দ্য গ্রেট ওয়াল অব চায়না বা চীনের মহাপ্রাচীর মানুষের তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থাপত্য। এটি পাথর ও মাটি দিয়ে তৈরি। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক থেকে খ্রিস্টীয় ১৬শ শতক পর্যন্ত চীনের উত্তর সীমান্ত রক্ষা করার জন্য তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রাচীর তৈরি করা হয়। এরকম অনেকগুলি প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিলো, তবে ২২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াঙের অধীনে নির্মিত প্রাচীরটিই সবচেয়ে বিখ্যাত। এটি বর্তমান প্রাচীরের অনেক উত্তরে অবস্থিত এবং এর খুব সামান্যই অবশিষ্ট আছে। বর্তমান প্রাচীরটি মিং রাজবংশের শাসনামলে নির্মিত হয়।
চীনের মহাপ্রাচীর প্রায় ৫ থেকে ৮ মিটার উচু এবং ৮৮৫২ কিলোমিটার লম্বা। এটি সাংহাই পাস থেকে শুরু হয়ে লোপনুর নামক স্থানে শেষ হয়েছে। এর মূল অংশের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিলো প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ২০৮ সালের দিকে। নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন চৈনিক বা চাইনিজরা কিং সাম্রাজ্যের সময়। চীনের প্রথম সম্রাট কিং সি হুয়াং এটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন এবং শত্রুর হাত থেকে নিজের সম্রাজ্যকে রক্ষার জন্য দীর্ঘ করে নির্মাণ করেছিলেন। এটি চীনের প্রকৃতিক বাঁধাগুলো ছাড়া অন্যান্য অঞ্চল পাহারা দেওয়ার কাজে এবং উত্তর চীনের উপজাতি সুইং নুর বিরুদ্ধে এটি প্রথম স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলো।
হান, সুই, নরদান এবং জিং সাম্রাজ্যের সময়ের ইতিহাসেও যে কারণে তারা এটি তৈরি করেছিলেন ঠিক একই কারণে চীনের প্রাচীরের পরিবর্ধন, পরিবর্তন, সম্প্রসারণ, পুনঃনির্মাণের উল্লেখ আছে।
এটি এতোটাই বড় ও প্রসিদ্ধ বলে ১৯০৪ সাল থেকে দাবি করা হয়ে আসছে যে, চাঁদ থেকে চীনের মহাপ্রাচীর দেখা যায়। ৬৫ বছর পরে এই বিষয়টির সত্যতা নিয়ে কথা বলেন অ্যাপোলোর অভিযাত্রীরা। তারা উত্তর ছিলো : না। চাঁদ থেকে চীনের মহাপ্রাচীর দেখা যায় না।
অ্যাপোলো ১২ অভিযাত্রী অ্যালান বিন বলেন, চাঁদ থেকে পৃথিবীকে সাদা মেঘ ও কুয়াশায় আচ্ছন্ন দেখা যায়। সেখানে কিছু নীল, কিছু হলুদ, কিছু সবুজ ও বেশিরভাগ জায়গায় সাদা দেখা যায়। তবে মানুষের তৈরি কোনও কিছু দেখা যায় না।
চীনের নিজস্ব অভিযাত্রী ইয়াং লুইও একই কথা বলেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিযাত্রীরা চাঁদে ঘুরে আসার পর কেউই চাঁদ থেকে চীনের মহাপ্রাচীর দেখার দাবি করেননি। পৃথিবী থেকে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬০১ মাইল দুরে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন যা চাঁদ থেকে পৃথিবীর কাছাকাছি অবস্থিত, সেখান থেকেও খালি চোখে চীনের মহাপ্রাচীর দেখা যায় না।
অবশেষে ছবিতে..
চীন-আমেরিকান অভিযাত্রী লিরয় চিয়াও অবশ্য তার ক্যামেরা ও ১৮০ মিলিমিটার লেন্সে মহাপ্রাচীরটি ধরতে পেরেছেন। যদিও মহাপ্রাচীরের একটি ক্ষুদ্রতম অংশ চিহ্নিত করা গেছে। মানুষের চোখ প্রায় ৫০ মিলিমিটার লেন্সের সমান। ফলে ১৮০ মিলিমিটার লেন্স মানুষের দৃষ্টিশক্তির চেয়ে ঢের বেশি।
চিয়াও অবশ্য ৪০০ মিলিমিটার লেন্স ব্যবহার করে আরেকটি ছবি তোলেন। তবে বিশেষজ্ঞরা ছবি চিহ্নিত প্রাচীর আসলেই চীনের মহাপ্রাচীর কিনা তা নিয়ে সন্ধিহান। নাসা বলছে, আমরা ক্যামেরা দিয়ে মহাপ্রাচীরটির ছবি তোলা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করি। তবে রাডার ব্যবহার করে লো-অরবিট স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সেটি সম্ভব হতে পারে।
সূত্র : বিলিভ ইট অর নট