নামে কার বা গাড়ি হলেও ক্যাবল কার আসলে কোন গাড়ি নয়। এর নেই কোন চাকা অথবা ইঞ্জিন। এটি এমন একটি বাহন যেটি ক্যাবল বা তারের মাধ্যমে ঝুলে থাকে এবং সেই তার ঘূর্ণনের দ্বারা এই ঝুলন্ত গাড়ি চলতে থাকে।
সাধারণত দুটি পর্বত, কোন উপত্যকা, খাড়া ঢাল বা জলাশয় অতিক্রম করার জন্য ক্যাবল কারের দরকার হয়ে থাকে। পাহাড়ি অঞ্চলে বা দুর্গম জায়গায় রাস্তাঘাট নির্মাণ করা খুব দুরূহ। অনেক সময় সেটা পরিবেশের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই এসব জায়গায় ক্যাবল কারের উপরই নির্ভর করা হয়ে থাকে। অনেক সময় কয়লা, পাথর ইত্যাদি ভারী পণ্য পরিবহনের কাজেও ক্যাবল লাইন ব্যবহৃত হয়।
সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, ইটালি, ব্রাজিল, চীন, ইরিত্রিয়াসহ অনেক দেশে ক্যাবল কার দিয়ে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যাতায়াত করা হয়। তবে শুধু ঝুলন্ত ক্যাবল কারই নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ক্যাবল রেলওয়ে রয়েছে। একে ট্রামলাইনও বলা হয়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে একসাথে অনেক মানুষ বহন করার জন্য সাধারণত সমতলেই এরকম ক্যাবল রেলওয়ে দেখা যায়। পৃথিবীর প্রায় সব বড় বড় শহরেই এরকম ট্রামলাইন দেখা যায়।
এছাড়াও নাতিদীর্ঘ জলপথ পার হবার জন্য ক্যাবল ফেরির ব্যবহার দেখা যায়। নদী, হ্রদ বা কোন জলাশয় পার হবার জন্য দুইপ্রান্তে লোহার তার সংযুক্ত করে তার ঘূর্ণনের মাধ্যমে ফেরি পার করা হয়ে থাকে। নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফিনল্যান্ড, চেক রিপাবলিকসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এরকম ক্যাবল ফেরির ব্যবহার দেখা যায়।
তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মূলত পর্যটনের উদ্দেশ্যেই ক্যাবল কার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে ক্যাবল কারে চড়ে নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
বাংলাদেশেও ভ্রমণপিপাসুদের জন্য চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াতে স্থাপন করা হয়েছে ২ কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবল কার। পাহাড়ে ঘেরা কৃত্রিম লেক আর পাখিদের অভয়াশ্রম দেখা যাবে এই ক্যাবল কারে চড়ে।
বর্তমানে পৃথিবীর দীর্ঘতম ক্যাবলওয়ে হচ্ছে সুইডেনে অবস্থিত ফোর্সবি-কোপিং লাইমস্টোন ক্যাবলওয়ে। এর দৈর্ঘ্য ৪২ কিলোমিটার। তবে এযাবতকালের সবচেয়ে দীর্ঘ ক্যাবলওয়ে ছিল সুইডেনের ক্রিস্টিনবার্গ-বলিডেন রোপওয়ে। এটি আগে ৯২ কিলোমিটার লম্বা থাকলেও বর্তমানে শুধু এর ১৩ কিলোমিটার ব্যবহার করা হয়।