ডোরাকাটা দাগ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে!

যেসব প্রাণীদের গায়ে ডোরাকাটা দাগ থাকে সেগুলোর সাধারণত কোন পরিবর্তন হয় না। তবে এক্ষেত্রে জেব্রা ব্যতিক্রম। অবাক করা হলেও সত্যি গরম পরিবেশে পরিবর্তিত হতে পারে জেব্রাদের গায়ের ডোরাকাটা দাগ।

যে তিন প্রজাতির জেব্রা পাওয়া যায় তাদের সবার গায়েই মোটা ডোরাকাটা দাগ থাকে। কিন্তু কেন এই দাগ থাকে তা বিজ্ঞানীদের বহু বছর ধরে গোলকধাঁধায় রেখেছে। মূলত ডোরাকাটা দাগের ৫টি কারন চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা।

– পোকামাকড় প্রতিরোধ করা

– কিছু বিশেষ সময়ে ছদ্মবেশ ধারণ করা

– শিকারিদের ধাঁধার মধ্যে ফেলে দেয়া

– গায়ের তাপমাত্রা কমানো

– একজন আরেকজনকে চেনার ব্যাপারে প্রাণীদের সাহায্য করা

এ ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য সবচাইতে বেশি দেখা যায় (ইথিওপিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত) এমন প্রজাতির জেব্রার ওপর বর্তমানে গবেষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। তবে তাদের ধারণা তাপমাত্রার ওপরেই নির্ভর করে জেব্রাদের গায়ের ডোরাকাটা দাগ। তাপমাত্রা যত বেশি হবে, গায়ে ডোরাকাটা দাগও তত বেশি হবে।

লস এঞ্জেলসের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার জীববিজ্ঞানী ব্র্যান্ডা ল্যারিসন এবং তার কিছু সহকর্মী আফ্রিকার ১৬টি জেব্রার ডোরাকাটা দাগের গঠন নিয়ে গবেষণা করেন। তারা জেব্রার গায়ের দাগের জন্য ২৯টি পরিবেশগত ঘটনাকে দায়ী করেন যেমনঃ মাটির আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, বিভিন্ন রকম রোগের উপস্থিতি ইত্যাদি।

তবে ল্যারিসন জানান, দুটি বিষয় এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। প্রথমত, একটি নির্দিষ্ট জায়গার তাপমাত্রা জেব্রাদের সাথে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সেই এলাকায় শীতকালের গড় তাপমাত্রা কত। এই দুটি তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করে তারা গবেষণা চালাতে থাকেন যে ওই এলাকার জেব্রাদের ডোরাকাটা দাগ কেমন হয়।

কিন্তু কেন তাপমাত্রা জেব্রাদের গায়ের ডোরাকাটা দাগের উপর প্রভাব ফেলবে? এ প্রশ্নের উত্তরে ল্যারিসন দুইটি বিষয়ের কথা বলেন। প্রথমত, যখন বাতাস জেব্রার গায়ে এসে ধাক্কা খায় তখন জেব্রার গায়ের কালো অংশে বাতাসের শক্তি এবং গতি বেশি হয়।

সাদা অংশে এটা হয় তুলনামূলক কম। এর কারণ হচ্ছে কালো রং সাদার চেয়ে বেশি তাপ গ্রহণ করে। এই বিপরীতমুখী বায়ু জেব্রার গায়ে ঘূর্ণির সৃষ্টি করে এবং দেহের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে যা কিনা জেব্রার ডোরাকাটা দাগের উপর প্রভাব ফেলে।

উদাহরণস্বরূপ ল্যারিসন বলেন, দাগবিহীন কোন প্রাণীর গায়ের তাপমাত্রার চেয়ে ঘন দাগকাটা জেব্রার গায়ের তাপমাত্রা প্রায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম থাকে।

দ্বিতীয়ত, ডোরাকাটা দাগ যত বেশি থাকবে, জেব্রার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তত বেশি হবে। কেননা হর্সফ্লাইয়িসের মত যেসব কীটপতঙ্গ রোগবহন করে সেসব সাধারণত উষ্ণ ত্বকের উপর বেশি আক্রমণ করে।  

রোগ সংক্রমণের এ ব্যাপারটিকে সমর্থন করে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার জীববিজ্ঞানী টিম ক্যারো বলেন। ‘হর্সফ্লাই যে রোগ বহন করে সেগুলো খুবই ভয়াবহ। ইকুইন ইনফ্লুয়েঞ্জার মত বহু রোগ এদের মাধ্যমে ছড়ায়। আর উষ্ণ এবং ভেজা পরিবেশে এসব রোগ আরও দ্রুত বিস্তার লাভ করে’।

তবে এটা ছাড়াও ক্যারো জেব্রাদের ডোরাকাটা দাগের সাথে সিংহের একটি সম্পর্ক বের করেছেন। তিনি জানান, জেব্রার গায়ের ডোরাকাটা দাগ সিংহকে ধাঁধায় ফেলে দেয়ার কাজ করে।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন