অঘটন-ঘটন পটিয়সী হলিউডে সম্ভব যেকোনো কিছুই। কিন্তু তারপরেও মাঝে মাঝে হলিউড এমন কিছু চোখধাঁধানো চলচ্চিত্র উপহার দেয় যা দেখে অবাক না হয়ে উপায় নেই। বলিউডের ক্লাসিক অভিনেতা ইরফান খান অভিনিত ২০১২ সালে নির্মিত হয় অস্কারজয়ী বিখ্যাত চলচ্চিত্র “লাইফ অফ পাই”। এখানে কানাডা অভিমুখী এক জাহাজে চিড়িয়াখানার কিছু প্রাণীসহ যাত্রা করে এক কিশোর ও তার পরিবার। হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে জাহাজ ডুবে যায় এবং পাই (সুরাজ শর্মা) নামের কিশোর ছাড়া আর সবার সলিল সমাধি ঘটে। পাইয়ের সাথে নৌকায় আশ্রয় নেয় ভয়ানক এক রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এভাবে কাহিনী এগিয়ে যেতে থাকে, কিন্তু এই চলচ্চিত্রের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল এর সমুদ্রের দৃশ্যাবলী আর নৌকায় পাইয়ের সাথে বাঘের বসবাস।
এই চলচ্চিত্রের বেশীরভাগ দৃশ্যই সমুদ্রের, কিন্তু মজার ব্যাপার হল এর প্রায় পুরোটাই কৃত্রিমভাবে তৈরি করা। সঠিকভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে কতটুকু অবিশ্বাস্য কাজ করা সম্ভব, এই চলচ্চিত্রই তার প্রমাণ। এর শুটিংয়ের জন্য তৈরি করা হয় প্রমাণ আকারের একটি Wave Pool। Wave Pool হল এক ধরণের সুইমিং পুল, কিন্তু এতে সমুদ্রের ঢেউয়ের মত পানিতে ঢেউ তোলার ব্যবস্থা থাকে। লাইফ অফ পাই চলচ্চিত্র শুটিংয়ের জন্য তাইওয়ানের বিমানবন্দরের এক রানওয়েতে এই বিশালাকারের Pool তৈরি করা হয়। এটি ছিল ২৫০ ফিট লম্বা, ১০০ ফিট চওড়া এবং ৯ ফিট গভীর, এতে ১.৭ মিলিয়ন গ্যালন পানি ধরতো। সমুদ্রের সঠিক আমেজ আনতে এই Wave Pool-এ প্রায় ২০০ ফিট উঁচু উঁচু কৃত্রিম ঢেউ সৃষ্টি করা হয়।
মজার ব্যাপার হল এই চলচ্চিত্রের কিশোর বয়সী পাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করা সুরাজ শর্মা সাঁতারই জানতো না। তারপরেও তাকে এই বিশাল পুলের মাঝখানে একটি নৌকায় ভেসে অভিনয় করতে হয়। শুটিংয়ের সময় নৌকা যখন পুলের মাঝখানে থাকতো, তখন প্রায়ই শর্মার সাথে শুটিং ক্রুদের কোন যোগাযোগ থাকতো না, তখন Air Horn বাজিয়ে তাকে সংকেত দেওয়া হত। একটি সংকেত মানে “Cut”, আর দুটি সংকেত মানে “Go Again”। শুটিং শেষ করার পর ভিজুয়াল ইফেক্ট দলের দায়িত্ব ছিল পুলের দৃশ্যকে সমুদ্রের দৃশ্যে পরিণত করা, যা মোটেই সহজ ছিল না। এ কাজে CGI-এর পাশাপাশি অ্যানিমেশনের সাহায্য নেয়া হয়। চলচ্চিত্রের প্রাণীগুলোর মধ্যে একটি হায়েনা ছাড়া কোনটিই আসল প্রাণী ছিল না, বরং এদের অ্যানিমেশনের সাহায্যে যুক্ত করা হয়েছে। এমনকি পাইয়ের সাথী বাঘটিও আসল বাঘ নয়, অ্যানিমেশন মাত্র।
এসব জানার পড়ে হয়তো ভাবনা আসতে পারে যে তাহলে তো এই চলচ্চিত্র ধারণ যতটা জটিল মনে হত ততটা নয়। কিন্তু আসলে যতটা মনে হয় তার চেয়েও অনেক জটিল ছিল এর পুরো কাজ। ২৫০ ফিট লম্বা Wave Pool-টিই বানাতে সময় লেগেছিল প্রায় ৪ মাস। চলচ্চিত্রে আসল প্রাণী ব্যবহার করলেও হয়তো ব্যাপারটা এতো কষ্টকর হতো না যতটা কষ্ট পোহাতে হয়েছে আনিমেশনের সাহায্যে এদের তৈরি করতে। মোটকথা, অস্কারজয়ী এই চলচ্চিত্রে আধুনিক প্রযুক্তিকে আরেকধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যা হয়তো ভবিষ্যতে আরও কাজে আসবে।