প্রাচীনকালের যুদ্ধে সৈন্যদের প্রধান অস্ত্র ছিল তরবারি। বিশাল বিশাল ধারালো তলোয়ার নিয়ে হাজার হাজার সৈন্যরা দিনভর যুদ্ধ করে যেত। যুগ পাল্টানোর সাথে সাথে পাল্টেছে হাতিয়ার। কামান, বন্দুক প্রভৃতি যোগ হওয়ার পরেও অনেককাল পর্যন্ত তরবারি ছিল অন্যতম অস্ত্র। এই গত উনবিংশ শতাব্দীতেও তলোয়ারের ব্যবহার ছিল ব্যাপক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ধীরে ধীরে অস্ত্রের আধুনিকায়ন হতে থাকে। এখন আর আগের মত তলোয়ার হাতে নিয়ে মুখোমুখি লড়াই হয় না। কিন্তু খেলা হিসেবে তলোয়ারের লড়াই এখনও বেশ জনপ্রিয়। আর তাই এই আধুনিক যুগেও তলোয়ারের খেলা বা ফেন্সিং (Fencing) অন্যতম একটি খেলা এবং এর স্থান হয়েছে অলিম্পিকেও।
ফেন্সিং-এর জন্ম হয় স্পেনে, সেই দেশে এর ওপর অনেক প্রাচীন বই পাওয়া যায়। আধুনিক ফেন্সিং সর্বপ্রথম শুরু হয় ১৮শ শতাব্দীর দিকে, ইতালিতে। সেই দেশে ফেন্সিং বেশ জনপ্রিয়তা পায় এবং পরে ফ্রান্সেও এই খেলা ছড়িয়ে পড়ে। ফ্রেঞ্চরাই ধীরে ধীরে ফেন্সিংকে আরও উন্নত এবং আধুনিক করে তোলে। ১৮৯৬ সালের দিকে ফেন্সিং গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে স্থান পায়।
ফেন্সিং খেলার হাতিয়ার তিনটি- ফয়েল, (Foil), এপি (Epee) এবং স্যাবার (Sabre)। ফেন্সিং খেলোয়াড়রা এই তিনটি হাতিয়ারের যেকোনো একটি দিয়ে খেলতে পারেন। এক এক খেলোয়াড় এক এক হাতিয়ারে পারদর্শী হন।
ফয়েলঃ
ফয়েল মূলত এক ধরণের হালকা তরবারি। এর ওজন হয়ে থাকে ৫০০ গ্রামের মত। এই হাতিয়ারের খেলায় প্রতিপক্ষের ঘাড়, পিঠ অথবা উরুর ওপরে আঘাত করা যায়। যদিও ফেন্সিং খেলায় প্রতিপক্ষকে আহত করার মনোভাব নিয়ে কেউ খেলেন না, কিন্তু অনেক সময়েই খেলোয়াড়রা আহত হয়ে থাকেন। ফয়েলের খেলায় দুই খেলোয়াড়ের লক্ষ্য থাকে পয়েন্ট অর্জন। শরীরের উপরোক্ত জায়গাগুলোতে তরবারি দিয়ে স্পর্শ করতে পারলেই একজন খেলোয়াড় পয়েন্ট পেয়ে থাকেন। তরবারির প্রান্ত দিয়ে স্পর্শ করালে তা গণনায় আনা হয় না, বরং তরবারির মাথা দিয়ে স্পর্শ করতে হয়, যাকে ইংরেজিতে Tip বলা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পর যার পয়েন্ট বেশী, তিনিই জিতে থাকেন।
এপিঃ
এপি হল ফয়েলের মতোই একটি তরবারি, তবে এর ওজন বেশী, প্রায় ৭৭০ গ্রামের মত। এপি দিয়ে খেলা হলে শরীরের যেকোনো স্থানে স্পর্শ করলেই খেলোয়াড় পয়েন্ট পেয়ে থাকেন।
স্যাবারঃ
ফেন্সিং-এর অস্ত্রগুলোর মধ্যে স্যাবার সবচেয়ে হালকা হয়ে ত্থাকে। এর ওজন অবশ্যই ৫০০ গ্রামের মধ্যে হতে হয়। স্যাবারের খেলায় কোমরের ওপরে যেকোনো স্থানেই স্পর্শ করা যায়। যে খেলোয়াড় স্যাবার নিয়ে খেলে তাকে অনেক দ্রুত মুভ ও অ্যাটাক করতে হয়। স্যাবারে দুই ধরণের আলো দেখতে পাওয়া যায়, লাল ও সবুজ আলো। কোমরের উপরে যেকোন স্থানে স্যাবারের স্পর্শ হলে এই লাল বা সবুজ আলো জ্বলে উঠে।
অন্যান্য অনেক খেলার মত ফেন্সিং খেলায়ও খেলোয়াড়রা নির্দিষ্ট পোশাক পড়ে থাকেন। আত্মরক্ষার জন্য ফেন্সিং খেলোয়াড়রা হাতে গ্লাভস, শরীরে জ্যাকেট, মুখে মাস্ক ও মাথায় হেলমেট পড়ে থাকেন। ফেন্সিং-এর পোশাকের কাপড়গুলো কটন বা নাইলনের তৈরি হয়ে থাকে।