আমদের আশপাশের দুনিয়াটা বড়ই বৈচিত্র্যময়। হাজারো অদ্ভুত প্রাণী বা পতঙ্গ আমাদের চারপাশে ঘুরাফেরা করতে দেখা যায়। জোনাকি পোকা এর মধ্যে অন্যতম। জোনাকি পোকা যাকে ইংরেজিতে বলে Lightning Bug বা Firefly। জোনাকি পোকার মিটমিট করে আলো জ্বলার রহস্য জানার আগে তোমাদের একটা গল্প বলি।
ছোটবেলায় তখন আমি ক্লাস 3 বা 4 এ পড়ি। বাবা-মার সাথে কোরবানির ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি গিয়েছি। রাতের খাবারের পরে আমার দাদু তার নাতি-নাতনিদের সাথে গল্প করতে বসেছে। গ্রামের বাড়িতে তখন রাত আটটা বা নয়টা বাজা মানে যেন গভীর রাত, চারিদিকে শুনশান নীরবতা। হটাৎ আমার দাদু আমাদের বললেন, বাড়ির পাশে বাঁশের ঝোপের দিকে তাকাতে। আমরা দেখলাম ছোট ছোট পোকা গায়ে মিটিমিটি সবুজ আলো নিয়ে ঘুরছে কিন্তু সে আলোতে তীব্রতা নেই। আমি মনে মনে ভাবছিলাম যে এই পোকা এতো সুন্দর কিভাবে। তখন মনে মনে ভাবছিলাম যে হাজার হাজার প্রহরী প্রদীপ নিয়ে আমাদের গ্রামটাকে পাহারা দিচ্ছে।
জোনাকিকে lightning বাগ বলা হয়ে থাকে কিন্তু আসলে এটি কোনো বাগ প্রজাতির প্রাণী নয়, জোনাকি শুধুমাত্র ছোট্ট একটি পোকা। অন্যান্য পোকার মতই এদের শক্ত দুটি পাখা রয়েছে। এগুলো পিঠের উপর সোজাসুজিভাবে থাকে। দেহের ভারসাম্য রক্ষায় এবং উড়ার কাজে এই পাখাগুলোকে ব্যবহার করে থাকে।
চলো এবার জেনে নেই জোনাকি পোকার আলো জ্বলার রহস্যটি।
জোনাকি পোকার পিছনে বা তলপেটের শেষদিকে Luminescent Organ থাকে। এই Luminescent Organ এর মধ্যে দুটি রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এর একটির নাম লুসিফেরাজ (Luciferage) ও অন্য রাসায়নিক পদার্থের নাম লুসিফেরিন (Luciferin)। লুসিফারেজ একটি এনজাইম যা আলো ছড়ায় অর্থাৎ এই লুসিফারেজ এনজাইমের কারণেই জোনাকি পোকা আলো ছড়ায়। আর লুসিফারিন তাপ প্রতিরোধী যা আলোকে ঠান্ডা রাখে।
সবচেয়ে মজার বিষয় এই যে একটি জোনাকি পোকা তার শক্তির শতভাগ আলোতে পরিণত করতে পারে। কিন্তু একটি সাধারণ বাতি তার শক্তির দশ ভাগ আলোতে পরিণত হয় আর বাকি নব্বই ভাগ তাপ শক্তিতে পরিণত হয়। তাই জোনাকি পোকার আলোতে তাপ উৎপন্ন হয় না।
জোনাকিরা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া না পর্যন্ত বাহিরে ঘুরে বেড়ায় না। পরবর্তীতে তারা প্রাপ্ত বয়স্ক হলে আলো জ্বলে সংকেত প্রদান করে থাকে। জোনাকি পোকার আলো জ্বলার অন্যতম কারণ হচ্ছে তার বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করা।
জোনাকি পোকা দিনের বেলায় লুকিয়ে থাকে গাছের বাকলের নিচে, শুকনো পাতার নিচে বা ঘাসে আর রাতের বেলায় তারা বেরিয়ে আসে। তারা মূলত স্যাঁতসেঁতে জায়গা পছন্দ করে।
জোনাকিদের শরীরের ওজনের অর্ধেকটাই তার বাতির ওজন। দিনের বেলায়ও তারা আলো জ্বলায় কিন্তু সূর্যের আলোর কারণে আমরা তা দেখতে পাই না।