নক্ষত্রবিহীন দুনিয়া

রাতের আকাশে ঝিকমিক করা তারাগুলো দেখতে সত্যিই ভালো লাগে। একেকটা তারা একেক রকম, একেকটার আবার অদ্ভুত সব নাম।

কিন্তু একবার ভেবে দেখো তো, এই তারাগুলো যদি আকাশে না থাকতো, তবে কেমন হতো! ভাবতে নিশ্চয়ই অবাক লাগছে, তারা আবার আকাশে না থাকে নাকি! হ্যাঁ, আমাদের আকাশ তারাবিহীন কল্পনা করতে আমাদের একটু কষ্ট হয়, কারণ আমরা তারাভর্তি আকাশ দেখেই অভ্যস্ত।

সব গ্যালাক্সিই আমাদের মতো তারা দিয়ে পূর্ণ নয়, জ্যোতির্বিদরা সম্প্রতি আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির আকারেরই বেশ কিছু প্রায় নক্ষত্রহীন গ্যালাক্সি খুঁজে পেয়েছেন। এদের সৃষ্টি এখনও রহস্য এবং এদের খুঁজে পাওয়ার মধ্য দিয়ে গ্যালাক্সি সৃষ্টির আরও কিছু ধারণা পাওয়া গেলো যা পূর্বে জানা যায়নি।

 

ইয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জ্যোতির্বিদ পিটার ভ্যান ডকাম ও তাঁর সহকর্মীরা মিলে ৪৭টি গ্যালাক্সির ওপর গবেষণা চালিয়েছেন যেগুলো অনেক আগেই নক্ষত্র সৃষ্টি বন্ধ করে দিয়েছে। হাবল টেলিস্কোপে গ্যালাক্সিগুলো প্রায় অদৃশ্য, কিন্তু স্বল্প পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রতিটি গ্যালাক্সিতে অবস্থিত নক্ষত্রের পরিমাণ আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালিক্সির নক্ষত্রসমূহের ০.১ শতাংশ। ওইসব গ্যালাক্সি থেকে রাতের আকাশে বড়জোর গুটিকয়েক তারার দেখা মিলতে পারে।

বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুসারে, বিশাল পরিমাণের গ্যাস একত্রীভূত হয়ে একটি গ্যালাক্সি তৈরি করে। কিন্তু নব্য আবিষ্কৃত এই গ্যালাক্সিগুলো তারাবিহীন হওয়ার ফলে এরা প্রায় অদৃশ্য। কিন্তু বিজ্ঞানীরাও থেমে থাকেন নি, তাঁরা আবিস্কার করেছেন এমন এক টেলিস্কোপের, যেটি দূরবর্তী অন্ধকার বস্তুকে উজ্জ্বল করে দেখাতে পারে। এই সাফল্যের ফলে তাঁরা খুঁজে পেলেন প্রায় অদৃশ্য রহস্যময় এই নক্ষত্রবিহীন গ্যালাক্সিগুলো।

নতুন খুঁজে পাওয়া এই গ্যালাক্সিগুলো নিয়ে সবার মধ্যে আগ্রহের শেষ নেই। প্রতিটি গ্যালাক্সি সৃষ্টির সময় গুটিকতক গ্রহ-নক্ষত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করে।

 

 

এই গ্যালাক্সিগুলো আমাদের থেকে ১১ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত, অর্থাৎ সেখান থেকে আলো এখানে এসে পৌঁছতে ১১ বিলিয়ন বছর সময় নেবে। ব্যাপারটা হয়তো তোমাদের অনেকের কাছে পরিস্কার না। এটা নিশ্চয়ই তোমরা সবাই জানো যে কোন বস্তু হতে যখন আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে এসে ধরা দেয়, তখনই আমরা সেই বস্তু দেখতে পাই।

আলোর বেগ খুব বেশী হওয়ার কারণে কোন ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই আমরা তা দেখতে পাই। কিন্তু বস্তুটি যদি খুব বেশী দূরে হয়, যেখান থেকে আলোও এসে পৌঁছতে অনেক সময় নেয়, তবে ঘটনাটি অন্য রকম হবে। আলো এক বছরে যতটা দূরত্ব অতিক্রম করে, তাকে এক আলোকবর্ষ (Light year) বলে। সুতরাং, কোন নক্ষত্র যদি ১০০ আলোকবর্ষ দূরে হয়, তবে তা থেকে আলো এখানে এসে পৌঁছতে পৌঁছতে ১০০ আলোকবর্ষ সময় লাগবে। আমরা যখন নক্ষত্রটি দেখছি, তখন হয়ত এটি আসলে ধংস হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা তার ১০০ আলোকবর্ষ পূর্বের অবস্থাই দেখতে পাচ্ছি।

তাই ধারণা করা হচ্ছে যে, আমরা সম্ভবত এই নক্ষত্রবিহীন গ্যালাক্সিগুলোর সৃষ্টিকাল পর্যবেক্ষণ করছি। যেহেতু আমরা এদের ১১ বিলিয়ন আলোকবর্ষ পূর্বের অবস্থা দেখতে পাচ্ছি, তাই এদের এতো কম নক্ষত্র দেখা যাচ্ছে। এই গ্যালাক্সিগুলো নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে আমরা মহাকাশ গবেষনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটন করতে সক্ষম হবো। গ্যালাক্সিগুলোর সৃষ্টি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে যে কৌতূহল ছিল, তার কিছুটা হয়তো এবার মিটবে।

 

 

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন