মস্তিষ্ক গবেষণায় আরও এক ধাপ

 

     

আধুনিক স্মার্টফোনের কারণে আমরা অনেকেই হয়তো GPS সম্পর্কে জানি। GPS হল Global Positioning System, যেটাতে অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ ব্যবহার করে অবস্থান নির্ণয় করা হয়। ঠিক এই GPS-এর মতোই আমাদের মস্তিষ্কেরও স্মৃতি ও ইন্দ্রিয় ব্যবহার করে স্থান নির্ণয়ের ক্ষমতা রয়েছে।

আর মস্তিষ্কের এই কার্যকারিতা আবিস্কারের ফলে ২০১৪ সালের চিকিৎসা বিদ্যায় নোবেল পুরস্কারটি বাগিয়ে নিলেন ৩ বিজ্ঞানী, তাঁরা হলেন- জন ও’কেফে, এডভার্ট মোজার এবং তাঁর স্ত্রী মে-ব্রিট মোজার।

                                          

 

মনে কর তুমি বাসার সামনে দাঁড়িয়ে স্কুলে যাবার চিন্তা করছ, তোমার বাসা যদি শান্তিনগরে আর স্কুল যদি মতিঝিলে হয়, তাহলে তুমি তোমার মস্তিষ্কে স্কুলে যাবার রাস্তার একটা ম্যাপ তৈরি করে ফেলতে পারো। কিন্তু এই ম্যাপের কোথায় তুমি আছো তা যদি বুঝতে না পারো, তাহলে কখনোই গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হবেনা।

আমাদের মস্তিষ্কে বিশেষ কিছু কোষ আছে, যারা স্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে আলোড়িত হয়, এদেরকে বলে স্থানিক কোষ (Place Cells), এই স্থানিক কোষগুলো ১৯৭১ সালে আবিষ্কার করেন জন ও’কেফে, এবং তারপর মোজার দম্পতি এই গবেষণা চালিয়ে যান। ও’কেফে তাঁর গবেষণাগারের কিছু ইঁদুরের ওপর গবেষণা করে দেখেন যে স্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে ইঁদুরের মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস ( Hippocampus) নামক অংশের বেশ কিছু স্নায়ু আলোড়িত হয়, এই স্নায়ুগুলোর আলোড়ন স্থাননির্ভর, আর এই আলোড়নের সাথে তাল মিলিয়ে আরও কিছু নির্দিষ্ট কোষে আলোড়ন ঘটে। এই কোষগুলোকেই ও’কেফে স্থানিক কোষ বলে নামকরণ করেন।

                                                

 

স্থানিক কোষ আবিস্কারের প্রায় ত্রিশ বছর পর মোজার দম্পতি আবিস্কার করেন মস্তিষ্কের সজ্জা কোষ (Grid Cells), এই কোষগুলো ব্যবহার করেই আমরা স্মৃতি ও ইন্দ্রিয়ের সাহায্য নিয়ে অবস্থান নির্ণয় করে থাকি। স্থানিক কোষ কোন একটি স্থানের ম্যাপ তৈরি করে, আর সজ্জা কোষ GPS-এর মতো অবস্থান আর চলাফেরার ওপর ভিত্তি করে স্থানাঙ্ক নির্ণয় করে। এই আবিস্কারের জন্যই জন ও’কেফের সাথে মোজার দম্পতি নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন।

                                        

 

মস্তিষ্কঘটিত রোগের মধ্যে আলঝেইমার’স বা স্মৃতিভ্রম ( Alzheimar's) একটি বার্ধক্যজনিত সাধারণ রোগ। এই রোগের ফলে মানুষের স্মৃতি হারাতে শুরু করে, এবং বিশেষ করে স্থাননির্ভর স্মৃতিগুলো আগে হারিয়ে যায়। মস্তিষ্কের অবস্থান নির্ণয়ের গবেষণা আরও সুদূরপ্রসারী হলে আলঝেইমার’স রোগের কারণ বের করা সম্ভব হবে। 

                   

 

 

 

 

 

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন