প্রায় প্রত্যেক খেলাতেই খেলোয়াড়রা বিশেষ ধরণের পোশাক পরে থাকেন। এই পোশাকগুলো শুধু যে তাদের দলকেই প্রদর্শন করে তা না, সেই সাথে প্রত্যেক খেলার পোশাকগুলো ঐ খেলার জন্য সুবিধাজনক হয়। যেমন, ফুটবল খেলা পুরোটাই দৌড়াদৌড়ির ওপর নির্ভর করে বলে এই খেলায় খেলোয়াড়রা হাফপ্যান্ট পরে থাকেন যা তাদের খেলতে সাহায্য করে।
বর্তমান বিশ্বে ক্রিকেট বেশ জনপ্রিয় একটি খেলা বলে এর খেলোয়াড়রা মিডিয়াতে বা গণমাধ্যমে বেশ পরিচিতি পেয়ে থাকেন। বিভিন্ন ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রিকেটকে নির্ভর করে বড় অংকের টাকা বিনিয়োগ করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রচারণা চালাতে ক্রিকেটারদের জার্সিকে একটি বড় মাধ্যম হিসেবে দেখে থাকে। প্রায় সব দেশের খেলোয়াড়দের জার্সিতে একটি করে প্রতিষ্ঠানের নাম যুক্ত থাকে। এটি আসলে ঐ দলের স্পন্সরের নাম।
একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রতি দলের স্পন্সর নেয়া হয়, যারা ঐ সময়টুকুতে দলটির পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম আগামী দুই বছরের জন্য রবি আজিয়াটার সাথে স্পন্সরশীপ চুক্তি করেছে, অর্থাৎ আগামী দুই বছর বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের জার্সিতে রবির লোগো শোভা পাবে।
তবে বাণিজ্যিক চুক্তি ছাড়াও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতেও স্পন্সরের লোগো জার্সিতে পরিলক্ষিত হয়। যেমনঃ ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার জার্সিতে Unicef এর লোগো দেখা যায়। এছাড়া, স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট দল মাঝে মাঝে গোলাপী রঙের জার্সি পরে খেলতে নামে।
প্রতিটি দলের জার্সি ঐ দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। যেমন বাংলাদেশর ক্রিকেট দলের জার্সি আমাদের পতাকার রঙের সাথে মিলিয়ে লাল-সবুজ। যার ফলে দেখার সাথেই বোঝা যায় যে এটা বাংলাদেশের জার্সি। ক্রিকেটাররা পোলো টি-শার্টের সাথে ট্রাউজার পড়ে থাকেন।
জার্সিগুলো পলিয়েস্টার কাপড়ের তৈরি হয়ে থাকে যেগুলো বেশ আরামদায়ক, এবং খেলার সময় পড়ে গেলে শরীরের কোথাও কেটে যাওয়ার বা ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। জার্সিতে সামনের দিকে দলের নাম ও স্পন্সরের লোগো দেয়া থাকে। হাতের বাহুতেও স্পন্সরের লোগোর উপস্থিতি দেখা যায়।
জার্সির পেছনের দিকে খেলোয়াড়ের নাম ও নাম্বার দেওয়া থাকে। প্রত্যেক খেলোয়ারের জন্য আলাদা আলাদা নাম্বার দেওয়া হয়। খেলার মাঠে খুব ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করেন, এবং সবাই একই রকম পোশাক পরে থাকেন বলে সহজে কাউকে আলাদা করে চেনা যায় না। তাই প্রত্যেক খেলোয়াড়ের আলাদা আলাদা নাম্বার তাদের আলাদা করে চিনতে সাহায্য করে।
জার্সির এই নাম্বারের ব্যাপারে অনেক খেলোয়াড়ের বেশ মজার তথ্য আছে। মেসি এবং শচীন উভয়েরই জার্সির নাম্বার ১০, রোনালদো এবং ধোনি উভয়েরই জার্সির নাম্বার ৭।
ক্রিস গেইল ৩৩৩ নাম্বারের জার্সি পড়েন কারণ এটা তাঁর টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান রেকর্ড। মুত্তিয়া মুরালিধরন ৮০০ নাম্বারের জার্সি পড়তেন কারণ এটা ছিল তাঁর উইকেট সংখ্যা। ক্রিকেটারদের মধ্যে একমাত্র ভিরেন্দর শেওয়াগের জার্সিতে কোন নাম্বার নেই।
ইউরোপিয়ান ফুটবলে একটি দলের দুইটি ভিন্ন ভিন্ন জার্সি থাকে। একটি জার্সি Home ম্যাচের সময় আর অন্যটি Away ম্যাচের সময় পরিধান করে। যেমনঃ রিয়াল মাদ্রিদ যখন Home ম্যাচ খেলে তখন তারা সাদা জার্সি পরে খেলে আর Away ম্যাচ খেলে কালো জার্সি পরে। আর গোলকিপারের জার্সি হতে হয় সবার চেয়ে আলাদা অর্থাৎ রেফারি বা টিমের জার্সি থেকে। এর মূল কারণ হচ্ছে যাতে সহজে গোলকিপারকে সনাক্ত করা যায় মাঠে।
ম্যাচের জার্সি বাদেও অধিকাংশ ক্রিকেট বা ফুটবল দলের আলাদা করে প্র্যাকটিস জার্সি রয়েছে। প্র্যাকটিস জার্সিতেও স্পন্সরের লোগো দেখা যায়।
ক্রিকেট বা ফুটবল ছাড়াও কিছু কিছু খেলায় খেলোয়াড়রা Protective জার্সি পরে খেলতে নামে। এর উজ্জ্বল উদাহারণ হচ্ছে মোটর রেসিং ও ফর্মুলা রেসিং। এই জার্সি বা পোশাক খেলোয়াড়কে আগুন থেকে রক্ষা করে। আমেরিকান রাগবিতেও এই Protective জার্সির প্রচলন দেখা যায়।
এছাড়া, সাঁতারুরা যে বিশেষ পোশাক পরে পুলে সাঁতার করতে নামে যা পানিকে প্রতিহত করে শরীরকে ভেসে থাকতে সাহায্য করে। এমনকি সারা শরীরের পেশিতে যাতে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক থাকে সেটাও এই বিশেষ পোশাক নিশ্চিত করে। সাইক্লিস্টরা আবার যে পোশাক পরে খেলতে নামে তা বাতাসের বাধা পেরিয়ে সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে।
নিচে বিভিন্ন ওয়ানডে ক্রিকেট দলের জার্সি স্পন্সরদের তালিকা দেয়া হলঃ
Country |
Jersy Sponsor |
Bangladesh |
Robi |
India |
The STAR India |
Pakistan |
Pepsi |
Srilanka |
Dialog Axiata PLC |
South Africa |
CASTLE LAGER |
Australia |
Commonwealth Bank & Victoria Bitter ( VB ) |
New Zealand |
ANZ & Ford |
England |
Waitrose |
West Indies |
Digicel |
Zimbabwe |
Karbonn |
এবার দেখে নেয়া যাক বিশ্বের স্বনামধন্য ফুটবল ক্লাবের জার্সি স্পন্সরদের তালিকাঃ
Football Club |
Sponsor |
Manchester United |
Chevrolet |
Manchester City |
Etihad Airways |
Chelsea |
Samsung |
Arsenal |
Fly Emirates |
Liverpool |
Standard Chartered |
Barcelona |
Qatar Airways |
Real Madrid |
Fly Emirates |
Athletico Madrid |
Azerbaijan Land of Fire |
Juventus |
Jeep |
Inter Milan |
Pirelli |
AS Roma |
Nike |
AC Milan |
Fly Emirates |
Napoli |
Acqua Lete |
Bayern Munich |
T Mobile |
Borussia Dortmund |
Evonik |
Paris Saint-Germain |
Fly Emirates |
AS Monaco |
Nike |
এছাড়া, বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা বিভিন্ন ফুটবল ক্লাব সহ আন্তর্জাতিক ফুটবল দলের কিট স্পন্সর করে থাকেন। এর মধ্যে Nike, Adidas, Puma অন্যতম।