ক্রিকেট নিয়ে ক্রিকেট ভক্তদের মাঝে উন্মাদনার শেষ থাকে না। যার যার প্রিয় দল নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলেই থাকে। এর পাশাপাশি চলুন আমরা জেনে নিই ক্রিকেট সম্পর্কীয় কিছু মজার সাধারণ তথ্য।
দুই বন্ধু কোন বিষয়ে একমত হচ্ছ না, কিন্তু একটা ফলাফল দরকার। এমন সময়ে হুট করে পকেট থেকে একটা কয়েন নিয়ে টস (Toss) করে ফেলো এমন অনেকেই আছো। শুধু তোমাদের ক্ষেত্রে নয়, কয়েন টস অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয় কোন এক পক্ষ নির্ধারণের জন্য। যেহেতু এটাতে প্রতারণার সুযোগ বেশ কম, তাই কয়েন টস সব ক্ষেত্রেই মোটামুটি গ্রহণযোগ্য। বিশেষ করে ক্রিকেটে টস কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আর বলার বাকি থাকে না। খেলা শুরু হবার আগে দুই দলের অধিনায়ক ম্যাচ রেফারির তত্ত্বাবধানে টস করেন এবং যে অধিনায়ক টস জেতেন, তিনি সিদ্ধান্ত নেন আগে বোলিং করবেন নাকি ব্যাটিং। আগে ব্যাটিং নাকি বোলিং করা উচিত তা নির্ভর করে মাঠের পিচের ওপর। তাই টসে জেতা সব দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
পদার্থবিদ্যা মোটামুটি সবকিছুই ব্যাখ্যা করতে পারে। এমনকি যেসব ঘটনা আমরা নিছক ভাগ্যের খেলা বলে চালিয়ে দেই, সেসব ব্যাপারেরও ব্যাখ্যা থাকে। কিন্তু টস করার পর কয়েনের কোন দিক উঠবে তা আসলেই আগে থেকে বলা মুশকিল। এক্ষেত্রে কেউ যদি প্রতারণা করতে চায়, তবে তাকে নিজে থেকে একটি কয়েন বানিয়ে নিতে হবে। কারণ সাধারণ কয়েনের উভয় পাশেরই ভর ও পরিমাপ সমান থাকে, যে কারণে এখানে আগে থেকে ফলাফল আন্দাজ করা সম্ভব নয়। কিন্তু কয়েনের কোন এক পাশের ভর যদি কমবেশি হয়, তাহলে আগে থেকে আন্দাজ করা যায় যে যে পাশের ভর বেশী, ঐ দিকটি মাটির দিকে থাকবে। এ তো গেলো পদার্থবিদ্যার কথা, এবার আসি গণিতে।
তোমরা অনেকেই হয়তো সম্ভাব্যতার সূত্র বা Probability Theory-র নাম শুনেছো। টস বা এমন কোন ঘটনা যেগুলো আগে থেকে আন্দাজ করা যায়না, সেগুলোর ক্ষেত্রে এই সূত্র কাজে লাগিয়ে কিছুটা ব্যাখ্যা দেয়া যায়। অবশ্য সম্ভাব্যতার সূত্র কখনো পুরোপুরি নিশ্চয়তা দেয় না। এটি সবসময় ফলাফলটি শতকরা হিসেবে ৪০% বা ৫০% এভাবে নির্ণয় করা হয়।
সম্ভাব্যতার সূত্রটি হলঃ সমসম্ভাব্য অনুকূল ঘটনার সংখ্যা/সমসম্ভাব্য মোট ফলাফলের সংখ্যা।
একটি কয়েনকে টস করা হলে এর ফলাফল দু’টি আসতে পারে, হেড অথবা টেল। সুতরাং মাত্র একটি কয়েন টস করা হলে হেড বা টেল আসার সম্ভাব্যতা প্রতিটির ৫০%।
এবার আমরা আরেকটু বিশ্লেষণে যাই। কোন ঘটনার সম্ভাব্যতা ০ মানে হল এই ঘটনা ঘটার কোন সম্ভাবনাই নেই। যেমন কয়েন টস করা হলে একই সাথে হেড ও টেল কখনোই আসতে পারে না, তাই এই ঘটনার সম্ভাব্যতা ০।
একটি কয়েন যখন উপরে ছোঁড়া হয়, তখন এর ফলাফল আসতে পারে মাত্র দু’টি, হেড ও টেল আসার সম্ভাবনা ৫০% করে তা আগেই বলেছি। এখন যদি কয়েনটি ২০০ বার নিক্ষেপ করা হয় এবং তার মধ্যে ৮০ বার হেড হয়, তাহলে এখেত্রে ফলাফলটি দাঁড়াবে ৮০/২০০=০.৪।
কয়েন টসের ওপর অনেক গবেষক বিস্তর গবেষণা করেছেন এবং তাঁদের মধ্যে পার্সি ডাইকনিস, সুসান হোমস এবং রিচার্ড মন্টগোমারি তাঁদের গবেষণালব্ধ ফলাফল ৩১ পৃষ্ঠার একটি জার্নালে প্রকাশ করেন। তাঁদের গবেষণা অনুসারে সম্ভাব্যতার সূত্র খাটিয়ে নিম্নোক্ত সম্ভাবনাগুলো পাওয়া যায়-
১. একটি কয়েন টস করার পর যদি ধরে ফেলা হয়, তবে এক্ষেত্রে এর যে দিক উপরে রেখে ছোঁড়া হয়েছিল, সেইদিক আসার সম্ভাবনা ৫১%।
২. কোন কয়েনকে যদি না ছুঁড়ে কোন স্থানে রেখে ঘুরানো হয় ( তোমরা অনেকেই টেবিলে কয়েন রেখে টোকা দিয়ে কয়েনটিকে ঘুরিয়ে ফেলো, এখানে এটার কথাই বলা হচ্ছে), তবে এক্ষেত্রে যে দিকটির ভর বেশী, সেইদিক নিচে থাকার সম্ভাবনা ৮০%। অবশ্য দুই দিকের ভর সমান হলে এক্ষেত্রে যেকোনো এক দিক পড়ার সম্ভাবনা ৫০%।
৩. কয়েন ছুঁড়ে দেয়ার পর মাটিতে পড়লে কোন দিক না এসে মাঝামাঝি অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকবে, এমন সম্ভাবনা প্রতি ৬০০০ টসে ১ বার।