মিথ্যা বললে একদম ধরা !

পৃথিবীতে প্রায় ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে কেউ কারও মত নয়, সবাই যার যার মত আলাদা। এই ভিন্ন ভিন্ন মানুষের স্বভাব যেমন আলাদা, তাদের কাজকর্মও আলাদা। কেউ যাই করুক না কেন, সবসময় সৎ থাকার চেষ্টা করে, আবার কেউ যেকোনো কারণেই হোক, অসৎ পথ অবলম্বন করে। কিন্তু যতদিন অসৎ মানুষ আছে, ততদিন তাদের বাধা দেওয়ার জন্যও একদল মানুষ ক্লান্তিহীনভাবে খেটে যায়। তাদের কাউকে আমরা চিনি, কাউকে না। পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, এগুলো সবই অপরাধ দমনের কাজে নিয়োজিত। একেক সংস্থার কার্য পদ্ধতি একেক রকম। কিন্তু কোন সন্দেহভাজন অপরাধীকে ধরে এনেই তো আর শাস্তি দিয়ে দেওয়া যায় না। আবার বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা স্বীকার করে না যে তারা অপরাধটি করেছে। এসব ক্ষেত্রে সব সংস্থাই একটি পদ্ধতি অবলম্বন করে, আর তা হল আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা।

কোন ব্যক্তির ওপর যদি কোন অপরাধ সাধন করার সন্দেহ থাকে, তবে ঐ সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে বিশেষ পদ্ধতিতে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে সঠিক তথ্য বের করার পদ্ধতিকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা বলে। জিজ্ঞাসাবাদ বলতে শুধু প্রশ্ন করা বোঝালেও এই শব্দটি শুধু আইন প্রয়োগকারীদের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদ করার অধিকার যেকোনো আইন প্রয়োগকারীর থাকলেও এর কিছু বিশেষ নিয়ম রয়েছে। প্রথমেই আসামীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা, অর্থাৎ জিজ্ঞাসাবাদ এমন কোথাও করতে হবে যেখানে আসামীর জীবনের ঝুঁকি থাকবে না। তারপর আসামীকে যে অপরাধে আইনের আওতায় আনা হয়েছে তা সম্বন্ধে খুলে বলতে হবে, এবং তার প্রতিটি কথা ও যুক্তি মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।

যদিও জিজ্ঞাসাবাদের সময় শারীরিক বা মানসিক অত্যাচার আইনত সঠিক নয়, তবুও আইন প্রয়োগকারীরা অনেক ক্ষেত্রেই আসামীর ওপর শারীরিক বা মানসিক চাপ সৃষ্টি করেন যাতে করে সে সঠিক তথ্য দিতে বাধ্য হয়। উন্নত দেশগুলোতে প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক বেশী বলে তাদের এতটা কষ্ট করতে হয় না, বরং কথা বলার সময়েই তাঁরা ধরে ফেলেন যে আসামী মিথ্যা বলছে নাকি সত্যি বলছে।

Lie Detector-এর নাম হয়তো আমরা অনেকেই শুনেছি। এই যন্ত্রটি আসামীর শরীরের রক্তচাপ, মস্তিষ্কের কার্যকলাপ দেখে নির্ণয় করতে পারে যে ব্যক্তিটি সত্যি বলছে নাকি মিথ্যা। তবে এটি যে পুরোপুরি নিখুঁতভাবে কাজ করে, তাও সঠিক না। অনেক সময়েই এর ফলাফল ভুল বলে প্রমাণিত হতে পারে।

রূপকথার সেই কাঠের পুতুল পিনোক্কিও-র কথা নিশ্চয়ই মনে আছে, যে মিথ্যা বললেই তার নাক লম্বা হয়ে যেতো বলে মিথ্যা বলতে পারতো না। মানুষের এমন ব্যবস্থা না থাকলেও লাই ডিটেক্টর বেশ ভালোই কাজ চালিয়ে নিতে পারে। আসলে লাই ডিটেক্টর শুধু একটি যন্ত্র নয়, এতে বেশ কয়েক ধরণের যন্ত্র একত্রে যুক্ত থাকে। একে পলিগ্রাফও বলা হয়। মানুষ যখন মিথ্যা বলে, তখন কিছু সময়ের জন্য শরীরের কার্যকারিতায় বেশ কিছু পরিবর্তন আসে যা খালি চোখে বোঝা সম্ভব না। কিছু জিনিস সাধারণভাবেই হয়তো ধরা যায়, যেমন কণ্ঠ কেঁপে ওঠা, কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করা, আমতা আমতা করে কথা বলা, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশী সময় নিয়ে কথা বলা ইত্যাদি। কিন্তু আসামী যদি মিথ্যা বলাতে ভালো দক্ষতা রাখে তাহলে খালি চোখে দেখে তা বোঝা সম্ভব হবে না। তখনি লাই ডিটেক্টরের সাহায্য নেয়া হয়।

মানুষ যখন মিথ্যা বলে, তখন তার হৃদপিণ্ডের স্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। অর্থাৎ, লাই ডিটেক্টরে হার্টবিট মাপার যন্ত্র যুক্ত থাকে। আরও থাকে রক্তচাপ মাপার যন্ত্র, কারণ মিথ্যা বলার সময়ে রক্তচাপও বৃদ্ধি পায়। লাই ডিটেক্টরে মিথ্যা ধরার জন্য আসামীকে শুধু হ্যাঁ অথবা না দিয়ে উত্তর দেয়া যায় এমন প্রশ্ন করা হয়। এছাড়াও শরীরের হরমোন, ঘাম, এবং মস্তিষ্কের কার্যক্রিয়া বিশ্লেষণ করেই লাই ডিটেক্টর সত্য-মিথ্যা নির্ধারণ করে। আসামী যদি মিথ্যা বলে, তাহলে লাই ডিটেক্টরে লাল বাতি জ্বলে ওঠে, আবার সত্যি বললে সবুজ বাতি জ্বলে ওঠে।

সবচেয়ে বেশী লাই ডিটেক্টর ব্যবহার করা হয় আমেরিকাতে, এছাড়াও ইউরোপের দেশগুলোও লাই ডিটেক্টর ব্যবহারে পারদর্শী। আমাদের দেশ দিন দিন আধুনিক হতে থাকলেও লাই ডিটেক্টর এখনও এই দেশে পরিচিতি পায়নি। কিন্তু লাই ডিটেক্টর ব্যবহার শুরু হলে অপরাধ দমন যেমন সহজ হবে, তেমনি আইন প্রয়োগকারীদের ঝামেলাও কম পোহাতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের টিভি শো ' The Moment of Truth ' বা ভারতের Sacch Ka Saamna টিভি শোতে Lie Detector এর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়েছে। 

 

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন