১৯৫৩ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত মধ্য আমেরিকার দেশ কিউবাতে সংঘটিত হয় কিউবা বিপ্লব। এই সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে বিপ্লবের নায়ক ফিদেল ক্যাস্ট্রো কিউবার সরকার প্রধান জেনারেল ফুলজেন্সিও বাতিস্তাকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেন।
১৯৫৩ সালের জুলাই মাসে এই বিপ্লব শুরু হয়। অনেকগুলো বিক্ষিপ্ত বিপ্লব ও সংঘর্ষের পর ১৯৫৯ সালের ১লা জানুয়ারি এই বিপ্লবের বিজয় ঘটে। কিউবাতে ফিদেল কাস্ত্রো একদলীয় কমিউনিস্ট শাসন প্রবর্তন করেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে ভূতপূর্ব সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগিতায় এই বিপ্লব পরিচালিত হয়েছিল।
বিপ্লবের বীজ বপন হয় ১৯৫২ সালেই। সেবছরের ১০ই মার্চ জেনারেল ফুলজেন্সিও বাতিস্তা কিউবার প্রেসিডেন্ট কার্লোস পিয়েরে সকারাসকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে ও সকল নির্বাচন বাতিল করে দেয়। এই ঘটনা দেশটির এক তরুণ আইনজীবী ফিদেল ক্যাস্ট্রোর মধ্যে ক্রোধের জন্ম দেয়। শুরু হয় তার বিপ্লব যা পরবর্তী ৭ বছর চলেছিল।
১৯৫৩ সালের ২৬শে জুলাই ফিদেল ক্যাস্ট্রো সান্তিয়াগোর সামরিক ব্যারাকে আক্রমণ করেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন এবং গ্রেফতার হন। তাকে ১৫ বছরের সাজা দেয়া হলেও ১৯৫৫ সালে সর্বোচ্চ ক্ষমতাবলে প্রেসিডেন্ট বাতিস্তা তাকে মুক্তি দেন।
কিন্তু ফিদেল ক্যাস্ট্রো থেমে থাকেননি। তিনি মেক্সিকোতে গিয়ে নতুন করে বিপ্লবী সংগঠিত করতে থাকেন। ১৯৫৬ সালের ২রা ডিসেম্বর ফিদেল ক্যাস্ট্রো আবার বাতিস্তার সৈন্যদের কাছে পরাজিত হন এবং পালিয়ে সিয়েরা মায়েস্ত্রা চলে যান।
এরপর ফিদেল ক্যাস্ট্রোর বিপ্লবীরা সাড়া দেশজুড়ে গেরিলা আক্রমণ চালাতে শুরু করে। ক্রমাগত আক্রমণের ফলে প্রেসিডেন্ট বাতিস্তা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং ১৯৫৯ সালের ১লা জানুয়ারি পালিয়ে যায়। সেবছর ফেব্রুয়ারিতে ফিদেল ক্যাস্ট্রো প্রেসিডেন্ট হন এবং বাতিস্তার ৫৫০ জন সহযোগীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
নিজেকে একনায়ক দাবী করে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় ফিদেল ক্যাস্ট্রো কিউবাতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করে। সেদেশের সকল নির্বাচন বাতিল করা হয় এবং যারা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর বিরোধিতা করেছিল সবাইকে হত্যা করা হয় অথবা জেলে প্রেরণ করা হয়।
সাম্প্রতিক ইতিহাসে কিউবা বিপ্লব এবং কিউবাতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর ফলে মধ্য আমেরিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খুব কাছে সোভিয়েত ইউনিয়নের ঘাঁটি স্থাপিত হয় যা স্নায়ুযুদ্ধে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।