তুমি যেখানটায় বসে এখন আইসিক্রম খাচ্ছ লক্ষ বছর আগে হয়েতা ঠিক এখানটাতেই দাঁড়িয়ে কোন অতিকায় ডাইনোসোর ঘাস লতাপাতা দিয়ে তার ডিনার সারিছেলা। কালের বিবর্তনে প্রাগৈাতিহাসিক কালের প্রাণী ডাইনোসোররা বিলুপ্ত হলেও ডাইনোসোরদের অস্তিত্ব এবং জীবন নিয়ে এখন অবধি কৌতুহলের কোন শেষ নেই আমাদের।
বৈজ্ঞানিক গবেষণার বাইরে, অসংখ্য চলচ্চিত্রে, গল্পে, কার্টুনে ডাইনোসোরদের নিয়ে কল্পনার লাগাম ছাড়িয়ে দিতে বাকি রাখেনি কল্পবিলাসী মানুষেরা। তাই ডাইনোসোরদের জীবন নিয়ে বহু সত্য যেমন দিন দিন উন্মোচিত হচ্ছে, পাশাপাশি কল্পনায় বোনা বহু ভুল তথ্যও না জেনেই আমরা সত্যি বলে ভেবে নিচ্ছি।
এমনই কিছু ভুল ধারণা আমরা এতোটাই অন্ধভাবে বিশ্বাস করে বসে আছি যে, সত্যিটা জানলে পিলে চমকে যাবে আমাদের। চলো জেনে নেয়া যাক ডাইনোসোরদের নিয়ে জানা আমাদের ভুল ধারণাগুলো-
১. সব ডাইনোসোরেরাই ছিলো দানবাকৃতির, এই প্রচিলত অথচ ভুল ধারণাটি ছোট-বড় সকলেরই আছে। অথচ খুঁজে পাওয়া ফসিল থেকে জানা গেছে বেশিরভাগ প্রজাতির ডাইনোসোরেরাই ছিলো পাঁচ থেকে পাঁচশো পাউন্ড, অর্থাৎ প্রায় আড়াই কেজি থেকে আড়াইশো কেজি ওজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
কিছু সংখ্যক প্রজাতি যে বিশালাকায় ছিলো না তা অবশ্য না। কিন্তু আমরা ডাইনোসোরকে বিরাট আকৃতির প্রাণী হিসেবে কল্পনা করতে যতোটা আগ্রহী, ছোট আকারের ডাইনোসোর কল্পনা করতে ততটা রোমাঞ্চ অনুভব করি না বলেই গল্প-সিনেমায় ঘুরেফিরে কেবল বিশাল আকৃতির ডাইনোসোরদেরই দেখানো হয়।
২. যদিও শিশুতোষ গল্প ও কার্টুনগুলোতে গুহামানব এবং ডাইনোসোরদের সমসাময়িক দেখানো হয় কিন্তু বাস্তবতা হলো সর্বশেষ ডাইনোসোরের বিলুপ্তির অন্তত ছ’শো পঞ্চাশ লক্ষ বছর বা ৬৫ মিলিয়ন বছর পরে পৃথিবীর বুকে প্রথম মানুষের আগমণ ঘটে।
সুতরাং, পৃথিবীর কোন মানুষই জীবিত কোন ডাইনোসোরের দেখা পায়নি। (পৃথিবীতে প্রথম হোমোসেপিয়েন্স-এর আগমণ ঘটে প্রায় ২০০,০০০ বা দশমিক দুই মিলিয়ন বছর আগে, সূত্র : উইিকিপিডিয়া)
৩. অনেকেরই ধারণা, সমস্ত ডাইনোসোরেরা একই সঙ্গে খুব অল্প সময়ের মধ্যে পৃথিবীর বুক থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিেলা। এখন পর্যন্ত যতদূর জানা যায়, প্রায় ৬৫.৫ মিলিয়ন বছর আগে মেক্সিকোর কাছাকাছি কোথাও উল্কাপিন্ডের আঘাতের ফলে সৃষ্ট ভীষণ ধূলিমেঘের প্রতিক্রিয়ার ফলেই ডাইনোসোরেরা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
কিন্তু তা বলে সমস্ত ডাইনোসোরেরা কিন্তু একই সময়ে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। ধূলিমেঘের ফলে সূর্যালোক ঠিকমতো পৃথিবীতে পৌঁছাতে না পারায় প্রথমত গাছপালা জন্মাতে অসুবিধে সৃষ্টি হয়। যার ফলে তৃণভোজী ডাইনোসোরেরা খাদ্যের অভাবে সংখ্যায় কমতে শুরু করে এবং তারই প্রতিক্রিয়ায় মাংসাশী ডাইনোসোরেরা যারা খাদ্যের জন্য তৃণভোজীদের উপরই নির্ভরশীল ছিলো, তারাও ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে থাকে।
শুনেল অবাক হবে, এই সমস্ত প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে অর্থাৎ উল্কাপিন্ড আঘাতের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের পর থেকে ডাইনোসোরেরা চিরতরে পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যেতে প্রায় দু’ লাখ বছরের মতো সময় লেগেছিলো।
৪. ডাইনোসোর নিয়ে আরেকটি প্রচিলত ভুল ধারণা হলো, ডাইনোসোরেরা চলাফেরায় অত্যন্ত ধীরগতির ছিলো। সিনেমা বা কার্টুনে থপথপে পা ফেলে চলা ডাইনোসোরদের ভীষণ ধীরগতিতে চলতে দেখেই আমরা অভ্যস্ত।
কিন্তু ডাইনোসোরদের হাড়ের গড়ন এবং আধুনিককালের প্রাণীদের গতি ও অস্থিতন্ত্র পাশাপাশি তুলনা করে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, ডাইনোসোরেরা প্রতি ঘন্টায় অন্তত ১৮ মাইল থেকে চল্লিশ মাইল পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারতো, যেখানে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে দৌঁড়াতে পারা মানুষও ঘন্টায় মাত্র বারো মাইল পথ পাড়ি দিতে পারে।
৫. ডাইনোসোরদের নিয়ে সবচেয়ে বড় ভুল ধারণাটি হলো, পৃথিবীতে তারা কোন উত্তরসূরী রেখে যেতে পারে নি। কিন্তু, পাখিরা যে ডাইনোসোরদেরই বিবর্তিত রূপ, এ ব্যাপারে অনেক প্রাণীবিজ্ঞানী এতোটাই নিশ্চিত যে তাদের অনেকেই সরাসরি দাবি করেন, পাখিরাই এ যুগের ডাইনোসোর।
আরো জেনে রাখা ভালো বিভিন্ন সরীসৃপ প্রাণী যেমন- কুমির, টিকটিকি বা সাপের চেয়েও অস্ট্রিচ পাখি, কবুতর, চড়ুই, এমনকি মুরগী ডাইনোসোরদের অনেক কাছের সর্ম্পকের। ।