দুই ধারে দৃষ্টিনন্দন স্থলভুমি, আর মাঝ দিয়ে গর্বিত ভঙ্গিতে বয়ে যাচ্ছে বিপুল পরিমান জল। এই ধরনের পানিপথকেই বলা হয় প্রণালী (Strait)। প্রণালী হল দুটি নদী বা সমুদ্রের সংযোগকারী সংকীর্ণ জলপ্রবাহ বা ধারা। উড়োজাহাজ আবিষ্কারের আগে যখন জলপথ ছিল দুটি দেশের মাঝে যোগাযোগের সেরা মাধ্যম, তখন থেকেই মানুষ বিভিন্ন প্রণালীর গুরুত্ব বুঝতে পারে। এই প্রণালীগুলো শুধু প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্যের জন্যই বিখ্যাত নয়, বরং মানবজাতির উন্নয়নের ইতিহাসেও তাদের রয়েছে প্রত্যক্ষ অবদান। আজ চতুর্থ পর্বে থাকছে ম্যাজেলান, ফ্লোরিডা ও ডোভার প্রণালী।
- ম্যাজেলান প্রণালী
দক্ষিন আমেরিকার গা ঘেঁষে বয়ে যাওয়া ম্যাজেলান প্রণালী হলো আটলান্টিক মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে একটি প্রাকৃতিক সংযোগস্থল। তবে এই পথে ভ্রমণ করা কঠিন বলে বিবেচনা করা হয়, যেকোনো সময় ঝড়ো হাওয়া শুরু হতে পারে আর পানির স্রোত অনেক বেশি।
এই প্রণালী প্রায় ৫৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর সবচেয়ে সরু পথেও এটি প্রায় ২ কিলোমিটার চওড়া। মূলত যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য এই প্রণালী ব্যবহৃত হয়। এই প্রণালীতে ৪১টি লাইটহাউস রয়েছে। এদের মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো County of Peebles– যা বর্তমানে ব্রেকওয়াটার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া San Isidro লাইটহাউসও সুপরিচিত। ২০০৪ সালে এটি সংস্কার করা হয় এবং বর্তমানে জাদুঘর ও লজ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
- ফ্লোরিডা প্রণালী
উত্তর আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে অবস্থিত ফ্লোরিডা প্রণালী আটলান্টিক মহাসাগর এবং মেক্সিকো উপসাগরের মাঝে অবস্থিত। এছাড়া, এটি Florida Keys এবং কিউবার মাঝে অবস্থিত। এর সবচেয়ে সঙ্কীর্ণ স্থানটিও ১৫০ কিলোমিটার চওড়া।
ফ্লোরিডা প্রণালী তেল ও গ্যাসের মত দামি প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিউবা এবং ইউ.এস. উভয় দেশের সরকার এই অঞ্চলে তেল ও গ্যাসের জন্য কূপ খনন করেছে। US Geological Survey এর জরিপ অনুযায়ী, নর্থ কিউবা বেসিনেই প্রায় ৮৭ কোটি ঘনমিটার পেট্রোলিয়াম এবং ৯.৮ ট্রিলিয়ন ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
- ডোভার প্রণালী
ডোভার প্রণালী গ্রেট ব্রিটেনকে ইউরোপীয় মহাদেশীয় ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্নকারী একটি প্রণালী। এটি ইংলিশ চ্যানেল তথা আটলান্টিক মহাসাগরের সাথে উত্তর সাগরের সংযোগসাধন করেছে।
সমুদ্রপ্রণালীটি ইংলিশ চ্যানেলের পূর্ব প্রান্তের সবচেয়ে সরু অংশটি গঠন করেছে। প্রণালীর সবচেয়ে সরু অংশটি ইংল্যান্ডের দক্ষিণ ফোরল্যান্ড এবং ফ্রান্সের কা গ্রি-নে-র মধ্যে অবস্থিত এবং প্রায় ৩৪ কিলোমিটার প্রশস্ত। ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেবার জন্য সাঁতারুরা এই সরুতম পথটিই ব্যবহার করে থাকেন।
প্রণালীর দুই পাশে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড উভয় দিকের তীরই শ্বেত চুনাপাথরে তৈরি খাড়া পাহাড় নিয়ে গঠিত। দুই তীরের চুনাপাথরের স্তরগুলি পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে প্রাগৈতিহাসিক কালে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে স্থলযোগাযোগের একটি পথ এখান দিয়ে চলে গিয়েছিল।
ডোভার প্রণালীটি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত সমুদ্র প্রণালী। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ বাণিজ্যিক জাহাজ যাতায়াত করে। ১৯শ শতকের শুরুর দিকেই প্রণালীর নিচ দিয়ে একটি সুড়ঙ্গ খোঁড়ার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছিল। ১৯৮০-র দশকের মাঝামাঝি ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের যৌথ উদ্যোগে প্রণালীর তলদেশ দিয়ে একটি রেলসুড়ঙ্গের খননকার্য আরম্ভ হয় এবং ১৯৯৪ সালে এটি “চ্যানেল টানেল” নামে পরিবহনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।