৭ বছরের ছোট্ট সারা। বাবা-মায়ের সাথে থাকে বনশ্রীতে। পড়ে নার্সারিতে। স্কুলে যাবার প্রতি তার খুব আগ্রহ। কিন্তু ভোরবেলা সে ঘুম থেকে উঠতেই চায় না। কারন প্রতিদিন তার ঘুমাতে রাত ১২টা বেজে যায়।
রাত ১১টায় সে মায়ের সাথে নাটক দেখে আর রাতের খাবার খায়। রাত ১১টায় নাটক শুরু হবার আগে সে কোনভাবেই কিছু খায় না। সন্তান যেন ঠিক মতো খায় সেই জন্য মাও ১১টা বাজার আগে তাকে কিছু বলেন না। আসলেই কি এই খাবার সন্তানের কাজে লাগছে?
অনেক সময় কর্মজীবী মায়েরা তাদের সন্তানদের বাড়ির কাজের লোকের কাছে রেখে যান। দেখা যায়, সেই মা নিজে নাটক না দেখলেও তিনি যার কাছে তার আদরের সন্তানটিকে রেখে যাচ্ছেন সেই মানুষটি শিশুটিকে পাশে বসিয়ে বা ঠিক মতো খাওয়ানো কিংবা ঘুম পাড়ানোর জন্য শিশুটিকে সঙ্গে নিয়ে কোন টিভি সিরিয়াল বা বিশেষ অনুষ্ঠান প্রতিনিয়ত দেখছে। ফলে মনের অজান্তেই সেই ছোট্ট শিশুটি এ ধরনের অনুষ্ঠানগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে।
এই বিষয়ে চিকিৎসক ডা. মুস্তাবশিরা বলেন, 'দেখা যায় মায়েরা টিভিতে নাটক বা অন্যকোন অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে বাচ্চাদের খাওয়াতে থাকেন। এ পদ্ধতিতে খাওয়ানো একেবারেই ঠিক না। কারণ, আমাদের মস্তিস্কের একটা অংশ আছে যাকে মেডিকেলের ভাষায় Satiety center বলা হয়। এর কাজ হল শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ শেষ হলে মস্তিস্ক থেকে সিগন্যাল প্রদান করা। কিন্তু বাচ্চারা যখন টেলিভিশন দেখে আর খায় তখন মস্তিস্কের এই অংশের কার্যকারিতা অনেকটাই হ্রাস পায়। ফলে বাচ্চারা কখনো প্রয়োজনের অতিরিক্ত খায় আবার কখনো খুব কম খায় যা শিশু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।'
রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার আরকান্দি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নাইমা ফেরদৌস শান্তা জানান, টিভি দেখে দেখে খাওয়ানোর অভ্যেসের প্রভাব পড়ছে বাচ্চাদের ঘুম, খাদ্যাভাস সবকিছুর ওপর। তিনি খাবারের প্রসঙ্গটিকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে বলেন, মায়েরা বিভিন্ন চ্যানেলে নাটক দেখেন আর বাচ্চাদের খাবার খাওয়াতে থাকেন, মায়েদের সাথে সাথে বাচ্চাদেরও মনোযোগ থাকে এই সকল নাটকের দিকে। খাবারের প্রতি বাচ্চাদের মনোযোগ থাকে কম। ফলে কোন খাবারের স্বাদ কি, মাছ খাচ্ছে না মাংস খাচ্ছে বা খাবারের সাথে যে সাধারণ পরিচিতি তা বাচ্চাদের হয় না, যা বাচ্চাদের বুদ্ধি বিকাশের জন্য হুমকি স্বরূপ। তাই সকলের সঙ্গে খাবার টেবিলে বসে শিশুদের খাওয়ানোর অভ্যাস করাটা জরুরি।'