বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ মারা যায় শুধু বিষাক্ত সাপের কামড়ে। সাপের বিষ শরীরে প্রবেশ করলে এর চিকিৎসার বিজ্ঞানসম্মত ঔষধ একটিই – অ্যান্টিভেনম। তবে এই অ্যান্টিভেনম তৈরি করা যেমন ঝুঁকিপূর্ণ তেমনই দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। শুধু তাই নয়, এই অ্যান্টিভেনম ফুরিয়েও আসছে। তাই ভবিষ্যতে অ্যান্টিভেনমের বিকল্প ঔষধ খোঁজার প্রয়োজন হতে পারে।
সাপের বিষের একমাত্র ঔষধ হলো অ্যান্টিভেনম যা মূলত সাপের বিষ থেকেই তৈরি করা হয়। প্রথমে একটি পাত্রে বা টিউবে অভিজ্ঞদের দ্বারা সাপের বিষ সংগ্রহ করানো হয়। বিষ সংগ্রহ করাকে বলা হয় Milking তবে এটি মোটেও নিরাপদ কাজ নয় ! সাপের মুখের দুইপাশে চাপ দিয়ে সাপকে হাঁ করানো হয়। তারপর, টিউব নিয়ে বিষদাঁতের সাথে লাগানো হয়। দাঁতে চাপ পড়লে সাপের কাছে অটোমেটিক রেসপন্স চলে যায় ও দাঁত থেকে বিষ বের হয়ে টিউবে জমা হতে থাকে।
পরবর্তীতে সাপের বিষকে লঘুকরণ করে সাপের বিষের তীব্রতা কমানো হয়। এরপর সেই দূর্বল বিষ হোস্ট অ্যানিমেলের শরীরে প্রবেশ করানো হয়। সাধারণত ঘোড়া, খরগোশ বা ভেড়াকেই হোস্ট অ্যানিমেল করা হয়। বিষ তেমন তীব্র না হওয়ায় প্রানীটি মারা যায় না। কোন প্রাণীর শরীরে বিষ প্রবেশ করা হলে প্রাকৃতিকভাবেই সেই প্রাণীর শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ( Immune System ) সক্রিয় হয়ে ওঠে।
বিষকে মোকাবেলা করার জন্য শরীর প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। যেহেতু হোস্ট অ্যানিমেলের শরীরে প্রবেশ করানো বিষ খুব দূর্বল তাই অ্যান্টিবডিগুলো সহজেই জয়লাভ করে এবং হোস্ট প্রাণীটির রক্তে অব্যবহৃত অ্যান্টিবডিগুলো থেকে যায়। তাই তখন হোস্ট প্রাণীটির শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয় এবং সেই রক্তকে বিশ্লেষণ ও বিশুদ্ধ করে তা থেকে শেষ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডিগুলো সংগ্রহ করা হয়। এই অ্যান্টিবডি দিয়েই তৈরি হয় সাপের বিষের প্রতিষেধক অ্যান্টিভেনম। সাপের বিষে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে এই অ্যান্টিভেনম প্রবেশ করানো হয়।
১৮৯০ সালের দিকে প্রথম অ্যান্টিভেনম আবিষ্কৃত হয়। বিখ্যাত বিজ্ঞানী লুই পাস্তুরের ছাত্র Albert Calmette এটি আবিষ্কার করেন। অ্যান্টিভেনম আবিষ্কারের সময় তিনি ইন্দোচীনে বসবাস করছিলেন। সেই সময় এক বন্যার কারণে বিষাক্ত কোবরা সাপ একটি গ্রামে আশ্রয় নেয় আর কমপক্ষে ৪০ জন গ্রামবাসী সাপের কামড়ে অসুস্থ হয়। এদের মাঝে কয়েকজন মৃত্যুবরণ করেন। সেই সময় ভ্যাক্সিনেশন প্রক্রিয়া আবিষ্কৃত হয়েছিল আর Albert Calmette সেই প্রযুক্তি থেকে অনুপ্রেরিত হয়ে সাপের বিষের প্রতিষেধক আবিষ্কার করার জন্য গবেষণা শুরু করেন।
তবে ‘ ডক্টরস উইদআউট বর্ডারস ’ নামের একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠণের মতে আগামী বছরের মধ্যেই সাপের বিষের যে প্রতিষেধক রয়েছে তা শেষ হয়ে যাবে। এমনকি প্রস্তুতকারকেরা এর উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন এবং বর্তমান প্রতিষেধকগুলোরও মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
তবে সম্প্রতি বাংলাদেশে Incepta Pharmaceuticals সাপের বিষের প্রতিষেধক হিসেবে Antivenom নামে ইঞ্জেকশন আবিষ্কার করেছে যা সত্যি প্রশংসনীয়।