আর খাদ্যনালীর শেষ অংশকে সংযুক্তকারী স্পিঙ্কটারকে দুর্বল করে দেয়। ফলে পাকস্থলী থেকে খাবার খাদ্যনালী দিয়ে উপরে উঠে আসে। এছাড়াও পেটে অস্বস্তি লাগা, এসিড রিফ্লাক্স এবং বুক জ্বালাপোড়ার মত ঘটনাও ঘটে কফি পান করার কারণে।
অন্ত্র
কফি আমাদের অন্ত্রের কার্যক্রমকে দ্রুততর করে দেয়। ফলে কফি খাওয়ার পর পরই প্রকৃতির সাড়া দেয়ার দরকার হতে পারে।
মূত্রাশয়
আশেপাশে বাথরুম না থাকলে কফি পান করাটা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কফি মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে যার ফলে আপনার কিডনির ভেতরে অবস্থিত ছোট ছোট নালীগুলোর মধ্যে পানি চলাচল বেড়ে যায়।
ফলশ্রুতিতে আপনার প্রসাবের বেগ আসবে।যদিও যেকোনো ধরণের পানীয় খেলেই এরকমটা ঘটার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু ক্যাফেইনে উদ্দীপক থাকে বলে এই সম্ভাবনা আর অনেক বেশি।
রক্ত
যদিও রক্তে কোলেস্টেরল বাড়াতে কফি খুব একটা দায়ী নয় কিন্তু গবেষণা বলছে কফির বীজে তেল থাকে যা রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়। তবে উন্নত অনেক কফির বীজেই এই তেল পরিশোধন করে বিক্রি করা হয়ে থাকে।