হলিউডের বর্তমান প্রজন্মের ফিকশনাল মুভিগুলোর একটি কমন ব্যাপার হচ্ছে, মুভিগুলোতে দ্বিমাত্রিক হলোগ্রাফিক স্ক্রিনের প্রচুর ব্যবহার হয়। আমাদের কাছে খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার হলেও আজ থেকে ১০ বছর আগেও এটি ছিলো অস্বাভাবিক এবং কল্পনা। তেমনি তার কয়েক যুগ আগের মুভিগুলোর সাধারন ব্যাপার ছিলো টাচস্ক্রিন টেকনোলজির ব্যবহার। যদিও সেটা ছিলো কল্পনা প্রসূত।
বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার হিসেবে ধরা হয় টাচ প্রযুক্তিকে। মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে ভিডিও গেম কিংবা কম্পিউটারের স্ক্রিন, এমনকি টেলিভিশন- সবকিছুই আজ এই টাচস্ক্রিন প্রযুক্তির ভেতর আটকে গেছে। কিছু সেন্সর ব্যবহারের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের “ ব্লাড সার্কুলেটেড অরগ্যান ” এর সাহায্যে এই টাচস্ক্রিন প্রযুক্তিকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।
প্রথমদিকের টাচস্ক্রিন মোবাইল ফোনগুলোতে শুধুমাত্র নখ বা হাতের আঙ্গুল ব্যবহার করে কাজ করা যেতো, যদিও সেটি খুব বেশি সুবিধাজনক ছিলো না। এই কারণে, বর্তমানের নতুন ফোনগুলোতে শুধুমাত্র যেসকল অঙ্গে রক্ত চলাচল করে সেসকল অঙ্গের মাধ্যমে কাজ করার সুবিধা তৈরি করা হয়েছে।
আজ থেকে ১০/১২ বছর আগেও কেউ ভাবেনি এরকমভাবে প্রযুক্তির পরিবর্তন আসবে। নোকিয়া ১১০০ এর সাদাকালো যুগের পরিসমাপ্তি হয়তো কেউই ভাবিনি আমরা। সিমেন্স, নোকিয়া, মোটোরোলার মত কোম্পানীগুলোর সাদাকালো মোবাইল ফোনগুলো আমাদের নিয়ে যায় উত্তম সুচিত্রা যুগে। আলাদীনের চেরাগের দৈত্যের মত প্রযুক্তির নতুন সংযোজন হয় টাচস্ক্রিন মোবাইল।
টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। এর মধ্যে ক্যাপাসিটিভ ও রেজিষ্টিভ টাচ স্ক্রিন অন্যতম।
ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন হল বৈদ্যুতিক চার্জ ধারণে সক্ষম প্রলেপযুক্ত গ্লাস প্যানেল। আমরা জানি, মানুষের শরীর বৈদ্যুতিক চার্জ ধারণ করতে পারে। যখন মানুষের আঙ্গুল ক্যাপাসিটিভ টাচ স্ক্রিনের কোন স্থানে স্পর্শ করে তখন ঐ স্থানের কিছু চার্জ আঙ্গুলে স্থানান্তরিত হওয়ার ফলে কমে যায়। টাচ স্ক্রিনের সাথে সংযুক্ত বিশেষ সার্কিট বুঝতে পারে ঠিক কোন স্থানের চার্জ কমে গেছে। সার্কিটটি সেই স্থানের অবস্থান সিস্টেমকে জানায়। সিস্টেম আঙ্গুলের স্পর্শ করার স্থানের কমান্ডটি এক্সিকিউট করে।
আর রেজিষ্টিভ টাচস্ক্রিন হল তিন স্তর বিশিষ্ট গ্লাস প্যানেল। এর মধ্যে দুটি স্তর হল কন্ডাকটিভ এবং রেজিষ্টিভ। তৃতীয় এবং উপরের স্তরটি মূলত অপর দুটি স্তরকে স্ক্রেচ বা আঁচড় থেকে রক্ষা করে। যখন মানুষের আঙ্গুল রেজিষ্টিভ টাচ স্ক্রিনের কোন স্থানে স্পর্শ করে তখন ঐ স্থানে কন্ডাকটিভ এবং রেজিষ্টিভ স্তরের মধ্যে সংযোগ ঘটে। এর ফলে ঐ স্থানে বিদ্যুৎ প্রবাহের তারতম্য হয়। যা টাচ স্ক্রিনের সাথে সংযুক্ত বিশেষ সার্কিট বুঝতে পারে ঠিক কোন স্থানে বিদ্যুৎ প্রবাহের তারতম্য হয়েছে। সার্কিটটি সেই স্থানের অবস্থান সিস্টেমকে জানায়। এবং সিস্টেম আঙ্গুলের স্পর্শ করার স্থানের কমান্ডটি এক্সিকিউট করে।
ষাট কিংবা সত্তরের দশকের দিকে টাচস্ক্রিন প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটে। কিন্তু এর উন্নয়ন থেকে শুরু করে আজকের এই আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক পর্যায়ে আসতে আরও কিছু সময় লেগেছে। ১৯৯৪ সালে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি নিয়ে বাজারে আসে IBM Simon নামের পার্সোনাল কমিউনিক্যাটর।
প্রযুক্তির আধুনিক এই সংযোজনে বদলে গেছে সবকিছুর দৃশ্যপট। পূর্নাঙ্গ টাচ ডিসপ্লে নিয়ে প্রথমবারের মত বিখ্যাত অ্যাপল কোম্পানি ২০০৭ সালে বাজারে এনেছিলো আইফোন। সাড়াও মিলেছিলো অনেক। এরপর আস্তে আস্তে নোকিয়া, স্যামসাংসহ বড় বড় সব প্রতিষ্ঠান বাজারে নিয়ে আসতে থাকে টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি সম্বলিত ফোন। আইফোনের একের পর এক সিরিজ মাতিয়ে রাখে পুরো বিশ্বের প্রযুক্তিপ্রেমীদের।
মোবাইলের পাশাপাশি ল্যাপটপ কিংবা ডেস্কটপ কম্পিউটারেও রয়েছে এরকম টাচ ভার্সন। সম্প্রতি বিখ্যাত লেনোভো কোম্পানী বাজারে এনেছে “ ফ্লেক্স-২ ” ল্যাপটপ, যা শুধু টাচই নয়, এর স্ক্রিনটিকে পুরোপুরি ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরানো সম্ভব।
শুধু টাচই নয়, অ্যাপলের ২০১৩ সালে উদ্ভাবিত আইফোন ৫এস থেকে পরবর্তী সিরিজগুলোর প্রধান আকর্ষন হচ্ছে এর ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তির ব্যবহার। ব্যবহারকারীর আঙ্গুলের ছাপ ছাড়া খোলা যাবেনা মোবাইলের লক!