ধরুন আপনাকে গাড়ি নিয়ে একটা পাহাড় পাড়ি দিতে হবে। দরকার একটা রাস্তা, গাড়িই আপনাকে পার করে দিবে। কিন্তু পানি পথে যদি আপনাকে যদি পানির উঁচু থেকে নিচু স্তরে বা নিচু থেকে উঁচু স্তরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় তার জন্য একটা অভিনব পদ্ধতির প্রয়োজন পড়ে। নদী বা পানি প্রবাহের পথে বাধ দিয়ে তৈরি এই অভিনব পদ্ধতিটি লক সিস্টেম নামে পরিচিত।
উভয় প্রান্তে গেইট বিশিষ্ট এক একটি বিশেষ চেম্বার যা প্রয়োজন অনুসারে খোলা বা বন্ধ রেখে পানির উচ্চতা বাড়িয়ে কিংবা কমিয়ে নৌযান কিংবা জাহাজকে তার যাত্রাপথ ঠিক করে দেয়।
বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লক হল Kieldrecht Lock যা বেলজিয়ামের বন্দর Port of Antwerp এর প্রবেশ পথে অবস্থিত; যার দৈর্ঘ্য ৫০০মিটার, প্রস্থ ৬৮ মিটার, গভীরতা ১৭.৮ মিটার ও মোট লকের সংখ্যা চারটি।

পানামা খালের কথা আমরা অনেকেই জানি যা অ্যাটল্যান্টিক ও প্যাসিফিক সাগরকে যুক্ত করে। এই দুই সমুদ্রের উচ্চতার পার্থক্যের কারণে জাহাজ পূর্বে এই খাল পাড়ি দিতে পারত না। পানামা খাল পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি জাহাজ চলাচলকারী কৃত্রিম খালের একটি ও অন্যটি হচ্ছে সুয়েজ খাল। পানামা খাল না থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব থেকে পশ্চিম উপকূল অভিমুখে যাত্রাকারী যেকোন জাহাজকে দক্ষিণ আমেরিকার কেইপ হর্ন হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে অতিরিক্ত ১৫ হাজার কিলোমিটার বা ৮ হাজার নটিক্যাল মাইল পথ অতিক্রম করতে হতো। এছাড়া, উত্তর আমেরিকার এক দিকের উপকূল থেকে দক্ষিণ আমেরিকার অন্য দিকের উপকূলে যাওয়ার ক্ষেত্রেও পানামা খালের কারণে ৬৫০০ কিলোমিটার কম পথ পাড়ি দিতে হয়। পানামা খালটির উভয় প্রান্তে ২টি ছোট সমুদ্র সমতল ভাগ আছে। তিন জোড়া জলকপাট বা লক রয়েছে, যেগুলো জাহাজকে সমুদ্র সমতল থেকে ৩২ মিটার উপরে তুলে দেয়। এখানে ৩২ মাইল অতি প্রশস্ত ভাগ আছে, যার মধ্যে গাট্টন লেক ও গাইলার্ডকাট নামে আট মাইল দীর্ঘ অপরিসর চ্যানেল আছে। এর ভিতর দিয়ে মাঝারি সাইজের যে কোন জাহাজ চলাচল করতে পারে।

লক সিস্টেমের মূল লক্ষ্য হলো পানির তল সমান করার মাধ্যমে নৌযানের চলাচলকে সহজ করা। ধরে নাও নৌযান উচু স্তরে যাবে। এক্ষেত্রে প্রথমে নৌযানকে নিচের স্তর থেকে চেম্বারে প্রবেশ করানো হয় সহজেই। এরপর গেইট লক করে চেম্বারের পানি পৃষ্টের উচ্চতা বাড়ানো হয় ও যখন চেম্বারের পানির স্তর আর অপর প্রান্তের পানির স্তর সমান হয় তখন চেম্বারের ঐ প্রান্তের গেইট খুলে দেওয়া হয়। আর তখন নৌযান চেম্বার থেকে বের হয়ে উচু স্তরে চলে আসে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের লকিং সিস্টেম ব্যবহার হয়ে থাকে জলপথে। Lock Flights, Staircase Lock, Double Lock, Stop Lock, Round Lock, Drop Lock, Flood Lock, Bi-Directional Lock প্রভৃতি এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।