যারা ভৌতিক কাহিনী পছন্দ করে, তাদের মধ্যে সবাই প্লানশেটের নাম শুনে থাকা হবে। প্লানশেট করে ভূত বা আত্মাকে ডেকে আনা হয়। প্লানশেটের শাখারই আরেকটি বস্তু হল উইজা বোর্ড (Ouija Board)। যদিও এ জিনিসটি পশ্চিমা বিশ্বের, কিন্তু এ উপমহাদেশেও এর জনপ্রিয়তা কম নয়। উইজা বোর্ডে ইংরেজি A-Z সকল অক্ষর এবং সেই সাথে 0-9 পর্যন্ত সংখ্যা দেয়া থাকে। এর পাশাপাশি “YES”, “NO”, এবং “GOOD BYE” লেখা ৩টি ঘর থাকে।
দরজা জানালা লাগিয়ে ঘর অন্ধকার করে উইজা বোর্ড সামনে রেখে একমনে মৃত কাউকে ডাকলে তার আত্মা চলে আসে এবং প্রশ্ন করলে উইজা বোর্ডের সাহায্যে উত্তর দেয়। কিন্তু এখানে সামান্য কারসাজি আছে। আত্মাকে প্রশ্ন করার সময় নিজের আঙ্গুল উইজা বোর্ডের ওপর রাখতে হয়, যদি আত্মা এসে থাকে, তাহলে দেখা যাবে যে আঙ্গুলটি নিজে নিজেই বোর্ডের ওপর ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। অর্থাৎ যদি জিজ্ঞেস করা হয়, “আপনি কি এসেছেন?”, তাহলে দেখা যাবে আঙ্গুলটি “YES” লেখা ঘরে এসে থেমে যাচ্ছে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন যে আত্মা ডাকার সময় মানুষের মন এমনিতেই একটু অস্থির হয়ে থাকে, খুব সাহসী মানুষ হলেও মনের ওপর খানিকটা চাপ পড়ে। আঙ্গুল ঘুরে বেড়ানোর পেছনে যার আঙ্গুল, তারই হাত থাকে, অর্থাৎ অবচেতন মনে তিনি নিজে নিজেই উত্তর দিচ্ছেন কিন্তু তার মনে হচ্ছে যে অন্য কেউ তার আঙ্গুল নাড়িয়ে দিচ্ছে। এ তো গেল উইজা বোর্ডের কারসাজির কথা, এবার দেখা যাক এর সাথে বিমান চালনার কি সম্পর্ক।
সমুদ্রের মাঝখানে যুদ্ধবিমান ধারণ করার জন্য এবং বিমান পরিবহনের জন্য বিমানবাহী রণতরী বা Aircraft Carrier ব্যবহার করা হয়। এসব জাহাজে প্রায় ২০-৫০টি বিমান ধারণ করা যায় এবং বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য রানওয়ে থাকে। এই বিশাল জাহাজের কোন কোণে কোন বিমান আছে, কোন বিমান কোথায় ল্যান্ড করবে, কোথা থেকে টেক অফ করবে এসব নিয়ন্ত্রণ করতে করতে জাহাজের ফ্লাইট কন্ট্রোলারদের মাথা খারাপ হবার দশা হয়।
যেকোনো বিশাল রণতরীর ফ্লাইট কন্ট্রোল ডেকে গেলে দেখা যাবে নাবিকরা বিশাল এক বোর্ডে খেলনা বিমান রেখে খেলছেন। যিনি ফ্লাইট কন্ট্রোল ডেক তদারকি করেন তাকে বলা হয় Air Boss। আসলে যা ভাবা হচ্ছে, তা নয়। এই খেলনা বিমানগুলো হল জাহাজে থাকা বিমানগুলোর প্রতিকৃতি, আর বোর্ডটি হল বিমানের ফ্লাইট কন্ট্রোল ডেক এবং হ্যাঙ্গার ডেকের প্রতিকৃতি। ফ্লাইট কন্ট্রোল ডেকে বিমান উড্ডয়ন এবং অবতরণ করে, আর হ্যাঙ্গারে অবতরণকৃত বিমানগুলোকে পার্ক করে রাখা হয়। এই বোর্ডটি উইজা বোর্ডের আদলে তৈরি, এবং উইজা বোর্ডের মত যোগাযোগ স্থাপনের কাজেই ব্যবহার হয় বলে একেও উইজা বোর্ড বলেই ডাকা হয়। নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর জন্য এই উইজা বোর্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস।
একটি বিষয় এখানে বলা জরুরী যে বিমান উড্ডয়ন অবতরণ এসব নিয়ন্ত্রণের জন্য অটোমেটেড সফটওয়্যার বা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে যান্ত্রিক ত্রুটি বা কোন কারণে যদি অটোমেটেড সফটওয়্যার বা প্রযুক্তি কাজ না করে তবে উইজা বোর্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ, কোন কারণে যদি অটোমেটেড সফটওয়্যার থেকে কোন রেসপন্স না পাওয়া যায় তবে উইজা বোর্ড ব্যবহার করে বিমান উড্ডয়ন বা অবতরণের বিষয় সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায়।
উইজা বোর্ড সাধারণত ৬ ফিটের মত লম্বা এবং ২.৫-৩ ফিটের মত চওড়া হয়ে থাকে। বোর্ডটি দুই তলাবিশিষ্ট, উপরের বোর্ডটি ফ্লাইট ডেকের প্রতিকৃতি, এবং নিচেরটি হ্যাঙ্গারের প্রতিকৃতি। এই বোর্ডটি এতই নিখুঁত যে ডেকের মাপ অনুযায়ী এটি তৈরি হয়। ডেকের প্রতি ফুটের বিপরীতে এক ইঞ্চির ১/১৬ ভাগ হিসেব করে বোর্ডটির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ নির্ণয় করা হয়। অর্থাৎ, ফ্লাইট ডেক বা হ্যাঙ্গার যদি ১৫০০ ফিট লম্বা হয়, তাহলে উইজা বোর্ডের দৈর্ঘ্য বের করতে এভাবে হিসেব করতে হবে- আমরা জানি, এক ফুট=১২ ইঞ্চি, অর্থাৎ, ১৫০০ ফিট=১৫০০X১২=১৮০০০ ইঞ্চি। ওইজা বোর্ডে ১২ ইঞ্চি=১/১৬ ইঞ্চি, ১ ইঞ্চি=১/১৯২ ইঞ্চি, ১৮০০০ ইঞ্চি=১৮০০০/১৯২ ইঞ্চি, ১৮০০০ ইঞ্চি=৯৩.৭৫ ইঞ্চি। আবার, ১ ফুট=১২ ইঞ্চি, সুতরাং, ৯৩.৭৫ ইঞ্চি=৭.৮১ ফুট। অর্থাৎ, ১৫০০ ফিটের একটি ডেককে উইজা বোর্ডে দেখাতে হলে বোর্ডের মাপে তা মাত্র ৭.৮১ ফিটে এসে দাঁড়াবে। উইজা বোর্ডে একই সাথে প্রায় ৭০টি বিমানের অবস্থান প্রদর্শন করা যায়। কোন বিমান হ্যাঙ্গারের কোথায় আছে, এবং ফ্লাইট ডেকের কোন অংশে কোন বিমান উড্ডয়ন বা অবতরণ করবে, তা উইজা বোর্ড দেখে সহজেই বের করে ফেলা যায়।