ওয়ার্ম গ্রাফঃ দেখতে কেঁচোর মতো !

চলছে ২০১৫ বিশ্বকাপ ক্রিকেট, আর এই জমকালো খেলার আসর নিয়ে ক্রিকেট ভক্তদের মাঝে উন্মাদনার শেষ নেই। যার যার প্রিয় দল নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছেই। এর পাশাপাশি আমরা দিয়ে যাচ্ছি ক্রিকেট সম্পর্কীয় কিছু মজার সাধারণ তথ্য।

ক্রিকেট ম্যাচ চলার সময়ে টেলিভিশনের পর্দায় প্রায়ই আমরা বেশ কিছু গ্রাফ দেখতে পাই। কোনটা চাকার মতো গোল, কোনটাতে দেখা যায় লাল, নীল সাদা বল, আবার কোনটাতে দু’টি আঁকাবাঁকা রেখা নিচ থেকে উপরে উঠে যায়। আসলে একেক রকম গ্রাফ দিয়ে একেক ধরণের তথ্য দেখানো হয়। যে গ্রাফে পুরো মাঠের নকশার সাথে ব্যাটসম্যান কোথায় বল মেরে রান করলো তা দেখানো হয়, তাকে ওয়াগন হুইল বলে। বোলিং এর ক্ষেত্রে পিচের ম্যাপ দেখিয়ে বল কোথায় পড়েছে এবং কত রান হয়েছে তা দেখানো হয়, একে পিচ ম্যাপ বলে। আবার, আরেক ধরণের গ্রাফে দু’টি রেখার সাহায্যে দুই দলের ওভার এবং রান দেখানো হয়, একে ওয়ার্ম গ্রাফ (Worm Graph) বলে এবং ক্রিকেটে এই ওয়ার্ম গ্রাফ বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা জানি যে Worm মানে হল কেঁচো, কৃমি বা শুঁয়োপোকা। তো প্রশ্ন আসতেই পারে যে গ্রাফের সাথে কেঁচোর আবার কি সম্পর্ক! সম্পর্ক আছে, একটি ওয়ার্ম গ্রাফের দিকে ভালো করে তাকালেই দেখা যাবে যে রেখা দু’টি দেখতে অনেকটা কেঁচোর মতো, এবং রান ও ওভার বাড়ার সাথে সাথে এরা কেঁচোর মতো ধীরে ধীরে এগোতে থাকে, এ কারণে এই গ্রাফের নামই দেয়া হয়েছে ওয়ার্ম গ্রাফ (Worm Graph), সোজা বাংলায় 'কেঁচো লেখচিত্র'।

এবার আসি এই কেঁচো লেখচিত্রের বিশ্লেষণে। আমরা জানি, যেকোনো গ্রাফের দু’টি অক্ষ থাকে, “X” এবং “Y”। ওয়ার্ম গ্রাফে X অক্ষতে থাকে বল অথবা ওভারের সংখ্যা, আর Y অক্ষে থাকে রানের সংখ্যা। উপরের গ্রাফে আমরা দেখতে পাচ্ছি X অক্ষে ওভারের সংখ্যা দেখানো হচ্ছে, আর Y অক্ষে রান দেখানো হচ্ছে। দু’টি কেঁচো অথবা রেখা দিয়ে দুই দলের রান বোঝানো হচ্ছে। ধরা যাক নীল কেঁচোটি দিয়ে আরব আমিরাত দলের রান, এবং লাল কেঁচোটি দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের রান দেখানো হচ্ছে। কেঁচোগুলোর মাঝখানে গোল বিন্দুগুলো দিয়ে উইকেট বোঝানো হচ্ছে, অর্থাৎ যে ওভার ও রানের ঘরে গোল বিন্দু আছে, সে সময়ে উইকেটের পতন ঘটেছে। X অক্ষটিকে সাধারণত মোট ৫ ভাগে ভাগ করে ৫০ ওভার দেখানো হচ্ছে, এবং প্রতিটি ভাগকে আবার আরও দশটি বিন্দু দিয়ে ভাগ করে নিখুঁত করা হয়েছে। আবার, Y অক্ষের দিকে সাধারণত একে ৩০০ রানের জন্য ৬ ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে এবং প্রতিটি ভাগকে আরও ৫টি বিন্দু দিয়ে ভাগ করা হয়েছে।

              

এখন, উপরের গ্রাফে দুই দলেরই রেখা শূন্য থেকে শুরু হয়েছে। অর্থাৎ, বল যখন শূন্য, রানও তখন শূন্য। পাঁচ ওভারের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের রেখায় একটি গোল বিন্দু দেখা যাচ্ছে, আবার রেখাটি Y অক্ষের দিকে ৩৫ রানের কিছু উপরে রয়েছে। অর্থাৎ, পাঁচ ওভারের আগে ৩৫ রানের সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের একটি উইকেটের পতন ঘটে। তবে প্রথম দিকে আরব আমিরাত দলের ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে কেননা প্রথম দশ ওভারে ৩৫ রানের আগেই তারা ৫টি উইকেট হারিয়েছে। আবার আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ইনিংসের শেষ দিকে আরব আমিরাত দল চারটি উইকেট হারিয়েছে। অর্থাৎ, ইনিংসের মাঝামাঝিতে তারা ভালো খেলেছে। আরব আমিরাত পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারেনি। তারা সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রান করেছে। তাই, নীল রঙের রেখাটি ১৭৬ এ গিয়ে থেমে গেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ১৭৬ রান টপকে গিয়েছে ৩০ ওভারের মধ্যে। তবে এই রান টপকাতে তারা হারিয়েছে ৪ উইকেট। এভাবে এই দু’টি কেঁচো দিয়ে মোটামুটি পুরো ম্যাচের তথ্য প্রদর্শন করা যায়। গ্রাফে X ও Y অক্ষকে যত ভাগ করা যাবে তত পুরো ম্যাচের চিত্র পরিষ্কার হবে। 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন