বছর ঘুরে কনকনে শীতে আনন্দের বার্তা নিয়ে আবার এসেছে ক্রিসমাস । গোটা দুনিয়াজুড়ে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ক্রিসমাসের প্রস্তুতি।
শুরুতে কেবল খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে প্রচলিত থাকলেও এখন আর কেবলমাত্র ধর্মীয় গন্ডিতেই আটকে নেই ক্রিসমাস, গোটা পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ এখন সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবেই ক্রিসমাস উদযাপন করে থাকেন।
ইংরেজি ক্রিসমাস শব্দটির অর্থ ক্রাইস্ট বা যীশুর জন্মদিন হলেও আসলে যীশুর প্রকৃত জন্মদিনের সঙ্গে এর তেমন কোন সম্পর্ক নেই, এমনকি চার্চগুলোরও যীশুর প্রকৃত জন্মদিন নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয়। যীশুর প্রকৃত জন্মদিবস নিয়ে তেমন স্পষ্ট করে কিছু জানাও যায়নি। ক্রিসমাস পালনের সবচেয়ে পুরনো ইতিহাস পাওয়া যায় ৩৫৪ খ্রীস্টাব্দে রোমে।
যদিও প্রাচ্যের দেশগুলোতে তখনও ৬ জানুয়ারিকেই পালন করা হতো খ্রীস্টের জন্মদিবস হিসেবে, তবে রোমান প্রভাবের ফলশ্রুতিতে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন পালনের সংস্কৃতি ধীরে ধীরে প্রাচ্যের দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে।
খ্রীস্টধর্ম ছড়িয়ে পড়ার আগ থেকেই শীতের শেষে নানারকম উৎসবের চল ছিলো গোটা ইউরোপ জুড়ে। আধুনিক ক্রিসমাস উৎসবের অনেক রীতিনীতিও সেসব উৎসবেরই সংকলন বলে অনেকের বিশ্বাস।
Saturn বা শনি দেবতাকে উপলক্ষ্য করে রোমানরা যে উৎসব পালন করতো তাতে ছিলো উপহার আদান-প্রদানের রীতি, যা আধুনিক ক্রিসমাস পালনের অন্যতম একটি অঙ্গ হিসেবে এখন প্রচলিত, একইভাবে জার্মান উৎসবগুলো থেকে এসেছে নানারকম খাবার দাবার তৈরি ও উপভোগের রীতি, আর রোমান নববর্ষ উৎসবের অনুকরণে প্রচলিত হয়েছে আলোকসজ্জা।
ইউরোপজুড়ে খ্রিস্ট ধর্ম ছড়িয়ে পড়ার আগে যে প্যাগান সংস্কৃতি চালু ছিলো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে, তাতে শীতের শেষে এবং বসন্তের আগে পালন করা উৎসবগুলো ছিলো সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ।
কালে কালে সেসব উৎসব হারিয়ে গেলেও ক্রিসমাসের মনকাড়া আয়োজনগুলোর মধ্যেই এখনো বেঁচে আছে সেসব উৎসবের স্মৃতি। মধ্যযুগে ক্রিসমাস পালনের প্রধান আকর্ষণ ছিলো প্রজা ও রাজাদের মধ্যে উপহার আদান-প্রদান, গণ ভোজসভা এবং খেলাধুলা ও নাচ-গানের উৎসব।
ক্রিসমাস ক্যারল বা ক্রিসমাসের গান এসময়েই জনপ্রিয়তা পায়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রোটেস্ট্যান খ্রিস্টানদের উত্থানের পর থেকে ক্রিসমাসকে ক্যাথলিক উৎসব ঘোষণা দিয়ে বহু জায়গায় ক্রিসমাস বর্জনের ডাক দেয় পিউরিটান বা বিশুদ্ধতাবাদীরা। এতে করে প্রায়ই ক্রিসমাস পরবর্তী দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়তো প্রোটেস্ট্যান্ট অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ।
এমনকি আমেরিকার বোস্টনে মৌলবাদী প্রোটেস্ট্যান্টরা ১৬৫৯ থেকে ১৬৮১ সাল পর্যন্ত আইন পাশ করে বড়দিন উদযাপন বন্ধ রেখেছিলো এমন ইতিহাসও আছে। ধীরে ধীরে গোঁড়ামি কমতে থাকলে একসময় আবারো ক্রিসমাস তার জনপ্রিয়তা ফিরে পায় ।
বিশেষত চার্লস ডিকেন্সের জনপ্রিয় উপন্যাস “A Christmas Carol” এর মাধ্যমেই আনন্দ ও উপভোগের দিন হিসেবে ক্রিসমাসের পুনর্জাগরণ ঘটে। এরপর থেকেই নানা গল্প, কবিতা এবং সংবাদমাধ্যমের বরাতে ক্রিসমাস হয়ে ওঠে উৎসব ও উচ্ছ্বাসের আরেক নাম । ইউরোপীয় শাসনাধীন কলোনীগুলোতে ক্রিসমাস পৌঁছে যায় সাংস্কৃতিক উৎসব হয়ে । আর এখন তো ক্রিসমাস পালিত হচ্ছে গোটা বিশ্বজুড়ে।