"Prosthesis " শব্দটি প্রাচীন গ্রিক শব্দ “Prósthesis" থেকে নেয়া, যার অর্থ দাঁড়ায় – যোগ হওয়া, যুক্ত হওয়া কিংবা বিবর্ধন করা । এটি এক বায়ো-মেকানিক্যাল প্রক্রিয়া, যে প্রক্রিয়ায় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন, হাত, পা – একটি কৃত্রিম অঙ্গের মাধমে প্রতিস্থাপন করা হয়।
ধারণা করা হয়, এই প্রক্রিয়াটি প্রথম কাজে রুপ দেন মিশরীয়রা। বিভিন্ন মমি ও যুদ্ধ ধ্বংসাবশেষে মানুষের হাড়ের সাথে কাঠের হাত, পা, আঙুল খুজে পাওয়া গেছে। এই নিয়ে জল্পনা, কল্পনা বা রুপকথারও শেষ নেই।
গ্রিক উপকথায় আছে, এক সাধারন মানুষ শুধুমাত্র দেবতাকে খুশি করার জন্য নিজের শিকলে বাঁধা পা কেটে ফেলে দিয়ে বন্দিশালা থেকে পালিয়ে যায় । পরে সে এক গাছের গুড়ি দিয়ে তার জন্য নকল পা তৈরি করে । ধর্মগ্রন্থতেও এর উল্লেখ পাওয়া যায় যেমন প্রাচীন "ঋগ্বেদ" এ যার নমুনা রয়েছে !!
এবার আসুন, একটু আলোচনা করা যাক, জিনিসটি কি ??
না, খুব বেশি জটিল কিছু না । আমরা প্রায়ই দেখি অনেক শিশু শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ অবস্থায় জন্ম নেয়, যেমন অনেক শিশুর হাত থাকে না, কব্জির পরের অংশ থাকে না কিংবা হাঁটুর নিচের অংশ, অনেক শিশু আবার পা ছাড়াই জন্মায় । আবার, বিভিন্ন দুর্ঘটনায় অনেকের হাত-পা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মাঝে মাঝে কিছু ক্ষেত্রে হাত-পা কেটে ফেলতে হয় । যুদ্ধক্ষেত্রে মাঝে মাঝে পরিস্থিতি খারাপ থাকলে সৈনিকের হাত পায়ের বিভিন্ন অংশ তৎক্ষণাৎ কেটে ফেলতে হয় । এই মানুষ গুলোকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতেই এই "প্রসথেসিস " প্রক্রিয়ার আবির্ভাব ।
ধরা যাক, একটি শিশু হাত ছাড়াই জন্ম গ্রহণ করলো অথবা যুদ্ধাহত একজন সৈনিক এর হাত কেটে ফেলা হলো । তখন তাদের শরীরের সাথে কাঠের কিংবা ধাতুর তৈরি একটি নকল হাত যুক্ত করে দেয়া হয়। এই নকল হাতের ব্যবহার আসল হাতের মত না হলেও অনেকাংশেই এর ব্যবহার জীবনকে তুলনামূলক ভাবে সহজ করে ।
বর্তমানে শুধু হাত-পা নয়, হাত-পায়ের আঙুলও তৈরি হচ্ছে। এগুলোতে ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হচ্ছে সিলিকন। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা এই প্রক্রিয়াটিরকে আরও ত্বরান্বিত করেছে মাইক্রো-প্রসেসর এবং বিভিন্ন সেন্সরের ব্যবহারের মাধ্যমে । মাইক্রো-প্রসেসর এবং সেন্সরের সমন্বয় কৃত্রিম অঙ্গগুলোকে ঠিকমত সঞ্চালনে সহায়তা করে।
যেমন, কেউ হাঁটার সময় তার প্রসথেটিক লেগ বা কৃত্রিম পা'কে, নিজের ইচ্ছা মত সঞ্চালন করতে পারবে অর্থাৎ পায়ের গোড়ালি কতটুকু বাঁকা হবে বা হাঁটু কতটা নিচু হবে – তা নিজেই নিয়ন্ত্রন করতে পারবে, যেটা সাধারণ কাঠের পায়ে সম্ভব না।
Myoelectric Prosthesis – এই প্রক্রিয়ার অগ্রগতির আরেকটি মাইলস্টোন !!
এই প্রক্রিয়ায় বৈদ্যুতিক সিগন্যালের মাধ্যমে কৃত্রিম অঙ্গ নিয়ন্ত্রন করা যায় । সাধারনত, কৃত্রিম অঙ্গের ভিতরে ব্যাটারি থাকে এবং মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের সাথে চিপ সংযুক্ত থাকে। এর মাধ্যমে কৃত্রিম হাতকে মুষ্ঠীবদ্ধ করা যায়, হাতের কব্জি বাকানো যায় একেবারে আসল হাতের মতো । সাধারণত, উন্নত দেশগুলোতে যুদ্ধাহত সৈনিকদের এই ধরনেই কৃত্রিম অঙ্গ যুক্ত করে দেয়া হয় ।
এই প্রক্রিয়ায় বিবর্তনের আরেকটি ধারা হলো Cosmesis ।এই প্রক্রিয়াটি অধিক ব্যয়বহুল । সাধারনত সিলিকন বা পিভিসি( Polyvinyl Chloride ) দিয়ে কৃত্রিম অঙ্গ গুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে করে আসল অঙ্গ আর কৃত্রিম অঙ্গের তফাৎ বোঝা না যায় । এমন কি, অঙ্গগুলোতে পশমও বিদ্যমান। ব্যবহারকারীর শরীরের উজ্জ্বলতার সাথে মিল রেখে এই অঙ্গগুলো তৈরি করা সম্ভব, যদিও বিনিময়ে অর্থের পরিমানও কম নয় !
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই প্রক্রিয়ার প্রভাব সাড়া জাগানো। মানুষের হৃদপিণ্ডের কৃত্রিম ভাল্ভ তৈরি করা সম্ভব এই প্রক্রিয়ায়। যদিও উন্নত সুবিধা সমূহ অনেক বেশি ব্যয়-বহুল, তবে সস্তা উপায়ের তৈরি কৃত্রিম অঙ্গ দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়া অনেকাংশেই সম্ভব । সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে, মানুষের মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধীত্বা বা অক্ষমতা দূরীকরণে এই প্রক্রিয়া অনেকাংশেই সফল।
অস্কার পিস্টোরিয়াস, দক্ষিণ আফ্রিকার একজন অ্যাথলেট যে কিনা ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে ৪০০ মিটার দৌড়ে অংশগ্রহণ করেছিলো। ব্লেড রানার নামে পরিচিত এই দৌড়বিদের দুই পা নেই। ফিবুলাবিহীন অবস্থায় পিস্টোরিয়াস জন্মগ্রহণ করেন। ১১ মাস বয়সে হাঁটু ও পায়ের গোড়ালি অংশ বিচ্ছিন্ন করতে হয়। পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্রাঙ্কোইজ ভ্যান্ডারওয়াট পিস্টোরিয়াসের পা হিসেবে ব্লেড আকৃতির অতিরিক্ত অংশ স্থাপন করেন।