কাগুজে টাকার বিদায় ঘন্টা

ভাবুনতো একবার পৃথিবীতে টাকার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। কোন কিছু কিনতে আর আগের মতো পকেট থেকে কাগজের নোট বের করে দিতে হচ্ছে না।

কী আনন্দ তাই না! আসলে টাকার প্রয়োজন তো কখনো ফুরবে না তবে অনেকদিন ধরেই এরকম একটা কথা আলোচনার টেবিলে ভাসছে কাগজের টাকা আমাদের আর প্রয়োজন আছে কিনা?

যেভাবে আমরা ক্রেডিট কার্ডসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক উপায়ে টাকা আদান-প্রদান করে যাচ্ছি তাতে আমাদের কাগুজে টাকা বা কয়েনের প্রয়োজনীয়তা হয়তো শিগগিরই ফুরতে চলছে। জার্মান অর্থনীতিবিদেরা সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে নতুনভাবে বিতর্কে মজেছেন। কেউ কেউ বলছে এটাই ভবিষ্যৎ, আবার অনেক বলছে এতে আমাদের স্বাধীনতা কমে আসবে।

অনেকেই বলছেন পৃথিবী চলছে টাকার ওপরে। কিন্তু তাই বলে টাকাকে কি তার শারীরিক গঠন পেতেই হবে? টাকা আসলে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা ছাড়া কিছু নয় যেটা আমাদের ব্যাংকিং সিস্টেম বা কেনাবেচার জন্য দরকার। আর নহদ অর্থ তারই একটি অংশ। কিন্তু যখন আমাদের চারপাশে ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড আর বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস রয়েছে তখন সত্যিকারের টাকার কতটা প্রয়োজন রয়েছে তা নিয়ে অনেকেই তর্ক জুড়ে দিয়েছেন।

কাগজের টাকা এবং কয়েন তৈরি করতে প্রচুর খরচ হয় যা ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে আদান প্রদান করলে হবে না। কাগজের টাকা তৈরি বন্ধ হলে গাছ কাটার পরিমাণ কমবে। পলিমার নোট তৈরি করতে প্লাস্টিকের যে ব্যবহার হয় তাও বন্ধ হবে। নগদ লেনদেনে চুরি-ডাকাতির মত যেসব বিপদ বা ঝুঁকি রয়েছে ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে তা নেই।

তাছাড়া, অর্থসংক্রান্ত সব ধরনের দুর্নীতির হদিস করতে ইলেক্ট্রনিক লেনদেনের গতিবিধি খুব সহজেই অনুসন্ধান করা যায়। বাজারে টাকার আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে জাল টাকা, ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে যার কোন ঝুঁকি নেই।

ইউরোপে সর্বপ্রথম কাগজের টাকা বা ব্যাংকনোটের প্রচলন করে সুইডেন ১৬৬১ সালে। এই সুইডেনই প্রথম দেশ হিসেবে সব ধরনের লেনদেনে নগদ টাকার ব্যবহার বন্ধ করার পাঁয়তারা করছে। দাবি করা হচ্ছে যে, সুইডেনের প্রায় সর্বত্রই ইলেক্ট্রনিক কার্ড বা ফোনের মাধ্যমে নাকি প্রায় সব কিছুরই লেনদেন হয়ে থাকে।

এমনকি এই দেশের গির্জাগুলোতেও ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে, অর্থাৎ ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনুদান সংগ্রহ করার ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি রাস্তার ধারে যেসব দোকানি তাঁবু বা ঠেলাগাড়ির মতো দোকান সাজিয়ে ব্যবসা করছে, তারাও নাকি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের সাহায্যে কেনাবেচা করছেন। তবে ফোনের মাধ্যমে ট্রাম, বাস, ট্রেনের টিকেট কেনার ব্যবস্থা সুইডেন, চেক রিপাবলিকসহ ইউরোপের অনেক দেশেই সম্ভব।

বিগত প্রায় ১৫০০ বছর ধরে সেবা দিয়ে আসছে যে কাগজের টাকা, তার আদি প্রকাশ হয় সপ্তম শতাব্দীতে, চীনে। তাং ও সং-এর রাজত্বকালে এর সূচনা হয় এবং কালক্রমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। তখনকার দিনে ব্যবসা ও পাইকারি লেনদেনে তামার একগাদা ভারি মুদ্রা নিয়ে চলাফেরা করা যেমন কঠিন ছিল তেমনি আবার ডাকাতের ভয়ও ছিল অনেক।

ফলে, মানানসই যোগ্য বিকল্প হিসেবে টাকার প্রচলন হয়। ইউয়ান রাজত্বের আমলে মঙ্গোল সাম্রাজ্যও টাকার ব্যবহার গ্রহণ করে। ১৩শ শতাব্দীতে টাকা চলে আসে ইউরোপে। তবে লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে কাগজের টাকার চালু হয় আরও পরে। সপ্তদশ শতাব্দীতে সুইডেনই প্রথম চালুর ব্যবস্থা নেয়।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন