আজকাল সময়ের হিসাব সহজেই বুঝা যায়। হয় হাত ঘড়ি দেখে বা দেয়াল ঘড়িতে সময় দেখে। আর মোবাইল ফোন তো আছে, তাও আমাদের সময় বলে দেই।
কিন্তু এই সময় ধরে রাখার প্রচেষ্টা মানুষের আদিকাল থেকেই। অনেক রকম পদ্ধতির মাধ্যমে মানুষ সময়কে সীমাবন্দি করার চেস্টা করে আসছে।
প্রাচীন মিশরীয় সময়কাল থেকে ঘড়ির বিভিন্ন ধারনা পাওয়া যায়। চলো আজ জেনে নেই এমন সব ঘড়ির জীবন বৃত্তান্ত।
প্রথমে তারা অনুমানের উপর ভিত্তি করে, সূর্যের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে সময় নির্ধারণ করতো। এই পদ্ধতিটি ছিলো সূর্যঘড়ি বা ছায়াঘড়ি নামে পরিচিত। ‘সূর্যঘড়ি’ বানাতে প্রাচীনকালে মানুষ একটা লাঠি পুতে রাখতো খোলা জায়গায়। তারপর সেই লাঠিকে ঘিরে ছোট বড় নানা চক্র দিয়ে দেয়। চক্রর ওপর লিখে রাখে বিভিন্ন সংকেত যা দিয়ে নানা প্রহর বুঝানো হতো। লাঠির ওপর সূর্যের আলো পড়লে সেই আলো পড়তো মাটিতে আর সেখান থেকে সময় নির্ধারন করা হতো। এমন একটি ঘড়ি আজো কিন্তু বার্লিন মিউজিয়ামে রক্ষিত।
দিনের বেলা না হয় সূর্যের আলো দেখে সময় পাওয়া গেল কিন্তু রাতের বেলা কিভাবে সময় পাওয়া যাবে ভাবিয়ে তুলল মানুষকে। চোখ গেল রাতের আকাশে। রাতের আকাশে এমন এক নক্ষত্রের সন্ধান করতে লাগলো যা সব সময় এক দিক থেকে অন্যদিকে যাবে। অবশেষে পাওয়া গেলো। দেখতে খুব উজ্জল আর একটু লম্বা। এটা আকাশের উত্তর দিকে ওঠে আর ধীরে ধীরে দক্ষিন দিকে এগিয়ে যায়, শুধু তাই না তারা মেরুকে কেন্দ্র করে ঘড়ির কাঁটার মত ঘুরতে থাকে যা দিয়ে অনায়াসে সময় নির্ধারন করা যায়। এর নাম ‘ক্যাসিওপিয়া’। দেখতে অবিকল ইংরেজী W অক্ষরের মত। এই ‘তারাঘড়ি’ প্রথম আবিস্কার করে জার্মানরা।
খ্রীষ্ট পূর্ব ১৪০০ সাল নাগাদ মিশরীয়রা প্রথম পানি ঘড়ি আবিস্কার করেন । কিভাবে কাজ করতো ‘পানিঘড়ি’? একটি ফানেলের মধ্যে পানি ভরা হলো, সেই ফানেলের নীচে লাগানো হল এক সরু পাইপ। ফানেলের পানি এক সরু পাইপ বেয়ে বেয়ে পড়তো একটি জারে। সেই জারের মধ্যে একটা হালকা কর্ক রেখে দিতো তারা। পাত্রের অপর প্রান্তে লাগিয়ে দেয়া হতো চাকা যুক্ত একটা সময় নির্দেশক কাঁটা। ফানেল থেকে ধীরে ধীরে পানি চলে আসতো জারে, জারে যত পানি পড়তো কর্ক ততই ভেসে উঠতো। সেই সঙ্গে সময় নির্দেশক কাঁটা ঘুরতে আরম্ভ করতো। যা বলে দিত সময়।
এবার আসা যাক বালুঘড়ি কিভাবে কাজ করে।প্রায় বার’শ বছর আগে প্রচলন শুরু হয় এই ঘড়ির। বিভিন্ন বস্তু দিয়ে এটি তৈরি করা যেতো।
প্রাচীনকালের বালুঘড়ি তোমরা ঘরে বসেই বানাতে পারবে। এর জন্য কি করতে হবে তা বলে দিচ্ছি।
প্রথমেই মাঝারি আকারের দুটি বোতল নেই। বোতল দুটির মুখগুলো জোড়া লাগিয়ে দেয়ার আগে একটা বোতলের ভিতর ৫-৭ কাপ বালু যোগ করে দিতে হবে। এরপর বোতলগুলো জোড়া লাগিয়ে দিলে অপেক্ষাকৃত মিহি দানাগুলো আগে নিচের বোতলে জমা হবে, এবং বড় দানাগুলো আস্তে আস্তে পড়বে। এবারে বালুর দানাগুলো পড়ার সাথে সাথে নিচের বোতলে সময়রেখা দাগাঙ্কিত করে রাখতে হবে। এরপর থেকে এই নির্দিষ্ট পরিমাণ বালুর দানার জন্যে নির্দিষ্ট সময় পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, বোতল যত বড় হবে, ততবেশি সময় আমরা নির্ধারণ করতে পারবো।
প্রাচীনকালে সময় এতোটা কাজে না লাগলেও বর্তমানে সময় কতোটা মূল্যবান তা না বললেও চলে। তোমরা হয়তোবা টিভির পর্দায় ১০০ মিটার দৌড় বা ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতার দেখেছো, সেখানে প্রথম এবং দ্বিতীয়ের মধ্যে সময়ের তফাৎ থাকে কয়েক মিলিসেকেন্ডের। আর ফর্মুলা রেসে তো একটা গাড়ির সাথে আরেক গাড়ির পার্থক্য থাকে কয়েক সেকেন্ডের।