রঙিন ধাঁধা রুবিক’স কিউব

একটা মজার ধাঁধা দিয়েই শুরু করা যাক-
“তিন অক্ষরে নাম তার, জলের নিচে ঘোরে;
মাঝের অক্ষর কেটে দিলে,আকাশেতে ওড়ে!”
ধাঁধার উত্তরটা চিন্তা করতে করতে আরেকটা মজার ধাঁধা সর্ম্পকে জেনে নেয়া যাক। বুদ্ধি খাটিয়ে আমরা মুখে মুখে অনেক ধাঁধার খেলা খেললেও, আসলেই যে ধাঁধার খেলনা বানানো যায় তার প্রমাণ হল নানা রঙের ছোট খেলনা ‘রুবিক’স কিউব’। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া এবং অন্যতম জনপ্রিয় পাজল হচ্ছে এই রুবিকস কিউব। এটাকে পৃথিবীর অন্যতম কঠিন ধাঁধাগুলোর একটা বললেও মনে হয় খুব একটা ভুল হবে না।

১৯৭৪ সালে হাঙ্গেরীয় ভাস্কর ও স্থাপত্যের অধ্যাপক এর্নো রুবিক এটি উদ্ভাবন করেন। রুবিক নিজে এর নাম দিয়েছিলেন ‘ম্যাজিক কিউব’, কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে ‘আইডিয়াল টয়েজ’ নামের এক খেলনা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এর নাম দেয় ‘রুবিক্স কিউব’ অর্থাৎ ‘রুবিকের ঘনক’।
রুবিকস কিউব নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, এটা একটা কিউব বা ঘনক। রুবিকস কিউবে ৬টি তল থাকে এবং প্রতিটি তল ভিন্ন ভিন্ন রং করা থাকে। কিউবটিকে বিভিন্নভাবে ঘুরানো যায়। এভাবে ঘুরিয়ে রুবিকস কিউবকে বিভিন্ন রকম অবস্থা বা কনফিগারেশনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
রুবিকস কিউবের বিভিন্ন রকম সংষ্করণ আছে, তার মধ্যে ২x২x২ মাত্রার ‘পকেট কিউব’, ৪x৪x৪ মাত্রার ‘রুবিক্স রিভেঞ্জ’ এবং ৫x৫x৫ মাত্রার ‘প্রফেসর্স কিউব’ উল্লেখযোগ্য।

সমাধানকৃত অবস্থায় রুবিক্স কিউবের একটি তলে সবগুলো ব্লক একই রঙের হয়। ঘনকের ৬টি তলের একেকটিতে একেক ধরনের রঙ থাকে। একটি রুবিকস কিউবের বিভিন্ন তলকে ইচ্ছামত ঘুরিয়ে এলোমেলো করা যায়। তবে এলোমেলো করার পর একই রঙের সবগুলো ব্লককে একপাশে আনতে পারলে সমাধান করা সম্ভব হয়। এরকম এলোমেলো অবস্থা থেকে সমাধান করতে পারলেই কেবল ধাঁধাটি মেলানো যায়। সব মিলিয়ে, রুবিকস কিউব অসাধারণ একটা ধাঁধা বা পাজল। একটা আসল কিউবের দাম প্রায় ১৩.৯৯ ডলার। তবে চাইনিজ কিউব ১০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়।

রুবিকস কিউব হাতে নিয়ে দেখলে বা মেলানোর চেষ্টা করলে বোঝা যায় যে এটা মেলাতে কতটা বুদ্ধি লাগে। রুবিকস কিউব দ্রুত সমাধানকে বলা হয় স্পিডকিউবিং। স্পিডকিউবিং এর প্রথম প্রতিযোগিতা হয় ১৯৮১ সালে মিউনিখে। তবে, অফিসিয়াল ওয়ার্ল্ড কিউবিং কম্পিটিশন শুরু হয় ১৯৮২ সালে।
‘ওয়ার্ল্ড কিউ এসোসিয়েশন’-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে দ্রুত সমাধানের রেকর্ড অস্ট্রেলিয়ার ‘ফেলিকস জেমদেগজ’ এর দখলে। তিনি ২০১১ সালে মেলবর্ন উইন্টার ওপেনে মাত্র ৫.৬৬ সেকেন্ডে সমাধান করেন! কিন্তু ২০১৩ সালেই তার রেকর্ড ভেঙে ফেলে হল্যান্ডের বালক ‘ম্যাটস ভ্যাক’। যে কিনা কিউব মিলিয়েছে মাত্র ৫.৫৫ সেকেন্ডে! বাংলাদেশে আশির দশক থেকে এই কিউব নিয়ে কাজ শুরু হলেও ২০১১ সালে প্রথম গনিত অলিম্পিয়াডে এই কিউব মেলানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়। তারপর আর থেমে থাকা হয়নি।

এখন প্রতি বছর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান মেলা ও গনিত অলিম্পিয়াডগুলোতে নিয়মিতভাবে কিউবিং এর প্রতিযোগিতা হয়। এছাড়াও ফেসবুকে একটি গ্রুপ আছে যার নাম ‘কিউবিস্ট বিডি’। বাংলাদেশের অনেক কিউবারদের পরিচিতি, রেকর্ড ও কম সময়ে কিউব মেলানোর নানা পদ্ধতি নিয়ে এখানে আলোচনা হয়। তারাই বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ‘রুবিক’স কিউব কর্মশালা’ আয়োজন করেছে। লেখার শুরুতে যে ধাঁধাটি বলেছি তার উত্তর হল “চিতল”। এই ধাঁধার উত্তর তো জানা হলো; এবার তাহলে রঙিন ধাঁধা ‘রুবিক’স কিউব’ নিয়ে ধাঁধার খেলা শুরু হয়ে যাক।

 

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন